নুহাশপল্লী যেভাবে যাবেন-খরচসহ নুহাশপল্লীর বিস্তারিত তথ্য
নুহাশপল্লী প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। এটি রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত। অনেকে আবার এটাকে নুহাশপল্লী বাগানবাড়ি নামে চিনেন। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ বাগানবাড়ি নুহাশপল্লী প্রতিষ্ঠা করেন।
নুহাশ পল্লীতে রয়েছে নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ গাছ, মসলা জাতীয় গাছ, বনজ গাছ, পাশাপাশি ঔষধি গাছের সমারোহ। হুমায়ূন আহমেদ নিজের মতো করে সম্পূর্ণ নিজস্ব স্বপ্ন জগৎ থেকে তৈরি করেছেন এই বাগানবাড়ি। মূলত ছেলে নুহাশ এর নামে নামকরণ করেন নুহাশপল্লীর।
আরও পড়ুনঃ মুন্সিগঞ্জ জেলার ইতিহাস- মুন্সিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান ও বিখ্যাত ব্যক্তি ও খাবার।
পোস্ট সূচিপত্র
- হূমায়ন আহমেদের নুহাশপল্লী
- নুহাশপল্লীর অবস্থান
- নুহাশপল্লীর আকর্ষণীয় দিকগুলো।
- যেভাবে যাবেন নুহাশ পল্লীতে
- টিকিটের মূল্য এবং সময়সূচি
- নুহাশপল্লীতে পিকনিক করতে আপনার যেমন খরচ হবে
- থাকা-খাওয়ার সুবিধা
- যোগাযোগ করবেন যেভাবে
- সতর্কতা
হূমায়ন আহমেদের নুহাশপল্লী
হুমায়ূন আহমেদের বাসভবন ছিল ঢাকা ধানমন্ডিতে। যদিও তার বাসায় ঢাকাতে কিন্তু তিনি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন এই নুহাশ পল্লীতে। কখনো পুরো পরিবার নিয়ে আসতেন, কখনো একা আসতেন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসে এখানে নিজের মতো করে সময় কাটাতেন। প্রতিবছর একলা বৈশাখে নুহাশপল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।
নুহাশপল্লীতে প্রবেশের পর মাঠ ধরে সামনে এগিয়ে হাতের বাঁ পাশে শেফালী গাছের নিচে একটি নামাজের ঘর রয়েছে। এর পাশে তিনটি পুরনো লিচু গাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান রয়েছে।এ র উত্তরে জামবাগান আর দক্ষিণে আম বাগান অবস্থিত। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান।
বাগানের একপাশে “বৃষ্টি বিলাস” নামে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশপল্লী উল্লেখযোগ্য আরেকটি আকষর্ণ হচ্ছে “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশে জুড়ে নানা রকমের গাছ। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নারিকেল গাছ।
নুহাশপল্লীর অবস্থান
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী গ্রাম এ গ্রামের বেশিরভাগ অংশজুড়ে বনভূমি বা সবুজ বৃক্ষের সমাহার। ওই গ্রামেই ৪০ বিঘা বিশাল জায়গা নিয়ে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেন নুহাশ পল্লী। তার এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে ২২ বিঘা জমি নিয়ে। মূলত এটি নুহাশ চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট ও একটি পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন নুহাশপল্লীতে।
নুহাশপল্লীর আকর্ষণীয় দিকগুলো
নুহাশ পল্লীতে ঘুরে দেখার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- গ্রামের বিশাল সবুজ মাঠ। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। আপনি মুগ্ধ না হয় ফিরে আসতে পারবেন না।
- প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রয়েছে। এইসব গাছ হুমায়ূন আহমেদ যখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন তখন সেখান থেকে তিনি এসব গাছ সংগ্রহ করছেন।
- হুমায়ূন আহমেদের কটেজ, ট্রিহাউজ, দাবা খেলার ঘর এবং নামাজ পড়ার ঘর রয়েছে।
- রয়েছে আপনি সাঁতার কাটার জন্য ডিম্বাকৃতির সুইমিং পুল।
- কাদামাটি ও টিন দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্টুডিও।
- ঔষধি গাছের বিশাল বাগান
- মৎস্যকন্যার মূর্তি সহ একটি পানির রিজার্ভার। এটির পাশে একটি রাক্ষসের মূর্তি রয়েছে।
- কংক্রেট দিয়ে তৈরি ডাইনোসরের মূর্তি।
- প্রাচীন আদলে নির্মিত কিন্তু আধুনিক ঘাট সমৃদ্ধ দীঘাল দিঘী।
- লেকের মাঝে বসার জন্য একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। রয়েছে শালবন, অর্কিডবাগান সহ ৩ টি বাংলো।
যেভাবে যাবেন নুহাশ পল্লীতে
আপনি পুরান ঢাকা থেকে যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে ঢাকা পরিবহনের বাস যেটা কাপাশিয়া যায় এবং প্রভাতী বনশ্রীর বাস যেটা বরমি যায় সেটাতে উঠুন।মহাখালী থেকে আসতে চাইলে সম্রাট লাইন, রাজদ্রুত পরিবহন, ডাউন টাউন বাসে উঠুন। এবার আপনি হোতাপাড়া নামক স্থানে নেমে সিএনজি বা আপনি লেগুনা বা যান্ত্রিক রিক্সায় নুহাশপল্লীতে যেতে পারবেন। খেয়াল রাখবেন , ময়মনসিংহের বাস ও প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের বাস গুলো গাজীপুর চৌরাস্তায় অনেকক্ষণ দেরি করে । কিন্তু সম্রাট লাইন, বা রাজদূত বা ঢাকা পরিবহনের বাস গুলো যাত্রী নামিয়ে চলে যায়।
টিকিটের মূল্য এবং সময়সূচি
নুহাশপল্লী ৭ দিনেই খোলা থাকবে, কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে, তবে বিশেষ অনুরোধে মাগরিবের আজান পর্যন্ত সাধারণ দর্শনাথীদের জন্য খোলা রাখা হয়। নুহাশ পল্লীতে ১২ বছর উপরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা ধরা হয়েছে। ১২ বছরের নিচে ফ্রি । তবে বছরের দুই দিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন এবং ১৯ শে জুলাই মৃত্যু দিন, নুহাশপল্লী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে । এই দুইদিন ঢুকতে কোন টিকিট লাগেনা।
নুহাশপল্লীতে পিকনিক করতে আপনার যেমন খরচ হবে
নুহাশ পল্লী বছরে এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া হয়। কারণ এই সময়টা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি -বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জন্য পিকনিকের জন্য নুহাশপল্লীতে আসে। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য একটি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিন পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে গুনতে হবে ৫০ হাজার টাকা অন্য দিনগুলোতে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা।
থাকা-খাওয়ার সুবিধা
নুহাশ পল্লীর অভ্যন্তরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, তবে আপনারা যারা যাবেন তারা যদি ১০ জনের নিচে হয়ে থাকেন তাহলে খাবার ব্যবস্থা আপনার নিজেকে করতে হবে তবে হ্যাঁ যদি ১০ জনের অধিক হয়ে থাকেন তাহলে নুহাশ পল্লীর সাথে যাওয়ার আগে যোগাযোগ করলে আপনার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকবেন। নুহাশ পল্লীতে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই তবে বৃষ্টি বিলাস নামে বাংলোতে আপনি চাইলে বিশ্রাম নিতে পারেন । তবে ভূত-বিলাস নামে বাংলোতে থাকতে চাইলে আপনার খরচ পড়বে 3000 থেকে 5000 টাকা।
যোগাযোগ করবেন যেভাবে
নুহাশপল্লী কর্তৃপক্ষের ফোন নাম্বারঃ সাইফুল ইসলাম বুলবুল, ব্যবস্থাপক।
01911-920666, 01712-060971, 01738-704010
সতর্কতাঃ
নুহাশপল্লী এলাকা রাত্রীকালীন নির্জন হয়ে যায়। লোকারণ্য থাকেনা, তাই যদি রাত্রীযাপন না করেন তবে চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার আগেই আগেই ফিরে আসতে। এছাড়া হোটেল রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। তাই আমাদের ব্লগে উল্লেখিত ভাড়া বা খরচের সাথে মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমনে যাচ্ছেন , দুরত্ব কেমন ? এবং বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করুন।বিভিন্ন হোটেলে. রিসোট এ রাত্রি যাপন করার ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করুন। আমাদের ব্লগে উল্লেখিত যোগাযোগের নাম্বারে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন। নিশ্চিত না হয়ে কোন প্রকার অর্থ লেনদেন করবেন না। কোন প্রকার আর্থিক ক্ষতি সাধন হলে আমাদের ব্লগ দায়ী থাকবো না।
আরও পড়ুনঃ ধুমপান ছাড়ার কৌশল জানুন-ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো জানুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url