কোষ্ঠকাঠিন্য একটি পেটের সমস্যা জনিত রোগ। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- পেট ভার হয়ে থাকা, মলত্যাগের সমস্যা হওয়া, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকের আরো সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন- রক্তস্বল্পতা ,অবসর বা ক্লান্তি অনুভব করা, অনিদ্রা, চোখে ব্যথা , চোখের নিচে কালো দাগ পড়া, মাথা ঘোরা, কোমর ব্যাথা, অলসতায় নিমগ্ন থাকা এবং কোন বিষয়ে মনোযোগ নষ্ট হওয়া। শুধু তাই নয় ঘা, মেছতা, ক্ষুধামন্দা, মুখে দুর্গন্ধ, পেটে গ্যাস হওয়াও কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষণ। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ০৯ টি লক্ষণ সনাক্ত করেছেন।
চলুন আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য ০৯টি লক্ষণ দেখে নেই।
১. ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন
ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক বৃদ্ধি পায়। এসপিরিন এবং ইবুপ্রফেন জাতীয় ওষুধ যারা বেশি খায়, তাদের বৃদ্ধি পেতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই তাদের উচিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
২. এলার্জি
হাইপোথাইরয়েডিজম অনেক সময় থাইরয়েড গ্রন্থির কারণে শরীরে বিপক্ষমতা কমে যায়। মাঝে মাঝে এই সমস্যার কারণে অনেকের বুকে জ্বালাপোড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়।
এলার্জি অনেক রোগীর রয়েছে। তাদের দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে অনেক সময় মল থেকে সমস্যা করেন। এ সমস্যাটি অনেক সময় ডায়রিয়ার কারণও হয়।
৩. শারীরিক ব্যায়ামের অপারগতা
আমরা শারীরিক ব্যায়ামের প্রতি এবং আমাদের খাদ্যবাস সঠিক মাত্রায় ও সঠিক সময়ে না খাওয়ার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হয়।
৪. ভিটামিনের ঘাটতি
পর্যাপ্ত পরিমানে আমাদের শরীরে ভিটামিন থাকে না। আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন শরীর কে দিতে পারি না এবং আবার অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন প্রবেশ করে। ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় আমাদের শরীরে। যেমন- শরীরে যদি অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও আয়রন প্রবেশ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৫. মল চেপে রাখা
অনেক সময় অনেকে ইচ্ছে বা অনিচ্ছাকৃত কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মল চেপে রাখেন এবং সময়মতো মলত্যাগ করেন না, আর এ অভ্যাস যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৬. বিষন্নতায় ভোগা
যারা বিষন্নতায় বেশি ভোগে থাকেন তাদের শরীর ও মানসিকভাবে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে তাদের পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয় এবং সেখান থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হতে পারে।
৭. ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অনেকের বুক খুব জ্বালাপোড়া করার কারণে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কোন ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়াই এন্টাসিড খেয়ে থাকেন। ফলে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
৮. গর্ভকালীন সময়ে
অনেকের গর্ভধারণের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। গর্ভকালীন সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ খাবেন। কখনোই ফার্মেসি থেকে নিজের ইচ্ছামত ওষুধ কিনে খাবেন না।
৯. পানি কম খাওয়া
যারা পানি কম খায় তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হার বেশি। যখন পেটে অধিক পরিমাণে গ্যাস জমে তখন কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি দেখা দেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে করণীয়
কোষ্ঠকাঠিন্য সবাইকেই কমবেশি ভুগতে হয়। তবে বায়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ বেশি। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় নিয়ে আজকের টিপস।
১. কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে না এমন খাদ্য, পানি গ্রহণ করতে হবে। যেমন- কফি, চা, চকলেট, কলা ও ভাত ইত্যাদি।
২. নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সবজি রাখতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে দশ গ্রাম ফল আর আড়াইশো গ্রাম সবজি খেতে হবে। কলার সবজি কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে। এটি অভ্যন্তরীণ পেশীকে উদ্দীপিত রাখে ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি অন্ত্রের গতিময়কে পিচ্ছিল করার সাথে পরিপাকীয় খাদ্য ভিজিয়ে দেয়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৫. আইসক্রিম, পনির, মাংস, পিজ্জা, প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৬. স্টেজ মুক্ত থাকতে হবে। শরীরের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ রয়েছে তাই মস্তিষ্কের সমস্যা শরীরে দেখা দেয়।
৭. একটি সুষম বা ব্যালেন্স ডায়েট কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বেশ অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে। খাদ্য তালিকায় প্রচুর তাজা ও শুকনো ফল আর পাতাযুক্ত সবুজ সবজি রাখবেন। রুটি জাতীয় খাবার, মধু ইত্যাদি রাখতে হবে।
৮. অধিক পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এটি পরিপাকতন্ত্রকে সাবলীল রাখে।
৯. দই ক্যালসিয়ামে ভরপুর একটি খাবার। সেইসঙ্গে এটি শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যর ফলে আরো একটি সমস্যা দেখা দেয়, সেটি হচ্ছে আলসার ও পেটে ব্যথা, এনাল ফিসার ,ফিস্টুলে ইত্যাদি সমস্যা হয়।
তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ভোগেন তাদের স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
আরো পড়ুন: কিডনিতে পাথর কেন হয়-কিডনি পাত্র থেকে বাঁচার উপায়
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url