ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ_ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়

 ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা সুস্থ কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে কয়েকদিনের মধ্যেই ওই ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ১০ থেকে ১৫ দিন পর লক্ষণ দেখা দেয়।

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ_ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়

বেশিরভাগ ডেঙ্গু জ্বর ৬ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায় তবে হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণ জনিত এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ভয়াবহতা অনেক বেশি। ডেঙ্গুর চিকিৎসা সময়মত না নিলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পোস্ট সূচিপত্র 

ডেঙ্গু জ্বরের সময় কাল

ডেঙ্গু সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা দেয়। তবে বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এ সময়ে এডিস মশার বিস্তার বেড়ে গিয়ে থাকে। তাই ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

  • ডেঙ্গু হলে জ্বর সাধারণত ১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে থাকে।
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে হামের  মতো রেস  অর্থাৎ লালচে দানা আকৃতির হতে পারে।
  • মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চোখের পেছনে ব্যথা করা, অরুচি বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
  • হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু হলে দাঁত ও মাড়ির গোড়া থেকে রক্তপাত হতে পারে।
  • এছাড়াও নাক দিয়ে বা বমির সঙ্গেও রক্ত যেতে পারে।
  • পায়ুপথ ও  শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
  • ক্লান্তি ও অস্থিরতা অনুভব হওয়া শুরু করে।
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া। দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে পরিচালিত করে।

চিকিৎসা ও করণীয়

  • ডেঙ্গু জ্বরের নির্ধারিত কোন চিকিৎসা নেই, তবে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল। ওষুধ ছাড়া ব্যথানাসক স্পিরিন ও ক্লোফেনাল জাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত নয়, এতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • ডেঙ্গু হলে মশারি ব্যবহার করে রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। এতে অন্যরাও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
  • আক্রান্ত রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
  • পরিমাণ মতো পানি বা তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডাবের পানি, ফলের জুস, লেবুর শরবত ও খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে কিছুক্ষণ পর পর।
  • আক্রান্ত রোগীর শরীরে রক্তক্ষরণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করতে হলে এডিস মশা দমন করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের বর্জনীয় কাজ সমূহ

  • বাড়ির আশেপাশে এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করে দিতে হবে।
  • বসতবাড়ির আশপাশে তিন দিনের বেশি স্বচ্ছ পানি জমিয়ে রাখা উচিত না।
  • ঝোপ ঝাড়ে মশা নিধন করার ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
  • ময়লা আবর্জনা যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে।
  • যত্রতত্র পানি জমিয়ে না রাখা।
  • এডিস মশাকে অনেকে ভদ্র মশা বলে থাকেন কারণ এই মশা সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে।
  • এ মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার পানিতে তাই কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি জমা না থাকে।
  • বাড়ির ছাদে বারান্দার ফুলের টবে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার, ডাবের খোসায় বা বিভিন্ন প্লাস্টিকের পাত্রে জমে থাকা পানিতে অ্যাডিস মশা বংশবিস্তার করে।

সর্বোপরি।।। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ পেয়াজের অপকারিতা ও উপকারিতা-কাচা পেয়াজ খেয়ে নামাযের বিধান

অবস্থা অনুযায়ী ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

অনেকেই ডেঙ্গু জ্বর হলে রক্তের প্লাটিলেট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে প্লাটিলেট এখন আর মূল বিষয় নয়, এটি নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ প্লাটিলের কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে অথবা শরীরের কোন জায়গা থেকে যদি রক্তপাত হয় তাহলে প্রয়োজন বোধে প্লাটিলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। তবে এই অবস্থা খুব কমই দেখা যায়।

আবার অনেকে বলে থাকেন যে প্লাটিলেট বাড়াতে পেঁপে পাতার জুস অনন্য। আসলে বাস্তবে এর তেমন কোন ভূমিকা নেই । জ্বর কমলে আপনা আপনি থেকে রক্তের প্লাটিলের বাড়তে শুরু করে।

জ্বর শেষের দিকে গেলে অনেক সময় রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এছাড়াও দাঁতের মাড়ি, নাক এবং মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এ অবস্থায় প্রয়োজনে চিকিৎসকগণ শিরা পথে স্যালাইন দিয়ে থাকেন। তাই এই সব মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন বেশি।

ডেঙ্গু জ্বরের ক্যাটাগরি

এ ক্যাটাগরি,

প্রথম ভাগে রোগীরা স্বাভাবিক থাকে তাদের শুধুমাত্র জ্বর থাকে এবং অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী এ ক্যাটাগরির হয়ে থাকে।

তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন দরকার নেই। ঘরোয়া পরিচর্যা তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে প্রচুর পরিমাণে তরল পানিও যেমন ফলের জুস, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি খাবার খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরের দ্রুত শক্তি ফিরবে।

বি ক্যাটাগরি 

ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা স্বাভাবিকই থাকে তবে শরীরের বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন বমি হতে পারে, পেটে ব্যথা হতে পারে এবং কিছু খেতে ইচ্ছে না করা, আবার অনেক সময় দেখা যায় দুই দিন জ্বর হওয়ার পরে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, এ লক্ষণ গুলো দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ভালো।

সি ক্যাটাগরি

ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে ভয়াবহ এ সময় শরীরের রক্তক্ষরণ হওয়া। শরীরের অসাড় হয়ে আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসি এর প্রয়োজন হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা-রসুনের গুনাগুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url