নামায না পড়ার শাস্তি-বেনামাজির শাস্তি সমূহ
মুসলমানদের জন্য নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি ফরজ ইবাদত। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না সে মুসলমান হতে পারে না। নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমানের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। নবীজি (সা:) বলেছেন, তোমরা সেভাবে নামাজ পড়ো, যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখেছো। নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ সকল প্রকার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।
আযান দেওয়ার সাথে সাথে অর্থাৎ নামাজের সময় হওয়ার সাথে সাথে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান রয়েছে। নবীজি (সা:) বলেছেন, নামাজ হল ঈমানদার ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কারী। যে ব্যক্তি স্বয়ং ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিল, তবে সে যেন কুফরি করল। নামাজের এমন গুরুত্ব জানার পরেও আমাদের মধ্যে অনেকে নামাজ পড়ে না। যারা নামাজ পড়ে না তাদের জন্য দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে কঠিন আজাব ও শাস্তি।
আরো পড়ুনঃ নামাযের সাধারণ ভুলগুলো-নামাযের গুরুত্বপূর্ণ মাসালাহ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না সে মৃত্যুর আগেই দুনিয়া থাকতেই চরম কষ্ট ও দুঃখ দুর্দশা এবং কিছু শাস্তি ভোগ করবে। নামাজ না পড়লে বেনামাজিকে ১৫ টি শাস্তি দেওয়া হবে।
একজন বেনামাজিকে নামাজ না পড়ার কারণে দুনিয়াতে পাঁচ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে, তিন ধরনের শাস্তি হবে মৃত্যুর সময়, তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে কবরে এবং বাকি চার ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে কবর থেকে উঠানোর সময়। চলুন আমরা দেখে নেই, ১৫ টি শাস্তি কেমন।
নামাজ না পড়া ব্যক্তির দুনিয়াতে যে পাচটি টি শাস্তি পেতে হবে
১। আল্লাহ তায়ালা নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তিকে দুনিয়ার জীবনের সব ধরনের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন।
২। নামাজ ত্যাগকারী ব্যাক্তির চেহারায় কোন নূর বা উজ্জ্বলতা থাকবে না।
৩। নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তিকে দুনিয়ার অন্যান্য ভালো কাজের কোন পুরস্কার দেওয়া হবে না।
৫। সর্বশেষ বেনামাজী ব্যাক্তির কোন দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না।
বেনামাজির মৃত্যুর সময় যে তিনটি শাস্তি পাবে
১। একজন বেনামাজির আত্মসম্মান বলতে কিছুই থাকেনা। কারণ যার সম্মান আল্লাহর কাছে নেই তার সম্মান মানুষের কাছে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই বেনামাজির মৃত্যু হবে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে এবং নিকৃষ্টভাবে
২। বেনামাজিরা দুনিয়ার জীবনকে রং তামাশা মনে করে, তারা অর্থবিত্তের লোভে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায়। খাওয়া-দাওয়া নষ্ট করে অনেক। অথচ দুঃখের বিষয় হচ্ছে বেনামাজি মৃত্যুর সময় ক্ষুধার্ত অবস্থায় বরণ করবে।
৩। দুনিয়াতে মৃত্যুর সময় একজন বেনামাজি যতগুলো শাস্তি পাবে, তার মধ্যে আরেকটি হচ্ছে সে পিপাসা বাদ তৃষ্ণা জড়িত অবস্থায় মারা যাবে । মৃত্যুর সময় তার কাছে এমন মনে হবে যেন, সমুদ্র ও সাগরে যে পরিমাণ পানি আছে সে পরিমাণ পানীয় তার তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারবে না।
বেনামাজির কবরে যে তিনটি শাস্তি দেওয়া হবে
১। বেনামাজির কবর খুব সংকীর্ণ করে দেয়া হবে । এতটা সংকীর্ণ করে দেওয়া হবে যে কবরে তার শরীরের রাখার জায়গা হবে না । তাই শরীরের এক পাশের বুকের হাড় অন্য পাশে ঢুকে যাবে।
২। বেনামাজির কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। সে আগুন সবসময় জ্বলতে থাকবে।
৩। বেনামাজির কবরে একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে। ওই সাপের আওয়াজ হবে বজ্রপাতের মত বিকট শব্দ। কবরে তার চোখগুলো হবে আগুনের এবং নখ হবে লোহার। তার নখের দূরত্ব হবে একদিনের দুরুত্বের সমান। যদি সে ফজর নামাজ মিস করে তাহলে সূর্য উদয় পর্যন্ত তাকে দংশন করা হবে, যদি জোহর নামায মিস করে তাহলে আসর পর্যন্ত দংশন করবে। এভাবে প্রতি ওয়াক্তের জন্য দংশন করতে থাকবে। । সাপ বলতে থাকবে আমাকে আমার রব নিযুক্ত করেছে তোমাকে দংশন করতে।
কবর থেকে উঠানোর পর যে চারটি শাস্তি দেয়া হবে
১। বেনামাজির হিসাব খুব কঠিন ভাবে নেওয়া হবে।
২। বেনামাজির উপর আল্লাহ অসন্তুষ্ট থাকবেন ।
৩। বেনামাজিকে জাহান্নামে দেওয়া হবে।
৪। বেনামাজির কপালে লেখা থাকবে, সে আল্লাহর হক নষ্টকারী। সে আল্লাহর অপছন্দনীয় লোক এবং দুনিয়াতে তুমি যেভাবে আল্লাহ হক নষ্ট করছো তাই আল্লাহ তোমার প্রতি নিরাশ হয়েছেন।
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জানা ও মানা আমাদের একান্ত কর্তব্য। একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে। যারা নামাজ পড়ে না তারা আল্লাহর প্রদত্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে কষ্টের মুখোমুখি হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। দুনিয়ার কষ্ট ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত রেখে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে মনোনিবেশ করুক। নিয়মিত ও সময় মত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন
আরো পড়ুনঃ সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির সমূহ- ”লা ইলাহা মুহাম্মুর রাসুল্লাহ” ও ”আলহামদুল্লিাহ” পড়ার ফযিলত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url