নিজের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় এবং ফিটনেস ধরে রাখার কৌশল
আধুনিক এই যুগে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে হলে শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প নেই। নিজেকে চাঙ্গা রাখতে এবং শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম অতীব জরুরী।
সূচিপত্রশারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহের ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে । যার ফলে সহজে রোগ ব্যাধি আক্রমণ করতে পারে না। এছাড়াও কিছু কিছু ব্যায়াম আছে যা মস্তিষ্ক সজাগ করে, মানসিক চাপ কমায়। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও স্থুলতা ইত্যাদি রোগসমূহ প্রতিরোধ করতে শারীরিক ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই।
নিজেকে সুস্থ রাখার উপায়
নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের দরকার লাইফ স্টাইলের প্রতি খুব সতর্ক থাকা। শুধুমাত্র আপনার ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখতে হবে।
সুপ্রিয় পাঠক গণ আমাদের শরীরকে কিভাবে সুস্থ রাখব ,আজকের ব্লগের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কুফল-অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায়।
সঠিক খাবার খাওয়া
ডায়েটে শাকসবজির পরিমাণ বেশি হলে তা ফুসফুস, কোলন, স্তন, জরায়ু, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মূত্রাশয়, অগ্নাশয় ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সঠিক ও পর্যাপ্ত খাবার আপনার ওজন ঠিক রাখবে ও লক্ষ্য স্থির রাখবে।
কোমল পানীয়, চিপস ও ক্যান্ডির মত প্রক্রিয়াজাত খাবার আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন। এগুলো শরীরে পুষ্টি যোগায় না বরং শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরি বহন করে। প্রতিদিন অন্তত ৫ ধরনের শাক সবজি খাদ্য তালিকায় রাখুন। সেদ্ধ অথবা ভাজি বা সুপ করে খেতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই প্রয়োজন। পানি হজমে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশী কে শক্তি যোগায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় আমরা কাজের চাপে পানি খাওয়ার কথা ভুলে যাই। তাই সব সময় যেখানে কাজ করব, তার কাছেই পানের বোতল রাখুন। এতে পানি পানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন। এছাড়াও ডাবের পানি পান করতে পারেন।
ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া
নিয়মিত না পারলেও প্রায় সময় আপনাকে ডাক্তারের শরণ্যপূর্ণ হওয়া উচিত। যদিও আপনি নিজেকে সুস্থ মনে করেন কিন্তু আপনি আসলে কি সুস্থ আছেন ? আমাদের শরীরের কিছু কিছু রোগের ধরন বা উপসর্গ প্রাথমিক অবস্থায় বুঝা যায় না। তাই নিজের জন্য সময় করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শরীরের চেকআপ করা উচিত। আপনার শরীরে ক্যান্সার সহ অন্য কোন রোগের ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করুন।
স্থুলতা, ধূমপান, নিয়মিত অ্যালকোহল পান এ সবে যদি আপনার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ক্যান্সারে ঝুঁকি রয়েছে। তাই চিকিৎসা করেন। বিশেষ করে এই সকল রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক দিকে করালে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ সকল জটিল রোগ সময়ের ব্যবধানে বেড়ে যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে দ্রুত আরোগ্য লাভের সুযোগ থাকবে না।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
সকল মানুষের শরীরে গঠন এক নয়। মানুষের বয়স একই হলেও শরীরের আকার, গঠন, আয়তন ও ওজন এক নয়। একজন মানুষের উচ্চতা অনুসারে ওজন হওয়া উচিত প্রতি ইঞ্চিতে এক কেজি অর্থাৎ কোন মানুষের উচ্চতা যদি ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি হয় তাহলে তার ওজন হওয়া উচিত ৬৫ কেজি। যদি এর কম হয় তাহলে সমস্যা আবার এর বেশি হলেও সমস্যা।
আপনার শরীরের ওজন ঠিক আছে কিনা তা জানার সহজ উপায় হল বডি মাস ইনডেক্স (Body Mass Index) 18.5 এবং 22.9 রেঞ্জের মধ্যে বি এম আই হলো আদর্শ। এসবের পরে যদি দেখতে পান আপনার ওজন অতিরিক্ত, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ওজন কমাতে হবে। ওজন কমানোর জন্য আপনার উচিত কোন একজন দক্ষ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া অথবা ভালো মানের একজন ডাক্তারের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করা।
লক্ষ্য তৈরি করুন
সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলা একদিনের কাজ নয়। তাই প্রথমে লক্ষ্য তৈরি করুন এবং সেই লক্ষ্যে স্থির থাকুন। অপ্রয়োজনীয় অভ্যাস পরিহার করুন এবং এটিকে কিভাবে ইতিবাচক অভ্যাসে পরিণত করা যায় সেই সেই লক্ষ্য অর্জন করুন। কোমল পানিয় পান করার পরিবর্তে বেছে নিন দুই গ্লাস পানি। ফাস্টফুড খাবার পরিবর্তে সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। এসব ছোট ছোট অভ্যাস গুলি পরিবর্তনের লক্ষ্য একদিন আপনাকে সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেতন করে তুলবে।
এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তনে আপনার পরিবারের সদস্য অথবা বন্ধু-বান্ধবের সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়াও হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও আপনি নিজেকে সচেতন করে তুলতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ফিটনেস অ্যাপস ব্যবহার করে ম্যানেজার সুস্বাস্থ্য তৈরীর লক্ষ্যে কাজ করতে পারেন।
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম
রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস উষ্ণ দুধ আপনাকে রাতে ভাল ঘুমাতে সহায়তা করতে পারে। একটি অভ্যাস তৈরি করতে পারেন তা হল ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগেই খাবার খাবেন না, শোবার ঘর আলোকিত করে রাখবেন না। অন্ধকার ঘর মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে এতে আপনার ভালো ঘুম হবে। অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি অথবা দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
অ্যালকোহল কে না বলুন
অ্যালকোহল শরীরের জন্য কখনোই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। এটি শরীরে টক্সিন এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফুসফুসের গতি বাড়িয়ে দেয় ও লিভার জনিত বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। অ্যালকোহলের আরো অনেক খারাপ দিক রয়েছে যা মানসিক স্বাস্থ্য ,শরীরের ওজন, ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহল পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তামাক জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বাঁচান
তামাক জাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য সেবন অথবা সরাসরি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ধূমপান একেবারে বন্ধ করা ধূমপানকারির জন্য খুবই কঠিন। তবে ব্যক্তি যদি নিজেকে প্রশ্ন করেন যে, ধূমপান কি আমার শরীরের থেকেও প্রিয়? এর উত্তর হবে নিশ্চয়ই না। কেউ চাইলেই আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ধুমপান হল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারের ৫০% ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ঘরে নিরাপদ খাবার রান্না করুন
আজকাল সবাই খুবই কর্মব্যস্ত। ঝটপট তৈরি খাবার গুলো খেতে চেষ্টা করুন। যেগুলো অল্প সময়ে রান্না করা যায়। ছুটির দিনে মেনু ঠিক করে নিলে সপ্তাহের অন্যান্য দিন খাবার নিয়ে বিরম্বনা সৃষ্টি হবে না।
বাইরের খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়
কর্মব্যস্ততার এই যুগে মানুষ এতটাই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ছে যে, ঘরে খাবার তৈরি করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। অনেকেই কষ্ট বেড়াতে বাইরের খাবার গ্রহণ করে থাকেন। এটি করে ফুডপয়জনিং ও অন্যান্য পেটের পিড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বাইরের খাবার সব সময় খেলে নানা ধরনের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শরীরে ফ্যাট, চিনি বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
সেচুুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রেনস ফ্যাট উভয়ই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক । তাই খাদ্য তালিকায় আন্টি ইনফ্লামেটরি ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন। যা কারডিও ভাস্কুলার রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে।
দাঁতের যত্ন নিন
আপনার মুখের স্বাস্থ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দাঁতের সমস্যা হলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। দাঁতের সুস্বাস্থ্য হৃদরোগ নিয়মনীয় স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা অ্যালজাইমার এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর ঝুঁকি কমায়। মুখের মধ্যে কোন অস্বাভাবিক চিহ্ন আলসার বা ক্ষত রয়েছে কিনা তা দেখুন। এজন্য ডেন্টিস্ট বা সাধারণ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। যারা ধূমপান করেন, তারা নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করা এবং তামাক জাতীয় পণ্য বর্জন করুন।
আরো পড়ুনঃ ব্যাকপেইন থেকে মুক্তির উপায়-ব্যাকপেইন হলে করনীয়
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সাথে মেলামেশা করুন
আপনি যদি দেশকে কাজ করেন তাহলে একটু সতর্ক হোন। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা কাজ করার ফলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে পেশী গুলিকে নড়াচাড়া করতে পারেন, মাঝেমধ্যে বেরোতি নিন এবং চলাফেরা করুন। অফিসের কাজের পর জিম করতে পারেন। বাচ্চাদের সাথে মাঝে মধ্যে পার্কে বেড়াতে যান। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করুন। নিজের অভ্যাসগুলি পরিবর্তনে অন্যের সঙ্গে নিজের লাইফ স্টাইল নিয়ে আলোচনা করুন । সেই সাথে নিজের অনিয়মগুলির পরিবর্তন আনুন।
ফিটনেস ধরে রাখার কৌশল সমূহ
শরীরকে সবসময় নাড়াচাড়া বা সচল রাখার চেষ্টা করুন এক জায়গায় বসে থাকা উচিত নয় কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী এ সময় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন
- যদি আপনি বেশি ব্যস্ত থাকেন এবং হাঁটাচলা করার সময় না পান, তাহলে অন্তত প্রতিদিন সকালে 20 মিনিট মর্নিং ওয়ার্ক করুন।
- শপিং সেন্টার, হাসপাতাল কিংবা ফ্ল্যাটের উপর তলায় উঠার সময় লিফট ব্যবহারে অভ্যস্ত না হয়ে হেটে উঠার অভ্যাস করুন।
- হাটার আরেকটি রহস্য আছে সেটি হচ্ছে, আপনি যখন ফোনে কথা বলবেন তখন অবশ্যই হেঁটে হেঁটে কথা বলার অভ্যাস করুন।
- আপনি যদি চা খাওয়ার অভ্যাস করেন, তাহলে কমপক্ষে প্রতিদিন দুই কাপ গ্রিন টি খাবার অভ্যাস করতে হবে।
- নিজের ব্যক্তিগত কাজগুলো অন্যের উপর চাপিয়ে না দিয়ে নিজে করার চেষ্টা করুন। যেমন কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
- খাবার সময় দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। ভালোভাবে ধীরস্থিরভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমিত খাবার অভ্যাস করুন। চিনি খাওয়া অভ্যাস একেবারে বাদ দিন।
- প্রতিবেলা খাবারের সাথে সালাদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url