ওষুধ নাকি প্রাকৃতিক চিকিৎসা মেছতার জন্য কোনটি উপকারী ? জেনে নিন

মানুষ সুন্দরের পূজারী। সুন্দর থাকতে সবাই পছন্দ করে । আবার সুন্দর মানুষ  কে সবাই ভালোবাসে। মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোর সব চেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে মুখ। কিন্ত অনেকের মুখে কালো দাগ পড়ে যায়। যেটাকে আমরা মেছতা বলে থাকি। মেছতার কারনে যুবক মানুষকেও বৃদ্ধ মনে হয়। আজকের টপিক্স থাকবে মেছতা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন।

ওষুধ নাকি প্রাকৃতিক চিকিৎসা মেছতার জন্য কোনটি উপকারী ? জেনে নিন

মেছতা কি ?

মানুষের মুখের দুই অংশ এবং নাকের দুই পাশের জায়গাটি অনেকের কাল হয়ে যায় এবং দাগ পড়ে যায়  এতে মুখের মূল সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়, আর এটাকে মেছতা বলে।

পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি মেছতা হয়ে থাকে। তবে পুরুষের যে একেবারে হয় না তা কিন্তু নয়, কিছু কিছু পুরুষ এই রোগের শিকার হয়ে থাকে। মেছতা তাদের বেশি হয়ে থাকে যাদের ত্বক সূর্যের আলো শোষণ করতে পারে না, তাদের মুখে কালো অংশ বা কালো দাগ দেখা দেয়। 

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে উকুন দূর করবেন ? নিম পাতা ব্যবহারের যে ভাবে উকুন দূর করবেন।

মেছতার জন্য কি ওষুধ ব্যবহার করবেন ?

মেছতার ওষুধ লাগানোর সময় পুরো মুখে লাগাতে হবে। শুধু মেছতার জায়গায় লাগালে হবে না । হাইড্রোকুইনন নামে বাজারের নতুন ওষুধ আসছে। এই ওষুদ ব্যবহারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনার মুখ হতে মেছতার দাগ দূর হবে কিন্ত তা স্থায়ী হবে না। এটা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর তাই এটা দিয়ে মেছতা দূর করার জন্য এটা তিন চার মাসের বেশি ব্যবহার করা ঠিক না। 

তবে আপনি যদি ওষধ বা ক্রিমের মাধ্যমে মেছতা দূর করতে চান তবে আমি আপনাকে পরামর্শ দিবো “মেটাকরটিল লাইট ক্রিম’ নামের একটি ইন্ডিয়ান ওষুধ আছে , প্রয়োজনে আপনি সেটা ব্যবহার করতে পারেন।  এছাড়া মেছতা কমানোর জন্য কেমিক্যাল পিলিংও করা যেতে পারে। 

এছাড়া মেছতা দূর করতে বিটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড বা সলিসাইলিক এসিড অথবা এজিলাইক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ব্যবহার করলে দাগ ধীরে ধীরে সরে যায়।  তবে এসব ব্যবহার করলে মুখে যদি একবার সংক্রামণ রোগের আক্রমণ হয় তবে আর রেহাই নাই।

মেছতার ওষুধ কখন ব্যবহার করবেন

মেছতা এমন একটি রোগ, যার ওষুধ দিনে ব্যবহার করা যায় না। রাত্রে ব্যবহার করতে হয়। এ কারণেই চিকিৎসকরা রাত্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে  পারেন। মেছতা থেকে মুক্তি পেতে হলে সানস্ক্রিন প্রটেকশন ফ্যাক্টর ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। 

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বা রোদে গেলে ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত দিনের বেলায় সকাল দশটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত রোদের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে, তাই সময়ের রোদটা এড়িয়ে যেতে হবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে বের হতে হলে অবশ্যই ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। এ সময়ের রোদে অতি বেগুনি রশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেট বি থাকে। পুরুষদের বেলায় মিনারেল সানস্ক্রিন পাউডার পাওয়া যায়।

তবে আমি আপনাকে পরমর্শ দিবো আপনি যদি স্থায়ী ভাবে আপনার মুখের মেছতা দূর করতে চান এবং ত্বকের কোন ক্ষতি করতে না চান তবে আপনি প্রাকৃতিকভাবে মেছতা দূর করতে পারেন। চলুন এবার আলোচনা করি কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের মেছতা দূর করবেন। 

আরো পড়ুনঃ প্রস্রাবের রং হলুদ নাকি অন্য কোন রঙের ? জেনে নিন আপনি সুস্থ আছেন কিনা ?

মেছতা দূর করতে প্রাকৃতিক চিকিৎসা

মেছতা দূর করতে প্রাকৃতিক চিকিৎসার বিকল্প নেই।প্রাকৃতিক সকল চিকিৎসা, শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে শরীরের কোন ক্ষতিকারক উপাদান না থাকায়, এটি নিরাপদ ও বিপদমুক্ত। চলুন দেখা নেওয়া যাক প্রাকৃতিক উপাদান কি কি ?

টমেটো 

টমেটো ভিটামিন সি মেছতা দূর করতে অনেক উপকারী। একটা টমেটো কেটে মেছতার অংশটুকুতে প্রতিদিন পাঁচ থেকে আট মিনিট মেসেজ করুন। মেসেজ টা খুব দ্রুত ও হালকা হবে ।

দারচিনি ও দুধেরসর

এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ো এবং সামান্য দুধের সর হাতের তালুতে আঙ্গুল নিয়ে ভালো করে মেশিয়ে নিন। এর পর এই মিশ্রণটি মেছতার দাগের উপর লাগান। এরপর ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে শুকিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে আলতো করে ঘষে তুলুন। এটি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে মেছতা দূর হয়ে যাবে।

লেবুর রস ও চিনি

প্রথমে একটি লেবু চেপে নিয়ে তা পরিষ্কার তুলো দিয়ে সরাসরি মেছতার উপর লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট পর আরেকটু চেপে সাথে আধা চামচ চিনি ছড়িয়ে নিয়ে মেছতার উপর হালকা করে পাঁচ মিনিট ঘষে নিন। এরপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এটি প্রতিদিন ব্যবহারে দ্রুত মেছতা দূর হয়।

সোলার ডাল

যাদের মুখে বয়সের জন্য মেছতা পড়ে, তারা সোলার ডাল ব্যবহার করে অনেক উপকার পেতে পারেন। এজন্য প্রথমে ছোলার ডাল সারাদিন ভিজিয়ে রেখে দিন। এরপর আধা কাপ ছোলার ডালের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে পানির পরিবর্তে কাঁচা দুধ দিয়ে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিন। এটি মেছতা দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

এলোভেরা

এলোভেরার ফালকো ত্বকের দাগ দূর করতে অনেক উপকারী। একটি এলোভেরা কেটে এর জেলও এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে মেছতার উপর লাগিয়ে নিন। এবার ২০ মিনিট পর হালকা আঙ্গুল দিয়ে ঘষে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।

টক দই 

টক দই মুখের মেছতা দূর করতে অনেক কার্যকর । টক দই ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহের সাত দিন ব্যবহারে খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

আলু

আলুর রস মেছতার দাগ ধূর করতে সাহায্য করে। আলু চোখের চার পাশে জমে থাকা কালো দাগ য ডার্ক

সার্কেল নামে পরিচিত। সেটি দূল করতে সাহায্য করে। 

মুলতানি মাটি

মুলতানি মাটি ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের এক্সটা অয়েল শুুষে নিয়ে ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।

গোলাপজল, সবুজ চা, শসার রস

গোলাপজল, সবুজ চা, শসার রস, লেবুর রস ও পানি এবং মুলতানি মাটির মিশ্রণটি তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আবার এক চা চামচ টমেটোর রস ও চন্দন গুড়া , দুই চা চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন । ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url