রোগ প্রতিরোধ বাড়ানের উপায়-রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর খাবার তালিকা
বর্তমানে বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের শারীরিক সুস্থতা সবচেয়ে জরুরী। সুস্থ থাকতে চাইলে প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধ মূলক খাবার।
বিভিন্ন ধরনের রোগ ও ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য রোগ প্রতিরোধক মূলক খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আজকে আমরা সেইসব খাবারগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
আরো পড়ুনঃ ধুমপান ছাড়ার কিছু কৌশল জানুন-ধুমপান থেকে মুক্তি পেতে করণীয়।
যেসব খাবারে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
তরল খাবার
যেকোনো তরল ও কুসুম গরম খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । তরল খাবার গ্রহণের ফলে দেহে ফ্লুইডের ঘাটতি পূরণ হয়। এবং দেহে শক্তি বৃদ্ধি পায়। তরল জাতীয় খাবার হল স্যুপ, ক্লিয়ার স্টক, ফলের রস বা শরবত, ডিটোক্স জুস, যেকোনো চা ইত্যাদি।
মিক্সড ভেজিটেবল স্যুপ
মিক্সড ভেজিটেবল সূপ্যে সমস্ত সবজি বিশেষ করে গাজর, পেপে, বরবটি, ফুলকপি ইত্যাদি থাকার কারণে এটি তরল থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে ভিটামিন মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা শরীরে এনার্জি দেওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।
রসুন
রসুন এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । রসুন হৃদপিণ্ডকে সুস্থ ও সতেজ রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
গ্রিন টি
গ্রিন টি তে ক্যাটেসিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা দেহের জন্য উপকারী এবং অন্যান্য চায়ের তুলনায় গ্রিন টিতে ক্যাটেসিনের পরিমাণ বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
আদা চা
আদা চা মসলার মধ্যে উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি করনাকারীরিক সময়ে অনেক উপকারী
মৌসুমী ফল
যেকোনো মৌসুমী ফল দেহের জন্য উপকারী। যেমন এ সময়ে আম, জাম, কাঁঠাল,কামরাঙ্গা ইত্যাদি। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের মধ্যে যাদের ব্লাড সুগার বেশি তাদের মিষ্টি ফল এড়িয়ে চলতে হবে।
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে ক্লোরোফিল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এতে ভিটামিন ও মিনারেলস আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বরবটি, সীম, বেগুন, ধনেপাতা, সবুজ শাক, পুঁইশাক, পালং শাক ইত্যাদি।
রঙিন শাকসবজি
রঙিন শাকসবজিতে বিশেষ করে লাল শাকসবজিতে আছে বিটা ক্যারোটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ভাইরাস প্রতিরোধ করে। লাল শাক, গাজর, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদিতে ভিটামিন এ আছে, যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আহারে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তিন বেলা শাকসবজি রাখবেন। এতে করে দেহ সুস্থ থাকার পাশাপাশি যে কোন রোগের মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে । তবে যারা সবজি খেতে পছন্দ করেন না খিচুড়ি সবজি পরোটা খাবেন।
প্রোটিন জাতীয় খাবার
WHO মানুষকে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে বলেছে। প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি বিদ্যমান।
শসা
শসাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, ডি ও ই, যা শরীর সুস্থ রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। ক্যান্সার প্রতিরোধে শসা খুবই উপকারী। এছাড়াও ভাইরাস প্রতিরোধে শসা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
কালো গোল মরিচ
কালো গোল মরিচ এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা যেকোনো ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। স্যুাপ মাংসের তরকারি বা বিভিন্ন রান্নায় কালো গোল মরিচের গুড়া ব্যবহার করা হয়।
টমেটো
টমেটোর মধ্যে গ্লাইকোপিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা হৃদপিণ্ড ভালো রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফুল-- এট ও ভিটামিন কে আছে, যা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। টমেটো সালাদ কিংবা টমেটো রান্না করে খেতে পারেন। তবে টমেটো রান্না করলে ভিটামিন সি তাপের কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
প্রোটিন জাতীয় খাবার
প্রোটিনের পরিমাণ সব সময় একটু বাড়িয়ে খেতে হয়। প্রোটিন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস ইত্যাদি।
মাশরুম
মাশরুমে প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। মাশরুমের স্যুাপ, গার্লিক মাশরুম শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
হলুদ
হলুদ রান্নায় যেমন স্বাদ বাড়ায়, তেমনি হলুদে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। হলুদ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে। লিভার ভালো রাখে। এমনকি জ্বর হলে রোগী যদি দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে পান করে তাহলে এটি এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
মধু
মধুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলস বিশেষ করে জিংক আছে, যা মুখের রুচি বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যাদের সর্দি-কাশি,ঠান্ডা, জ্বর খুশ খুশে গলা ব্যথা টনসিল আছে তাদের জন্য উপকারী।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ কে আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও সালাদ হিসেবেও খেয়ে থাকি। পেঁয়াজের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও এটি হৃদপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারী।
ওমেগা তিন ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড
ওমেগা ৩ ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। যেমন সামুদ্রিক মাছ, কাঠ বাদাম, ডিম, অলিভ অয়েল, মাছের তেল ইত্যাদিতে ওমেগা ৩ ওমেগা ছয় ফ্যাটি অ্যাসিড আছে।
ভিটামিন কে
সবুজ শাকসবজি, টমেটো, শসা, ফুলকপি ধনেপাতা, ব্রকলি, পাতাকপি, পনির ইত্যাদিতে ভিটামিন কে আছে। এই খাবারগুলো খেলে ভিটামিন কে এর অভাব পূরণ হবে।
টক জাতীয় ফল
টক জাতীয় ফলের মধ্যে এসকরবিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন আমলকিতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ ১০০%,। এবং লেবু, টমেটো, শসা, পেয়ারা ,কামরাঙ্গা কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদিতে ভিটামিন সি আছে।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার হল দুধ, পনির, দই, মাখন, সামুদ্রিক মাছ, কাঠ বাদাম, পালং শাক, ডিম ইত্যাদি।
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি সাধন হয়। এমন বেশ কিছু খাবার আছে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং এসময় সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-
- কার্বনেটের ফেভারেজ
- চিনি জাতীয় খাবার
- অতিরিক্ত লবণ
- তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার
- দুধ চা
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url