পানি পান করার নিয়ম ও দোয়া-পানি পানের উপকারিতা
ঘুম থেকে জেগে উঠেই পানি পান না করাই ভালো। তবে অনেকে তৃষ্ণার্ত ধরে রাখতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে উচিত নাসিকা বন্ধ করে পানি পান করা এবং এক ঢোক করে গলধকরন করা। তবে সতর্ক থাকা ভালো পানি পান করার পরেও কিছু সময় নাসিকার দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে রাখা ভালো।
এখন আমরা জানবো যে সকল সময় পানি পান থেকে বিরত থাকা উত্তম। নিচে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পানি পান করার অনুপযুক্ত সময়
- প্রখর রৌদ্রের মধ্যে হতে এসে একটু বিলম্ব না করে পানি পান না করা
- পায়খানা বা প্রস্রাবখানা হতে এসেই পানি পান না করা
- খাওয়ার সময় বা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পানি পান না করে, খানা শেষে একবারে পানি পান করা ভালো
- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করা উচিত না । এটা অভদ্রতা ও বেয়াদবির লক্ষণ।
- গলায় বেঁধে যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে
- পানি কখনো একটা টানে গলধকরণ করা উচিত না।
পানি শরীরের যেসব উপকার করে থাকে
পানি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গরমের এই সময় শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করতে হবে । শরীরে ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি এর অভাবে পূরণ করে যেসব খাবার তা খেতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগজনিত ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে বেশ কয়েকটি খাবার ও পানীয়।
পানি যেভাবে শরীরকে সুস্থ রাখে
অসুস্থ হলে বা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সময় তাদের হাইড্রেটেড রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। পানি আমাদের শরীর থেকে প্রাকৃতিকভাবে অসুস্থ জনিত টক্সিন এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে। পানি শরীরের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন বহন করে। শরীরের সঠিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করা যায়। পানি পানের সঙ্গে লেবু বা পুদিনা পাতা দিতে পারেন।
পুদিনা ও পানি অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত। পুদিনা ফ্রি রেডিকেল ক্রিয়াকলাপ্রধ করতে সহায়তা করে। এটি শরীরের ডিটক্স করতে সহায়তা করে ও ত্বকের জন্য ভালো।
লেবু পানি
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ফোলেট ও পটাশিয়াম যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় দিনের শুরুতে একগ্লাস লেবুর রস মেশানো হালকা গরম পানি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
প্রোটিনের ঠাসা
১০০ গ্রাম ছাতুতে বিশ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। যা পেশি মজবুত করে ও অনেকক্ষণ পেট ভরে থাকে, ফলে ওজন ও ওবেসিটি কমে।
শরীর ঠান্ডা রাখে এই শরবত। ক্লান্ত ও নিস্তেজ হওয়া শরীরকে স্বতঃস্ফূর্ততা দেয় ছাতুর। ছাতুর শরবত এনার্জি বাড়ায় । কার্ভের সাহায্যে ও মিনারের শরীর ঠান্ডা রাখে প্রাকৃতিক উপায়ে।
সহজে হজম দেয় ছাতুর, এর মধ্যে থাকা ফাইবার হজম ক্ষমতা বাড়ায়। অম্বল গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত এই শরবত খেলে হজমের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় এটি খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে থাকা হাই ফাইবার রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ঋতুস্রাবের সময় নারীর জন্য দুর্দান্ত এনার্জি ড্রিংক এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হার মজবুত করে।
আরো পড়ুনঃ হার্ট এ্যাটাক থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানুন।
শরীরে গরম পানির উপকারিতা
শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা, শরীরকে সচল রাখা, ত্বক ও চুলকে ঠিক রাখা, কিডনির যত্ন নেওয়া, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি কাজের জন্য পানি শরীরের অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। সাধারণত আমরা নরমাল পানি বা ঠান্ডা পানি পান করে থাকি।
তবে গরম পানি পান করা যে, আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করলে আপনি পেতে পারেন অবিশ্বাস্য ফল। গরম পানি হজম ক্ষমতা ও রক্ত চলাচল উন্নত করতে, ওজন হ্রাস করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
গরম পানি হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় হজম অঙ্গগুলিকে আরো ভালোভাবে হাইড্রোটেড করে, যার ফলে বর্জ্য শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয় এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম পানি পান করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
এটি বহু মানুষের একটি সাধারন সমস্যা। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাত্রে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি পান করুন । এটি অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় অন্তরকে সংকুচিত করে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে।
শরীরের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়
গরম পানি পান করলে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয় বলে এটি শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকে সচল রাখতে সাহায্য করে। যা শরীরের বিভিন্ন ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়। মাথা যন্ত্রণা, ঘাটে ঘাটে ব্যথা, মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক ঋতু শব্দের খিচুনিতেও আরামদায়ক গরম পানি।
রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে
গরম পানি শরীরের ব্লাড বেসেলকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে । ফলে প্রতিটি নার্ভ সচল থাকে যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
গরম পানি শরীরের অতিরিক্ত জড়াতে সাহায্য করে এবং খিদে কমায় । ফলে ক্যালরি ইনটেক কম হয় যা দ্রুত ওজন জড়াতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবু বা মধু মিশ্রিত এক গ্লাস গরম পানি পান করুন।
অনিয়মিত ফ্রিউট ও ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়
মহিলাদের ক্ষেত্রে গরম পানি পান করার একটি বড় সুবিধা হল, এটি অনিয়মিত ঋতুস্রাব ঠিক করতে এবং ঋতুস্রাবের ব্যথা থেকে উপশম দিতে সহায়তা করে। অনেক সময় রক্ত জমাট বেঁধে তা বের হতে না পারলে ব্যথা হতে থাকে । এই সময় গরম পানি পান করলে জমাট বাঁধা রক্ত ভেঙ্গে গিয়ে ব্লাড ফ্লো সঠিকভাবে হয়। যা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
কিভাবে এবং কখন পান করবেন
প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পরে , ঘুমাতে যাওয়ার আগে, এক গ্লাস গরম পানি পান করুন । আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি পান করুন। পানির সঙ্গে মধু বা লেবু মিশিয়ে পানি পান করতে পারেন।
যে তাপমাত্রায় গরম পানি খাবেন। পরিমিত তাপমাত্রা যুক্ত গরম পানি খাবেন। ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বা তার কম তাপমাত্রা যুক্ত পানি পান করুন। সাধারণত উষ্ণ পানি পান করুন। না হলে জিব পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পানি পান করার দোয়া
পানি পান করা শুরুতে এই দোয়া পড়তে হয়ঃ-
”বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
পানি পান করার শেষ হলে এই দোয়া পড়তে হয়ঃ-
”আলহামদুলিল্লাহীল্লাজী জা'আলাহু আ'জবান ফুরাতান ওয়া লাম ইয়াজআ'ললাহু মিলহান উজাজান”
চা, কফি, ঠান্ডা ইত্যাদি পানীয় পান করার সময় এই দোয়া পড়তে হয়ঃ-
”আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফীহী ওয়াজিদনা মিনহু”
জমজমের পানি কিবলামুখী হয়ে পান করার সময় এই দোয়া পড়তে হয়ঃ-
”আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ই'লমান নাফি'আ ওয়া রিজকান ওয়াছি'আ ওয়া সিফাআম মিন কুল্লী দায়ীন”
পানি পান করার সময় মহানবী সাঃ এর সুন্নত সমূহ
ইসলামী শরীয়তে নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত এসব ইবাদাত বন্দেগীর পাশাপাশি সকল ভালো কাজগুলো পালন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দিন দুনিয়ার আরো অনেক কিছু শরীয়ত সম্মত ভাবে পালন করার জন্য রাসূল (সাঃ) ঘোষণা দিয়ে গেছেন।
এ সকল কাজগুলোর মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার ও বিধান রয়েছে। আজকে আমরা শুধুমাত্র পানি খাওয়ার মধ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যে সকল সুন্নত বা তরিকায় আমল করার জন্য বলেছেন সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা পানি পান করতে যাবে তখন প্রথমেই বিসমিল্লাহ পড়ে পানি পান করা শুরু করবে। শুধু পানি পান করার সময় না যেকোনো কাজ বা খাওয়ার সময় শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উত্তম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, কখনো খাবার বা পানি বাম হাতে গ্রহণ করা উচিত না। কেননা শয়তান বাম হাতে খাবার গ্রহণ করে। তাই আমাদের উচিত পানি সহ সকল ধরনের খাদ্য খাওয়ার সময় ডান হাত ব্যবহার করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, তোমরা পানি খাওয়ার সময় বসে পানি পান করো। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে বসে পানি পান করা একটি সর্বজনবৃত নিয়ম। দাঁড়িয়ে পানি পান করার চেয়ে বসে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আরো পড়ুনঃ রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীদের নামের তালিকা ও বিস্তারিত তথ্যবলি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কখনো এক নিঃশ্বাসে পানি পান করবে না বরং তোমরা দুই কিংবা তিন ধাপে বা নিঃশ্বাসে পানি পান করবে। অনেকেই অতিরিক্ত তৃষ্ণার কারণে এক ঢোকে গ্লাসের সম্পূর্ণ পানি খেয়ে ফেলে। যা উচিত নয় এবং এটা রাসুলের সুন্নত বিরোধী কাজ। তাই আমাদের পানি পান করার সময় অল্প অল্প করে দুইবার বা তিনবারে সম্পূর্ণ পানি পান করা উচিত।
তিবরানীতে এসেছে পানি পান কিংবা গ্রহণ করার সময় মুখ থেকে পানি বা গ্লাসের ভিতরে কোন নিঃশ্বাস যাতে না যায় বা ছাড়ানো উচিত নয়। এতে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু নিঃশ্বাসের সাথে গ্লাসে প্রবেশ করতে পারে যা পরবর্তীতে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সর্বশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করার শেষ বা যে কোন খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে আদেশ করে গেছেন। প্রশংসামূলক বাক্য আলহামদুলিল্লাহ বলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার মাধ্যমে সম্পন্ন খাদ্য বা পানীয় শেষ করার জন্য রাসূল বলেছেন।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উপরোক্ত বিষয় সমূহ যা রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম কর্তৃক আমাদের জন্য উপহার বা সুন্নত। তা অবশ্যই আমাদের পালন করা উচিত এবং রাসুলের দেখানো পথ অনুসরণ করে জীবন যাপন করা উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url