মেথির গুনাগুন -মেথি খাওয়ার নিয়ম-মেথির অপকারিতা

মানব শরীরের জন্য মেথি একটি উপকারী উপাদান। মেথি মসলা হিসেবে অর্থাৎ পাঁচফোড়নের একটি উপাদান হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়। মেথি বীজে রয়েছে নানা উপকারী উপাদান যা শরীরে পক্ষে অনেক উপকারী। শতাব্দীর পর শতাব্দি ধরে কবিরাজি চিকিৎসায় ও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথিকে মসলা খাবার পত্র এই তিনটি বলা যায়। এর পাতা শাক হিসেবেও জনপ্রিয়তা রয়েছে। গ্রামের মানুষের এসব খুবই প্রিয়।

মেথির গুনাগুন -মেথি খাওয়ার নিয়ম-মেথির অপকারিতা

মেথি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, এটি ত্বক ও চুলের যত্নেও খুবই কার্যকরী এক উপাদান। এছাড়াও মেথিতে আছে ভিটামিন এ, বি৬, সি ও কে এর মত অনেক পুষ্টির উৎস। মেথিতে রয়েছে ফলিক এসিড , রিবোফ্লাভিন কপার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ সহ অসংখ্য উপকারী উপাদান।

আরো পড়ুনঃ মেছতা দূরের উপায়সমূহ।

মেথির গুনাগুন

আমাদের প্রতিদিন কিছু না কিছু সমস্যায় পড়তেই হয়। যার সমাধান পেতে প্রতিনিয়ত মরিয়া হয়ে উঠতে হচ্ছে। তবে সে সমস্যাগুলোর সমাধানও আমাদের হাতের কাছে। যেটা না জানার কারণে সমস্যার সহজ সমাধান আমরা খুঁজে পাই না। যদি রক্তে চিনি বেড়ে গিয়ে থাকে মানে ডায়াবেটিসের জন্য মিষ্টি বন্ধ, দিনদিন বুড়িয়ে যাওয়া হয়। তাহলে এর চমৎকার একটি সমাধান হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একগ্লাস মেথির পানি। এটি খেলে শরীরে ফিরবে শক্তি। হার্টও থাকবে ভালো।

একাধিক গবেষণা দেখা গেছে যে, প্রতিদিন মেথি খেতে পারলে হারিয়ে যাওয়া তারুণ্য ফিরে পাবে এবং মেথির মধ্যে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্র কমানোর শক্তি । মেথির মধ্যে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যেমন ৩৫.৫ কেলোরি,  ৬.৪ গ্রাম প্রোটিন , ০.৭ গ্রাম ফ্যাট,  ২.৭ গ্রাম ফাইবার এবং ৩.৭  মিলিগ্রাম আয়রন।চলুন মেথির কিছু আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

জ্বরের প্রকোপ কমাতে মেথি

অনেক সময় ঋতু পরিবর্তনের জন্য জ্বর হয়ে থাকে। জ্বরের প্রকোপ কমাতে এক গ্লাস মেথি বীজের পানি পান করুন। এতে অনেক উপকার পাবেন। মেথিতে রয়েছে বেশ কিছু উপকারী উপাদান যা দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত জ্বরের প্রকোপ কমাতে সহায়তা করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে

মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ভাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি করে হজমে সহায়তা করে থাকে।

দেহের ওজন কমাতে

ওজন কমাতে মেথি এক জাদুকরী উপাদান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পাবে। এই পানি পান করলে শরীরে দিন দিন ফাইবার এর মাত্রা বাড়তে থাকে। খিদে কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের অভ্যাস দূর হয়। এতে করে শরীরের ওজন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে।

শরীরে ক্ষতিকারক কোলেস্টরেল কমাতে

শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে মেথি সাহায্য করে। মেথিতে থাকে সাপোনিনস্ নামক উপাদান, যা শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তে লবণের পরিমাণ কমিয়ে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

যাদের খুব কম বয়স থেকে রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বেশি, তারা নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খেলে তাদের রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এটি তাদের শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয়। কারণ বিধিতে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড।

ত্বক উজ্জ্বল রাখতে

রূপচর্চায় রয়েছে মেথির এক আশ্চর্য ক্ষমতায। চেহারায় বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী নানা ক্ষতিকারক উপাদান দূর করতে মেথি ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেও মেথির ভূমিকা অপরিসীম। 

চুল পড়া কমাতে

প্রাচীন কাল থেকেই চুল পড়া রোধে মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে খাওয়া ছাড়াও এ মেথি ভিজিয়ে রেখে বেটে মাথায় দেওয়া যেতে পারে। মেথি বেটে পেস্ট করে নারিকেল তেলের মধ্যে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ঘন্টাখানেক রেখে গোসল করে ফেললে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।

চুলের খুশকি দূর করতে

মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে চাইলে মেথি ব্যবহার করা যায়। অনেকের মাথার তালুতে প্রচুর পরিমাণে খুশকি হয়ে থাকে, যা মাথার শুষ্ক অমৃত ত্বকের কারণে হয়ে থাকে। এই সমস্যা দূর করতে হল মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে পেস্ট করে চুলের গোড়ায় লাগালে চুলের খুশকি দূর হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে দ্রুত চুল খুশকি ভুক্ত হবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে

ক্যান্সারকে দূরে রাখতও মেথির গুনাগুন অপরিসীম । রক্তে যদি টক্সিক উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়। তাহলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশংকা তৈরি হয়। এই ক্যান্সারকে দূরে রাখতে মেথির ব্যবহার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ । মেথি একটি ভেষজ উপাদান। এতে থাকা উপাদান রক্তে ভেসে বেড়ানো টক্সিক উপাদান গুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত মেথি শাক অথবা মেথি ভিজানো পানি খাওয়া উচিত।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে মেথি

একটি গবেষণা তথ্য অনুসারে প্রায় ৪২ শতাংশ এশিয়ান পুরুষ যৌন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন ।মেথি পুরুষদের হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।পাশাপাশি নারীরা ও যৌন সমস্যায় ভুগে থাকেন। নারীরাও এটি সেবন করতে পারেন।

কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে মেথি যথেষ্ট। এটি  খেলে কিডনির মধ্যে কম ক্যালসিফিকেশন তৈরি হয়। এটি দিয়ে তৈরি চা বা ভেজানো পানি পান করলে কিডনি পরিষ্কার থাকে ও মূত্রথলিও সুস্থ থাকে।

মাসিকের ব্যথা কমাতে

মাসিকের সময় অধিকাংশ মেয়েরই তলপেটে ব্যথা হয়। এ ব্যথাটি এক একজনের কাছে একেক মাত্রার ব্যথা । অনেকেই বলেন এটি নাকি ভয়াবহ অনুভূত হয়। মাসিকের প্রথম তিনদিন 1700 থেকে 2700 মিলিগ্রাম মেথির গুড়া ও পরবর্তী দিনগুলোতে 900 মিলিগ্রাম করে দৈনিক তিনবার খেলে মাসিকের ব্যথা উপশম হয়।

মেথির ক্ষতিকারক দিক

মেথির এতসব উপকারের ভিড়ে কিছু অপকারিতা ও রয়েছে যা আমাদের জেনে নেওয়া উচিত।

  • মেথি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান হঠাৎ করে কমে যেতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক তাই এটি ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
  • মেথি গর্ভবতী মায়েরা বেশিদিন খেলে সময়ের আগে বাচ্চার জন্ম হতে পারে। এছাড়াও এতে গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে।
  • মেথি তিতাসাদের প্রদাহ তৈরি করে যার ফলে অনেকেরই বমি ভাব বা মাথা ঘোরা এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url