যা মানব শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে থাকে। রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন, (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩),প্যান্টথেনিক অ্যাসিড ((ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম।
পোস্ট সূচিপত্র
রসুনের উপকারিতা বা গুনাগুন
রোগ প্রতিরোধের ওষুধ
রসুন খাওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা অনেক। রসুনের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল । যা অনেকটা ওষুধের মত কাজ করে। তাই আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে নিয়মিত ওষুধ খেতে পারেন।
শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি
আপনি যদি আপনার শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং রসুনের জন্য শরীরে রোগ জীবাণু বাসা বাধতে পারবে না।
সর্দি কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধে
সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধ রসুন সবচেয়ে কার্যকর একটি ওষুধ। যা সহজে সর্দি কাশি ও ঠান্ডা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত কাঁচা রসুন বা রান্না করা রসুন খেতে পারেন, তবে আপনি সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে পারবেন। ভালো কিছু প্রত্যাশার জন্য সাথে কিছু লবঙ্গ মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলে আরও উপকার বেশি পাবেন। যারা কাঁচা রসুন খেতে পারেন না গন্ধ অনুভব হয়। তারা চায়ের সাথেও খেতে পারেন। এতে যেমন সর্দি কাশি কমবে তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
হৃদ যন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ
হৃদযন্ত্র বা হার্টের সমস্যায় রসুন কাজ করে। রসুনের মধ্যে এলিসিন এন্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান রয়েছে, যা আপনি যদি প্রতিদিন খালি পেটে রসুন খেতে পারেন তাহলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাবে ।ফলে ব্লাড প্রেসার, রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
রক্ত শোধনে রসুন
খালি পেটে রসুন খেলে রক্ত শোধন ক্ষমতা বেড়ে যায় । রক্ত চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনে। অর্থাৎ খালি পেটে কেউ রসুন খেলে তার রক্তের পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে। যার ফলে শরীর হয়ে উঠবে সুস্থ ও স্বাভাবিক।
ওজন কমাতে রসুন
কিছুদিন ধরে নিয়ম করে খালি পেটে রসুন খাওয়ার সাথে সাথে ব্যায়াম করলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে রসুন।
দুর্বল হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে রসুন
যাদের হাড় দুর্বল বা হাড়ের ক্ষমতা বা শক্তি কম তারা নিয়মিত রসুন খেলে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে নারীদের হারের ক্ষমতা দিন দিন কমতে শুরু করে। প্রতিদিন দু গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ভারসাম্য থাকে। যাদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম তারা রসুন খেলে এটি বৃদ্ধি পাবে।
পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে রসুন
পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন একটি কার্যকরী সমাধান। নানাবিধ কারণে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা কমতে শুরু করে। প্রতিদিন যদি দুই কোয়া করে রসুন খাওয়া যায় ,তবে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
চুলের সমস্যা সমাধানে রসুন
চুল ঝরে পড়ে এই কথাটি প্রায় আমরা বলে থাকি। চুলের একাধিক সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা রসুন ব্যবহার করতে পারি। রসুনের পেস্ট মাথার ত্বকে মাখলে অথবা রসুন তেল গরম করে ঠান্ডা হলে তা চুলে মালিশ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়। এছাড়াও এটি মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে ব্যবহার করা যায়।
ত্বকের সমস্যার সমাধানে রসুন
নিয়মিত রসুন খেলে ত্বক ভালো থাকে। ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না। রসুনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকে দাগ থাকলে তা কমে যায়। এছাড়াও ত্বকের দাগ বা খুশ পাচড়া জনিত রোগের জন্য রসুন খুবই উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন
রসুনে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধের এক যাদুকরি উপাদান। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রতিদিন রসুন সেবন করেন তাহলে পেট এবং ফ্লোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। রসুন শরীরের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুন
মানুষের শরীরে এলডিএল বেড়ে যাওয়ার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রতিদিন খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে নিয়মিত রসুন আমাদের উপকারে লাগে।
রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে
রসুন রক্তের সিরামে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীদের কে অলিভ অয়েল এবং রসুনের সংমিশ্রণ গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতে রোগীরা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিস মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে
রসুন মস্তিষ্কের নিউরাল টিস্যুকে উদ্দীপিত করতে পারে। কাচা রসুন খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করে ফলে মস্তিষ্কের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। অবদান রাখে মস্তিষ্কের কার্যকলাপের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে।
অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রসুন
রসুন পাচনতন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে। পাচনতন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্ত্রের অনুজীব গুলো স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখে রসুন।
ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিহত করে রসুন
আমাদের মধ্যে অনেকেই বছরের বেশি সময় ধরে সর্দি কাশি বা এলার্জির কারণে ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ভোগেন। এর ফলে ফুসফুসের সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে। যখন কেউ নিয়মিত রসুন খায় তাহলে এই সংক্রমণের ভয় টা কেটে যায়।
সেক্সে রসুনের উপকারিতা
বর্তমানে যৌন সমস্যা আমাদের সমাজে প্রকট আকার ধারন করেছে। লাজ-লজ্জার ভয়ে অনেকে এগুলো শেয়ার করতে চায় না। কিন্ত এ সমস্যার জন্য আমাদের সমাজে পরকীয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। পারিবারিক কলহ লেগে থাকে। কিন্ত আমরা যদি চাই ঘরোয়া ভাবে আমাদের শারীরিক সমস্যা দূর করে সুন্দর সংসার গঠন করতে পারি। চলুন দেখা নেওয়া যাক রসুন খেলে আমাদের কি কি যৌন সমস্যার সমাধান হবে।
- শারীরিক মিলনে আগ্রহ বাড়াবে।
- সেক্স পাওয়ার বৃদ্ধি পাবে।
- অকালে বীর্যপাত বা দ্রুত বীর্যপাত হ্রাস পাবে।
- শুক্রানূর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
- বীর্য ঘন হবে।
- সহবাসের সময় দীর্ঘস্থায়ী করবে।
- বীর্যে কোন ইনফেকশন থাকলে রসুন তা দূর করে জীবাণুমুক্ত করবে।
যেভাবে খাবেন
প্রতিদিন সকালে দুই বা তিন কোয়া রসুন খাবেন। যাদের যৌন সমস্যা বেশি তারা চাইলে খাটি ঘি- ভেজে মাখন মাখিয়ে সাথে খেতে পারেন। খাওয়া শেষে হালকা গরম পানি বা দুধ খেতে পারেন এতে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
রসুনের অপকারিতা
নিয়মমাফিক কোন কিছু খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় আবার অতিরিক্ত কোন কিছু ই দেহের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। রসুন আমাদের রান্না ঘরে বহুল ব্যবহৃত একটি মসলা। তাই এটি খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। রসুনের ঔষধি গুনাগুনের কারণে অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। রসুনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অনেক সময় উপকারের চেয়ে অপকার বেড়ে যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক রসুনের অপকারিতা সমূহ।
লিভারের ক্ষতি
পরিমাণের অধিক রসুন খেলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। লিভার আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। যেমন- রক্ত পরিশোধন, চর্বি ও প্রোটিন বিপাক এবং শরীর থেকে অ্যামোনিয়া অপসারণের কাজ লিভার করে থাকে। কিন্তু পরিমানে অধিক রসুন খেলে রসুনের মধ্যে বিদ্যমান থাকা এসপিরিন লিভারের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সৃষ্টি
খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । রসুনে রয়েছে সালফার উপাদান যা খালি পেটে খেলে পেটে গ্যাস তৈরি করে এবং অনেক সময় পাতলা পায়খানা ও ডায়েরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বমি ও বুক জ্বালাপোড়া করা
খালি পেটে রসুন খেলে শুধু ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা নয় অনেকের আবার বমি, বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এর প্রতিবেদন হতে জানা যায়, খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া ও বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি
কাচা রসুন খাওয়া অনেকে সহ্য করতে পারে না। আবার অনেকে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। মূলত রসুনের মধ্যে বিদ্যমান থাকা সালফারের কারণে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
রক্তপাতের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়া
অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে শরীরে রক্তপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যারা "ওয়ারফারিন "এসপিরিন ও ব্লাড থিনার এই ধরনের ওষুধ সেবন করেন তারা অতিরিক্ত রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রসুন শরীরের রক্ত পাতলা করে দেয়, ফলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url