নামাজের সাধারণ ভুলগুলো- নামাযের গুরুত্বপূর্ণ মাসালাহ
বিসমিল্লাহির রাহমানির
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর উপর নামাজ ফরজ করা হয়েছে্ । অর্থাৎ নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের পড়া বাধ্যতামূলক । নামাজের মধ্যে রয়েছে সুন্নত , ফরজ, ওয়াজিব ও নফল ইত্যাদি। শুধু নামায আদায় করাই যথেষ্ট নয়। নামাজের মধ্যে থাকতে হবে মনোযোগ, একনিষ্ঠতা, স্থিরতা ইত্যাদি।
একনিষ্ঠের অভাবে অনেক সময় নিজের অজান্তেই নামাজ ভুল হয়ে যায়। নিচে কিছু হাদিসের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে মুসলিমরা যেভাবে নামাজে ভুল করে থাকে। এবং এই ভুলগুলো থেকে কিভাবে পরিশুদ্ধ হওয়া যায়, সে সম্পর্কেও আজকের ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুনঃ নামায মাকরূহ হওয়ার ৫০টি কারন-যেসব কারনে নামায মাকরূহ হয়।
নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশনা
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা এক সাহাবী মসজিদে এসে নামাজ আদায় করল। রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম তখন মসজিদের একপাশে বসে ছিলেন। সাহাবী এসে তাকে সালাম দিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে বললেন যাও তুমি আবার পুনরায় নামাজ আদায় করে আসো। কেননা তুমি যথাযথভাবে নামাজ আদায় করোনি। সাহাবী ফিরে গেলেন এবং নামাজ আদায় করলেন।
অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে সালাম করলেন, তিনি বললেন তোমার প্রতি ও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামাজ আদায় কর। কেননা তুমি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করোনি। তৃতীয়বার সাহাবী বললেন আমাকে অবগত করুন আমার ভুল কোথায় ?
আরো পড়ুনঃ জিকির করার উপকারিতা ও ফযিলত-মানব জীবনে জিকিরের গুরত্ব।
তখন নবীজি (সা.) বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তার আগে ভালোভাবে অজু করবে। অতঃপর কেবলার দিকে ফিরবে এবং তাকবির দেবে। কোরআনের যতটুকু তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা পাঠ করবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে এবং সিজদা থেকে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে বসবে। আবার ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে এবং সিজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পুরো নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৬৭)
নামাজে আমরা আরো যেসব ভুলগুলো করে থাকি সেগুলোর সম্পর্কে তুলে ধরা হলো। যেমন---
এক. নামাজে তাড়াহুড়া না করা
আমরা নামাজে দাঁড়ালে চিন্তা করি কখন শেষ করব। রুকু সিজদা ঠিকমতো দেইনা অথচ নবীজি (স:) নামাজের ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার জন্য বলেছেন। নামাজের বিধানগুলো সঠিকভাবে পালন করে নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের উপায় হল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির করা। যেমন সিজদায় গেলে ব্যবহৃত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো স্থির রাখা।
দুই. মনে মনে কিরাত না পড়া
নামাজে কিরাত পড়া শুদ্ধ করতে হবে। এজন্য মনে মনে পড়লে হবে না কিরাত পাঠ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ঠোঁট ও জিব্বার ব্যবহার আবশ্যক। ঠোঁট ও জিব্বা ব্যবহার না করে মনে মনে কিরাত পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না। কেননা নামাজে কুরআন তেলাওয়াত বা পাঠ করতে বলা হয়েছে।
তিন. সিজদার অঙ্গ গুলো মাটিতে স্পর্শ না করা
নামাজের সিজদার সময় অনেকের নাক, পায়ের আঙ্গুলগুলো মাটিতে লাগল কিনা সেটা খেয়াল করেনা। অথচ হাদিসের বাশ্যমতে সিজদার সময় শরীরের সাতটি অঙ্গ ব্যবহার করতে হবে। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে বলা হয়েছে। তা হলো কপালের উপর, নাকের উপর, দুই হাতের আংগুল, দুইটা পায়ের আঙ্গুলের দিকে। (বুখারী হাদিস: ৮১২)
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম নববী রহমাতুল্লাহ বলেন, কেউ যদি সাত অঙ্গের কোন অঙ্গ সিজদার সময় ব্যবহার না করে তবে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
চার. তাকবীর না বলেই রুকুতে যাওয়া
আমরা যখন জামাতে নামাজ আদায় করি তখন অনেক মানুষ আছে, একটি তাকবীর দিয়েই রুকুতে চলে যান। অথচ তার জন্য তাকবীরে তাহরীমার তাকিব শাহ ও রুকুতে যাওয়ার জন্য আরো একটি তাকবীর পাঠ করা আবশ্যক ছিল। আবার অনেকেই রুকুতে যেতে যেতে তাকবীরে তাহরীমা পাঠ করেন অথচ বিশেষ অফার্গতার কথা ছাড়া তাকবীরে তাহরীমে দাঁড়িয়ে পাঠ করা আবশ্যক।
পাঁচ. ছোট ও টাইট পোশাক পরে নামাজ পড়া
ছোট ও টাইট পোশাক পরা বর্তমানে এটা আমাদের কাছে একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট ও টাইট পোশাক পড়া শরীয়তের নিয়মে পড়ে না। ছোট ও টাইট পোশাক পরে নামাজ আদায় করলে ঠিকমতো সেজদা দেওয়া যায় না। একইভাবে ছোট পোশাক পড়ে নামাজ আদায় করলে রুকু করতে গেলে পিঠে কাপড় থাকে না এবং শরীর সতর ঢাকা যায় না। যার ফলে নামাজ পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই নামাজ পড়তে গেলে আমাদের খুব ঢিলেঢালা, সুন্দর ও আরামদায়ক এবং সতর ঢাকা যায় এমন পোশাক পরে নামাজ আদায় করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া সুবহানাল্লাহ ও আল্লাহু আকবারের ফযিলত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url