জেলীযুক্ত চিংড়ি মাছ চেনার উপায়-ভালো মাছ চেনার উপায়।

মাছের বাজারে গেলে দেখবেন মাছের ডালার উপরে অনেকগুলো এনার্জি লাইট জ্বলে। বিশেষ করে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে এই আলো বা লাইটের পরিমাণ বেশি। কিছুদিন আগে বিকেল বেলায় বাজারে গিয়ে দেখি একটি মাছের ডালার উপরে কয়েকটি এনার্জি লাইটের আলো ছড়িয়ে আছে।

জেলীযুক্ত চিংড়ি মাছ চেনার উপায়-বাজারের মাছ কিনতে সাবধানতা!

দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলাম ডালার উপর এত গুলো লাইট কেন  ? দোকানদার বলে, একটু পরই সন্ধ্যা হয়ে যাবে, তাই আগেই বাতি জ্বালিয়ে রাখছি। তাছাড়া আলো বেশি হলে কাস্টমারের মাছ দেখতে সুবিধা হয়। কিন্ত আমার কাছ রহস্য মনে হয, মাছ দেখে ।  

আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের কারন, লক্ষন ও করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানুন।

মনে হচ্চে মাছের উপর কোন কিছুর প্রলেপ দেওয়া হয়েছে, এতে মাছ দেখতে চকচক করে এবং নরম ও পচা মাছও টাটকা মনে হয় ক্রেতার কাছে। ক্রেতারা সাধারণত চোখের দেখায় মাছ কিনে থাকে। খুব কম সংখ্যাক ক্রেতা মাছ ধরে দেখে কিনে। 

তাই আলোর ঝলকানিটা বেশি দেওয়া হয়।  শুধু এই বাজারে না, দেশের প্রায় প্রত্যাঞ্চলের বাজারেও মাছ বিক্রেতারা এভাবে সাধারণ মানুষদের ধোকা দিয়ে আসছে। তেমনি কয়েকজন ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলা জানা যায়। একজন বলেন, তার গৃহকর্তা কিছুদিন আগে মাছের এক ফেরিওলা থেকে এক কেজি চিংড়ি মাছ কিনে।

মাছগুলো দেখে সন্দেহ হলে, মাছ কেটে দেখেন, মাছের ভিতর জেলি মেশানো এবং এক কেজি মাছে প্রায় ২৫০ গ্রাম জেলি পাওয়া যায়। জেলি ব্যবহার করাতে মাছগুলোকে দেখতে শক্ত ও তাজা মনে হয়েছিল।

যে কারণে মাছে জেলি ব্যবহার করা হয়

মাছের মধ্যে জেলি ব্যবহার করার মূল দুটি কারণ। একটি হচ্ছে মাছ কে তাজা দেখানো ও টাটকা মনে হওয়া এবং অন্যাটি হচ্ছে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। মাছের মধ্যে এই জেলি সিরিজের মাধ্যমে ঢুকানো হয়।

মাছের বরফীকরণ ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় মাছ এমনিতে এখন ভালো থাকে। তাই মাছের মধ্যে আগের মত এখন ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না এবং তা প্রয়োজনে পড়ে না। কিন্তু কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী ফরমালিনের পরিবর্তে মাছের মধ্যে জেলী ব্যবহার করে থাকে।

কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত হয় গলদা চিংড়ি খেয়ে একজন বিচারক সহ কয়েকজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর শহরের বেশ কিছু মাছের আড়ত ও খুচরা বাজারে ব্রাহ্মমান আদালত পরিচালনা করা হয়। ওই সময় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক জেলিসহ প্রায় ৬০ কেজি গলদা চিংড়ি জব্দ করা হয়।

শুধু চিংড়িতে নয় জেলি দেওয়া হয় না, পুটি মাছ, বোয়াল মাছ সহ বেশ কিছু মাছেও জেলী ব্যবহার করা হয়। এতে মাছ ভারী ও পিচ্ছিল ও টাটকা মনে হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, মাছে ব্যবহৃত রাসায়নিক জেলি জীবননাশক ও মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো মানুষের খাদ্যনালী , পরিপাকতন্ত্র এমনকি কিডনিও নষ্ট করতে পারে। এইসব বিষাক্ত রাসায়নিক খেয়ে মানুষ ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারে।

মাছের দাম বেশি রাখলে কিংবা পচা মাছ বিক্রি করতে না পারলে বিক্রেতা হয়তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু ক্ষতিকর পদার্থ মানুষের জীবন ক্ষতি করে দিবে এই চিন্তা ভাবনা ক্রেতাদের বিক্রেতাদের মাথায় আসে। তারপরেও তারা এগুলো ইচ্ছে করে করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ গরমে বাসার তাপমাত্রা কমানোর উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন।

ফরমালিন ও ক্ষতিকর জেলি মেশানোর শাস্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী হাকিম সরোয়ার আলম বলেন, অপরাধের ধরন অনুসারে শাস্তি হয় তবে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরে কারাদণ্ড অথবা ২০ লাখ টাকা জরিমানা। এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে সর্বশেষ শাস্তি হয়েছে এক বছর পর্যন্ত।

জেলিযুক্ত চিংড়ি বা মাছ চিনবেন যেভাবে ?

সচরাচর জেলিযুক্ত মাছ চেনার তেমন কোন উপায় নেই। তবে কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত, খালি চোখে দূর থেকে জেলিযুক্ত মাছ চেনা যায় না। এর জন্য মাছের কাছে যেতে হবে। এর জন্য মাছের মাথা ভেঙ্গে দেখতে হবে সেখানে কোন তরল পদার্থ আছে কিনা।

চিংড়ি মাছ প্রাকৃতিক হয়ে  থাকে তাহলে মাথা ভাঙ্গার পরও সেখানে থাকা দ্রব্যগুলো সহজেই ছড়িয়ে পড়বে না।

আর যদি জেলি দেয়া থাকে তাহলে মাথা ভাঙ্গার সাথে সাথে সেখানে আলগা একটি বস্তু দেখা যাবে, নিচু করে ধরলে সেটা বেরিয় আসতে চাইবে। আর তখনই বুঝে নিবেন সেটা জেলি , যা মাছের ভিতর প্রবেশ করানো হয়েছে।

তবে অনেক সময় বিক্রেতারা মাছের মাথা ভেঙ্গে দেখতে চাইলে দিবে না। জোর করে হোক কিংবা কৌশলে হোক তা দেখে নিতে হবে।

খাদ্য ও পুষ্টিবিদরা বলেন,  চিংড়ি মাছের ভেতরে যে জেলী পাওয়া যা তা সম্পূর্ণ প্লাস্টিক। এছাড়া মাছের মধ্যে সাদা পাথর, ধাতব পদার্থ ও পাওয়া যায়। অনেকে ভুলে এটা খেয়ে ফেলেন। আর এগুলো খেলে কিডনি ও পাকস্থলীর সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাথর হজম হওয়ার মতো জিনিস না। সেটা পাকস্থলীর মধ্যে গিয়ে জমা হয়। ফলে পাকস্থলীর প্রদাহ তৈরি হয়।

চিংড়ি ছাড়াও সাদা পোয়া মাছ লাল করতে লাল রং এবং শিং মাছের রং প্রাকৃতিক করতে এগুলোর সাথে রং মিশ্রণ করা হয়ে থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url