আশুরা কি ? আশুরার রোজার ফযিলত- আশুরার ইতিহাস

বিসমিল্লাহির রহমানির

হিজরী ১২ মাসের প্রথম মাস হচ্ছে মহরম মাস। মহরম মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। মহরম মাসের ঘটনাগুলো ইসলামের ইতিহাসে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মহরম মাস অত্যন্ত সম্মানিত একটি মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এই মহরম মাসে।

আশুরা কি ? আশুরার রোজার ফযিলত- আশুরার ইতিহাস

শুধু উম্মতে মোহাম্মদী নয় বরং পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীদের অবিস্মরণীয় ঘটনা সূত্রপাত হয়েছিল এই মহরম মাসে।।

আরো পড়ুনঃ  ফরয গোসল করার নিয়ম-ফরয গোসল না করার শাস্তি

পোস্ট সূচিপত্র

মহরম মাসের ফজিলত

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনার মাসের সংখ্যা ১২। সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা এই বারটি মাস নির্ধারণ করে দেন। মহান আল্লাহ তায়ালা যীনি আসমান, পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির বারটি মাসের মধ্যে চারটি মাস অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। মাস গুলো হচ্ছে জিলকদ, জিলহজ, ও মহরম এবং সর্বশেষ হচ্ছে রজব মাস। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা এ মাস গুলোর সম্মান নষ্ট করো না এবং নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না । সূরা তওবা আয়াত ৩৬

অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত ছিল এই পবিত্র মাসটিকে গিরে। এই পবিত্র মাসটিতে যুদ্ধ বিগ্রহ সম্পন্নভাবে নিষিদ্ধ ছিল, ফলে এ মাসটি অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি তাৎপর্য পূর্ণ হয়। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে মহরম বা মর্যাদা পূর্ণ মাস।

আশুরা কি

মহরম মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে অধিক সম্মানিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই মাসের ১০ তারিখে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আশুরার দিনে সংগঠিত হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ও হৃদয়বিদারক কাহিনী। আশুরার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফিরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ।

পবিত্র আশুরার এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করার জন্য এবং মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার অনুসারীগণের এর উপর অত্যাচার করার জন্য লোহিত সাগরে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যদিও অনেকে মনে করেন ফিরাউন নীল নদীতে ডুবেছিল কিন্ত আসলে ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী এ ধারণা ভুল।

হযরত ইমাম বুখারী তার কিতাবে এভাবে বর্ণনা করেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) মতে, মহানবী (সা:) যখন হিজরত করে মদিনা পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন যে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোযা পালন করছে। তিনি তাদের প্রশ্ন করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা পালন koro কেন ? তারা উত্তর দিলো , এ দিনটি অনেক বড়।

এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফেরাউনকে ও তার বাহিনী কুত্তি সম্প্রদায় কে সাগরের পানিতে ডুবে মেরে ফেলেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতা স্বরুপ হযরত মুসা আঃ রোজা রাখতেন আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের মুখ থেকে এ কথার উত্তর শুনে নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন, তাদের কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতপরঃ তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে রোজা পালন করার নির্দেশ প্রদান করেন ।

উল্লেখিত হাদিস থেকে বুঝা যায়, আশুরা সেই ঐতিহ্যবাহী প্রবাহমান কাল থেকেই চলে আসছে। অনেকে না বুঝে বা ভুল ধারণায়, মনে করে আশুরার ঐতিহ্য বলতে, রাসূল (সা:) এর প্রিয়তম দৈহিত্র জান্নাতের যুবকদের দল প্রতি, হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু এর শাহাদাত। নবী পরিবারের কয়েকজন সম্মানিত সদস্যদের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাস কে বুঝায়। অথচ আশুরার ঐতিহ্য সেই প্রাচীনকাল থেকেই। 

হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা এর মর্মান্তিক শাহাদাত বরণের পূর্বে, অনেক পূর্বেই আশুরার তাৎপর্যপূর্ণ রহস্য রয়েছে। কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির দশম মহররম। অথচ আশুরার রোজা প্রচলন হয় হয়েছিল ইসলামের আবির্ভাবের বহুকাল আগ থেকেই। কিন্তু একথা নিশ্চিতের জন্য, আবহমানকাল থেকে আশুরার সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম জাতির জন্য। প্রতিটি বছর আসলে আমাদের এই দুঃখজনক ঘটনা স্মরণ করে দেয়। 

কিন্তু এই বাস্তব ঘটনাকে আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পেরে আজ আমাদের মধ্যে অনেকে পথভ্রষ্টতা, কুসংস্কআরে নিমোজ্জিত রয়েছে। কারবালার মর্মান্তিক ব্যথা ভরা সেই ঘটনা আমাদের মধ্যে যাদের স্মরণ থাকে তারা কি কখনো চিন্তা করেছি, কি কারণে ? হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু কারবালার ময়দানে অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন ? না আমরা সে সম্পর্কে অবগত নয়। আমরা আসলে ভুল ভাবে আসূরা  পালন করে থাকি। তাই আমার মনে হয় যারা মর্সিয়া পালনের মাধ্যমে কারবালা সেই ঘটনাকে তুলে ধরে তা প্রকৃতপক্ষে ঠিক না।

আরও পড়ুনঃ হৃদরোগ থেকে মুক্তির উপায়-হার্ট অ্যাটাক মুক্ত থাকার উপায।

আশুরার রোজা পালন

পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগেই আসূরা তথা মহরম মাসের রোজা উম্মতি মুহাম্মদের জন্য ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে বিধান রহিত হয়ে যায় এবং মহরমের রোজা নফল রোজায় পরিণত হয়। হযরত জাবেরা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং রোজা রাখার প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করতেন।

কিন্তু যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরা রোজার ব্যাপারে নির্দেশে দিতেন না আবার নিষেধও করতেন না । আর এ বিষয়ে আমাদের কোন খোজ খবর নিতেন না। এ থেকে বুঝা যায়, আশুরার রোজা আমাদের জন্য নফল ইবাদত। 

আসরের রোজা যদিও একটি নফল ইবাদত কিন্তু অন্যান্য নফল রোজার তুলনায় আশুরার রোজার সওয়াব অনেক বেশি। এই হাদিসের আলোকে আশুরার রোজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে আমাদের যে গুরুত্ব প্রদান করতেন অন্য কোন রোজার সম্পর্কে সেরা গুরুত্ব প্রদান করতেন না।

হযরত হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত,  রাসুল্লাহ (সাঃ) চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিতেন না তার মধ্যে একটি আশুরার রোজা। 

কাফের”রা কেন আশুরার দিনে রোযা রাখে ?

হযরত আবু মুসা আশয়ারী হতে বর্ণিত,  আশুরার দিন ইহুদিরা ঈদ পালন করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সেদিন রোজা রাখতে আদেশ করেছিলেন।

হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হতে বর্ণিত, জাহেলিয়াতের যুগে কাফেররা আশুরার দিন রোজা রাখত। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামও সেদিন রোজা রাখতেন কিন্তু যখন রমজানে রোজা ফরজ হয় তখন তাদের রোজা রাখা না রাখার ব্যাপারে স্বাধীনতা প্রদান করা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায় কাফের’রা কেন আশুরার দিন রোজা রাখে ? আশুরার দিন কাফের রা কাবা শরীফে গেলাফ পরিধান করতো। কিন্ত তারা কেন আশুরার দিন কাবা শরীফে গেলাফ পরিধান করাতো ? কিন্ত কেন তারা দিন কে নির্দিষ্ট করল ? এ সম্পর্কে তাবেই হযরত ইকরামা রাঃ বলেন, অন্ধকার যুগে কাফেররা একটি অনেক বড় অপরাধ করে বসে (তাদের দৃষ্টিতে) তাই তাদের বলা হয় আশুরার দিন রোজা রাখো, তাহলে তোমাদের গুনাহ মাফ করা হবে। তখন থেকে কুরাইশ বংশের লোকেরা সেদিন থেকে রোজা রাখা শুরু করে।

হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন মহরমের ১০ তারিখে কাবা শরীফে কাফেরেরা গেলাফ পরিধান করা তো যা বুখারী শরীফে প্রমাণিত।

আশুরার রোজার ফজিলত

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইুহ ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন রোজা নিজে পালন করতেন এবং উম্মতকে রোজা পালন করার জন্য উৎসাহিত করতেন। আশুরার রোজার মধ্যে নিহিত রয়েছে উম্মতের কল্যাণ। আশুরার রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা কয়েকটা হাদিস পর্যালোচনা  করি।

হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত,  রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন -এই রোজায় বিগত বছরের গুনাহ মুছে যায়। তিনি আরো বলেন, রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহরম মাসের রোজা বা আশুরার রোজা।

মুসলিম শরীফের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,  মহানবি (সাঃ) যখন আশুরার দিনের রোজা রাখেন এবং অন্যদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন সাহাবীরা অবাক হয়ে বলেন- ইয়া রাসুল আল্লাহ ইহুদি-নাসেরারা দিনটিকে বড়দিন মনে করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো তাদের সঙ্গে আমাদের সামঞ্জস্য হয়ে যাবে। এ কথা শুনে মহানবী (সাঃ) বললেন ইনশাল্লাহ আমরা এই দশ তারিখের সঙ্গে নয় তারিখও রোজা রাখবো।

আরো পড়ুনঃ নামায মাকরূহ হওয়ার ৫০টি কারন-যেসব কারনে নামায মাকরূহ হয়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url