সন্তানকে যে ভাবে মানুষ করবেন-শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কৌশল

সন্তানের মানসিক হতাশা নিয়ে চিন্তার ভাজ অভিভাবকদের কপালে। চেষ্টা করেও কি বদলানো যাচ্ছে না এই পরিস্থিতি? ভেবে দেখেছেন কি কখনো এজন্য আসলে দায়টা কার? ভুলটা কোথাও অভিভাবকদেরই নয়তো?
সন্তানকে যে ভাবে মানুষ করবেন-শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কৌশল

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভালো বাবা-মার কোন সংজ্ঞা হয় না। এটা একটা লম্বা সফর। কয়েকটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে সন্তানের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন আপনিও।

সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাইলে নিম্মের বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হউন।

০১. সন্তানের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সে অভিভাবকরা খানিকটা সচেতন হলেই বোধহয় বাঁচানো যাবে ছোট ছোট প্রাণগুলোকে। কাজেই প্রথমে সন্তানকে বুঝতে শিখুন, আর সে অনুসারে শুধরে নিন নিজেকে। 

০২.
বয়সন্ধির গুরুত্বপূর্ণ সময় আপনার সন্তানের হাতটা ধরুন শক্ত করে। প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনের বিষয়টি খেয়াল রাখা কাজেই পেরেন্টিং স্টাইলেও এবার পরিবর্তন আনা দরকার। ছোটবেলায় যেভাবে শাসন করতেন তার ধরন বদলে ফেলতে হবে।

০৩. সন্তানের সব কথা খুব মন দিয়ে শুনতে হবে, আপাতত সেগুলো যতই অযৌক্তিক মনে হোক না কেন তারপরেও সে কি বলছে বা কি বলতে চায় সেটা আগে শুনতে হবে, বিচার করতে হবে। তারপরে আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন তার সামনে। তবে আপনার মতামত ওর ওপর চাপিয়ে দেবেন না।

০৪. কোন কাজ করা নিয়ে সন্তানের সামনে এক কথা বারবার বলবেন না। এ সময়টায় আপনার কথায় বৈচিত্র খুঁজতে থাকে অপরের মত মন। অন্যথায় বেঁকে বসতে পারে আপনার সন্তান।

০৫. মারধর করবেন না। এতে হিংসাত্মক আচরণ করতে পারে আপনার সন্তান। তার চেয়ে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে আপনার কথাগুলো ওকে বোঝান।

০৬. সপ্তাহে অন্তত একটা দিন সময় বাঁচিয়ে রাখুন পারিবারিক বৈঠকের জন্য। এই দিনটায় সন্তানের মুখোমুখি বসে তার অভাব অভিযোগগুলো নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা করুন বাড়ির সবাই। এক্ষেত্রে ওর মন বুঝতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তার থেকে আড়াল করার প্রয়োজন নেই । বরং আলোচনা করুন। রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় তার মতামত জানতে চান এতে ওর মানসিক বিকাশ হবে।

০৭. যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন ট্যাটু ভেঙ্গে বেরিয়ে আসুন। কোন ব্যাপারেই হঠাৎ করে সীমারেখা টানতে যাবেন না। তার চেয়ে বরং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওর সামনে এ বিষয়ে একটা চিত্র তুলে ধরুন। মনে রাখবেন কোন বিষয় থেকে তাকে আটকানোর চেষ্টা করলেই সে বিষয়ের প্রতি তার ঝোঁক বেড়ে যাবে।

০৮. বাবা-মা কখনো বন্ধু হতে পারেনা আপনি তার বন্ধুর স্থানীয় বা বন্ধুর মত হতে পারেন। তবে বন্ধু কখনো নয়। সে হয়তো আপনাকে সমস্ত কথা বলবে না। তবে এমন একটা বাতাবরণ তৈরি করুন যাতে তার যে কোন সমস্যার বেশিরভাগটাই আপনাকে এসে নির্দ্বিধায় বলতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়াও মার্জিত হওয়া প্রয়োজন।

০৯. ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াশোনা না করিয়ে বিভিন্ন রকম শারীরিক খেলাধুলায় তাকে উৎসাহ দেওয়া ভালো। এতে তার মন হালকা হবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ পাবে বাইরের জগতে মিশতে থাকে উৎসাহ দেবেন।

১০. আপনি আপনার সন্তানের কাছ থেকে সম্মান আশা করবেন এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আপনি কি খেয়াল করেছেন তার সঙ্গে আপনি কেমন ব্যবহার করেন! খেয়াল রাখুন তাকেও তার প্রাপ্য সম্মান দিন তাতেই যথার্থ সম্মান ফেরত পাবেন আপনিও। বয়সের ফারাক এর কারণে দুজনের পছন্দ মিলবে না কখনো? তারপরেও তার পছন্দের প্রতি আগ্রহ দেখালে বিপরীতে আপনিও গুরুত্ব পাবেন।

১১. এই বয়সের বাচ্চারা একটু বেশি অভিমানী হয় কাজে আপনার বাক্য চয়ন শব্দ চয়নে গুরুত্ব দেয়া দরকার। নির্দেশ না দিয়ে অনুরোধ করুন। এতে ফল পাবেন। বাবা-মা ও যে তার উপর নির্ভর করছেন সেটা তাকে বোঝান।

১২. সন্তান কি ধরনের বই পড়ছে কাদের সঙ্গে মিশছে কি ধরনের ওয়েবসাইটে যে আসক্ত সেসব দেখে খেয়াল রাখুন। তার স্মার্টফোনে ও নজর রাখুন। পাশাপাশি তার কথাবার্তাও খেয়াল করুন। তবে কোন বিষয়ে নির্দেশ চাপিয়ে দেবেন না।

১৩. বয়সন্ধি এমন একটা সময় যখন অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানের গতিবিধির বুঝতে পারে না, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন যদি মনে হয় আপনার সন্তান আপনার কাছ থেকে কোন কথা লুকিয়ে রেখেছে তখন তাকে এমন কারো কাছে নিয়ে যান  যে তার মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে সক্ষম।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url