লবঙ্গের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন জানুন-লবঙ্গের চায়ের গুনাগুন

লবঙ্গ চা প্রাকৃতিক শক্তিতে ভরপুর। এই লবঙ্গ শুধুমাত্র চায়ের সাদ বাড়ায় না, সেই সঙ্গে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে। লবঙ্গের মধ্যে আছে আইরণ, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন কে, ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালসিয়াম। এটি নিয়মিত পান করলে শরীরের পরিবর্তনগুলো নিজেই দেখতে পাবেন ।

লবঙ্গের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন জানুন-লবঙ্গের চায়ের গুনাগুনl

লবঙ্গ চা ছাড়াও পানিতে ভিজিয়ে খেতে পেরেন তাছাড়াও মুখে নিয়ে চুষে খেতে পারেন। এতে আরো বেশি উপাকার পাবেন। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক এই লবঙ্গ চায়ের বিশেষ উপকারিতা গুলি ও কি কি রোগের জন্য লবঙ্গ আমাদের প্রযোজন।

আরো পড়ুনঃ সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে জানুন।

রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি

লবঙ্গ চা শরীরের রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। লবঙ্গ চা খাওয়া মাত্র শরীরের ভেতর বেশ কিছু পরিবর্তন শুরু হয়। দেহের প্রতিটি কোনায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে শরীরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলের কার্যক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সাথে শরীরে আসে প্রফুল্লতা ও সতেজ অনুভূতি।

আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে

আর্থ্রাইটিসের ব্যথা উপশমে লবঙ্গে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি প্রপার্টিজ। যা হাড়ের রোগ কমাতে সাহায্য করে। একটা লবঙ্গ চা বানিয়ে ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। অতঃপর সেই ঠান্ডা চা ব্যথার জায়গায় অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট করে লাগালে দেখবেন ব্যথা কমে এসেছে। এছাড়াও পেশীর ব্যথা ফোলা ভাব কমাতেও এই ঘরোয়া ওষুধটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দাঁতের ব্যথা কমাতে

প্রচন্ড দাঁতের ব্যথায় আপনি যখন কাতর। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথা কমানোর জন্য লবঙ্গ চা আপনার জন্য এক বিশেষ জাদুকরি উপাদান। ব্যথার সময়ে গরম গরম লবঙ্গ চা পান করলে দাঁতের ব্যথার মতো অসহ্য ব্যথা ও কমতে শুরু করবে। এক্ষেত্রে লবঙ্গকে গুঁড়ো করেও দাঁতের গোড়ায় লাগাতে পারেন।

রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিসের মতো মরণ রোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রতিদিন লবঙ্গ চা পান করলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কম থাকবে। এই প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে থাকা নাইজেরিসিন নামক একটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করে ইনসুলিনের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করে। যার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হজমের উন্নতি ঘটায়

দিনের প্রধান খাবার খাওয়ার আগে লবঙ্গ দিয়ে বানানো এক কাপ গরম চা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এই চা পান করলে হজম করতে সহায়ক এসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। পাকস্থলীর দিকে রক্ত প্রবাহ এর উন্নতি ঘটে যার ফলে খাবার হজম দ্রুত হয়। যাদের বদহজম হয় তারা লবঙ্গ চা পান করলে বদহজম দূর হবে।

সাইনাসের প্রকোপ কমাতে

আমরা কমবেশি অনেকেই সাইনাসের সমস্যায় ভুগে থাকি। এ সমস্যার জন্য লবঙ্গ চা একটি অতুলনীয় উপাদান। এই প্রাকৃতিক উপাদানটির মধ্যে ই---গউএনাল নামে একটি উপাদান রয়েছে যা সাইনাস এর কষ্ট কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সাইনাসের চিকিৎসায় আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ গন লবঙ্গ চা পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

নিয়মিত এক কাপ লবঙ্গ চা খেলে শরীরের ভেতরে অ্যান্টিক ক্যান্সার প্রপার্টিজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে। শরীরের কোন জায়গায় টিউমার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে। লবঙ্গে উপস্থিত  অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের সংক্রমণ সারায়

শরীরের কোন স্থানে সংক্রমণ হলে সে ক্ষতস্থানে লবঙ্গ চা লাগালে তা দ্রুত সেরে উঠবে। লবঙ্গে উপস্থিত ভোলাটাইল অয়েল শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদান কে বের করে দিতে সাহায্য করে এবং জীবাণুদেরকেও মেরে ফেলে। এতে করে সংক্রমিত স্থান অতি দ্রুত শুকিয়ে যায়।

জ্বরের প্রকোপ কমাতে

লবঙ্গে থাকা ভিটামিন উপাদান জ্বরের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন কে এবং ই প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে দেয়। ভাইরাস জনিত জ্বর হলেও তা কমিয়ে আনতে পারে লবঙ্গ চা। একটি পান করার ফলে শরীরে উপস্থিত ভাইরাসরা মারা যায়।

বমি কমানোতে লবঙ্গের ভূমিকা

যেসব মায়েরা গর্ভের প্রাথমিক অবস্থায় বেশিরভাগই বমি করতে থাকেন. তাদের এই বমি প্রতিরোধ করতে লবঙ্গের ভূমিকা রয়েছে। গরম পানিতে লবঙ্গ ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে বমি কমে যায়। তাছাড়া যাদের ভ্রমণে গেলে বমি আসে ও মাথা ব্যাথা করে তারা চাইলে ভ্রমণে যাওয়ার সময় কিছু লবঙ্গ সাথে নিতে পারেন এবং যখনই বমির বেগ আসবে তখনই মুখে নিয়ে চুষতে থাকেন এতে বমির  বেগ অনেক কমে যাবে।

সর্দি কাশিতে লবঙ্গ

লবঙ্গের তেল অনেক উপকারী। যে কোন রুমাল বা কাপড়ের টুকরায় লবঙ্গ তেল মিশিয়ে নাকে নিয়ে শুকলে সর্দি ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া লবঙ্গের তেলের সাথে কিছু চিনি মিশিয়ে খেলে ভালো হয়। যাদের গলা ফুলা,শ্বাসকষ্ট ও অতিরিক্ত সর্দি তারা লবঙ্গ খেলে এসব সমস্যা মুক্তি পেতে পারেন।

পেটের সমস্যা সমাধান

যারা পেটের নানা রোগে ভুগছেন। যেমন ক্ষুধামন্দা, পেটে গ্যাস, পেট ব্যাথা, অজীর্ণ, পাতলা পায়খানা, কলেরা, অতিরিক্ত বায়ু নিধন সহ পেটের নানা রোগে ভুগছেন তাদের জন্য লবঙ্গ মহা ঔষুধ। লবঙ্গ দিয়ে পানি সিদ্ধ করে সে পানি ছেকে খাওয়ালে ক্ষুধামান্দ্যা. পেটের গ্যাস ও পেট ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে। যাদের কলেরা. বমি ও পায়খানা বা দাস্তে হয় তারা  দু-তি ফোটা লবঙ্গের তেলের সাথে চিনি মিশিয়ে খাবেন। এই তেল পেটের যাবতয়ি অসুখের, গ্যাস ও বায়ুর উপশম হয়।

আরো পড়ুনঃ পেয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন - পেয়াজ খেয়ে নামাযের বিধান জানুন। 

লবঙ্গাদি বটি যেভাবে তৈরি করবেন

লবঙ্গ, গোলমরিচ আর বহেড়া যা (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়) সমান মাপে নিয়ে ও সম ওজনে সাদা খয়ের মিশিয়ে নিতে হবে। সবকিছু একসাথে ভালো করে পিষে নিতে হবে। বকুল বা বাবলা গাছের ভেতরের ছালের এটাও (কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়) এগুলো দিয়ে ক্বাথ তৈরি করে সে ক্বাথ মিশিয়ে নিতে হবে।

এই মিশ্রণ দিয়ে ছোলার আকারের গুলি পাকিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল লবঙ্গাদি বটি। সব রকমের কাশিতে এ গুলি বা বটি মুখে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। দিনে দু-তিনবার এ গুলি মুখে রেখে চুষে খেলে সর্দি-কাশি সেরে যায়।

এভাবে বাড়িতে তৈরি করে নেওয়া যায় আয়ুর্বেদের বিখ্যাত লবংগা দি বটি।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url