প্রস্রাবের রং হলুদ নাকি অন্য কোন রঙের ? জেনে কতটা সুস্থ আছেন।

প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক মানে আপনার শরীর অনেকটাই রোগমুক্ত। একথা বলার কারণ হলো, আমাদের শরীরের অনেক রোগের লক্ষণ বোঝা যায় প্রস্রাবের রং দেখে। যদি আপনার প্রস্রাবের রং হলুদ হয়, তাহলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো প্রচুর পানি পান করা।

প্রস্রাবের রং হলুদ নাকি অন্য কোন রঙের ? জেনে কতটা সুস্থ আছেন।

এরপরও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় খুব কড়া ওষুধ খেলে তার ফলে আমাদের প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়। তাই সবসময় প্রস্রাবের রং হলুদ হওয়া মানে কিছু সাংঘাতিক হয়েছে শরীরে এমনও কিন্তু না। তবে কিছু প্রস্রাবের রং হলুদ হলে তা কিছু রোগের লক্ষণ হতে পারে। নিচে সে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

আরও পড়ুনঃ বজ্রপাত কি ?কখন হয় ? বজ্রপাতে করণীয় বিষয়সমূহ।

 ডিহাইড্রেশন

খুবই কম পরিমাণে পানি পান করার ফলে আমাদের প্রস্রাবের রং হলুদ হতে পারে। আমাদের প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। অনেক কারণে ডিহাইড্রেশন হতে পারে যেমন- খুব বেশি বমি হলে, খুব চিন্তা বা ক্লান্তি অনুভব করলে, খুব ঘাম হলে ইত্যাদি। পানি পান করে তারপর শরীরে পানি পরিমাণ বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে আমাদের প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়।

হেপাটাইটিস

হেপাটাইটিসের ফলে ও আমাদের প্রস্রাবের রং হলুদ হতে পারে। সাধারণত লিভার ফুলে গেলে হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস ভাইরাল ইনফেকশনের থেকেও হতে পারে। অনেক সময় খুব বেশি পরিমাণ মদ খেলে সেটি হেপাটাইটিস রোগে পরিণত হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা গিয়েছে এমন কোন ঔষধ খেলে যার মধ্যে বিভিন্ন হলুদ প্রস্রাব করানোর কেমিক্যাল আছে, এর ফলেও হেপাটাইটিস হয়। তাই হেপাটাইটিস রোগ ধরা পড়ে।

 জন্ডিস

জন্ডিসের রোগ প্রথমে বোঝা যায় হলুদ প্রস্রাব দেখে। তারপর মলের রঙও গাঢ় হলুদ হয়ে থাকে। তীব্র শরীর খারাপের সাথে আমাদের গায়ের রংও হলুদ হতে থাকে। তীব্র শরীর খারাপের সাথে আমাদের গায়ের রঙও হলুদ হতে থাকে। খুব বেশি পরিমাণ যখন সৃষ্টি হয়ে যায় এবং আমাদের লিভার সেই বিলুরুবিন প্রস্রাবের সাহায্যে বাইরে বের করে দেয়। প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের প্রথম লক্ষণ। তাই জন্ডিস সংকেত দেখলেই আমাদের উচিত ডাক্তার দেখানো।

লিভার সিরোসিস

লিভারের সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব পড়ে প্রস্রাবের রঙের উপর। লিভার আমাদের শরীরের একটা জরুরি অংশ। তাই হলুদ প্রস্রাব যখন দেখা দেয় তখন আমাদের উচিত প্রথমেই ডাক্তার দেখানো এবং নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা। দীর্ঘদিন ধরে যদি আমাদের লিভারে অসুবিধা দেখা দেয় তাহলে প্রস্রাবের সাথে সাথে আমাদের পায়ের দিকের চামড়ার রং হলুদ হতে দেখা যায়।

কিডনি স্টোন

প্রস্রাবের হলুদ হওয়া কিডনি স্টোনের সংকেত দেয়। তাই যদি প্রস্রাবের সময় কষ্ট অনুভব করেন আর প্রস্রাবও হলুদ হয় তাহলে খুবই জরুরী ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। এইসব ক্ষেত্রে দেরি করা একদমই উচিত না।

আরও পড়ুনঃ কিডনিতে পাথর! ‍কিডনিতে পাথর কেন হয় ? পাথর হলে করনীয়।

প্রস্রাবের রং দেখে বুজে নিন আপনার শরীরের কোন রোগ বাসা বাধছে কিনা।

রোজ সকালের আপনি ঠিক কি রঙের প্রস্রাব করছেন তা আপনার সতর্কতার সাথে খেয়াল করা উচিত। কখনো অদ্ভত রং দেখে চমকে যাবেন না কিংবা ভয় পাবেন না। ঠিক কি সমস্যা হচ্ছে তা আমাদের জানান দেয়  প্রস্রাবের রং । নিচের প্রস্রাবের রঙ থেকে জেনে নিন  আপনার শরীর কতটা সুস্থ আছে নাকি কোন রোগ বাসা বাধছে।

স্বচ্ছ প্রস্রাব 

আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হাইড্রেটেড যারা অতিরিক্ত পানি খান তাদের এ ধরনের প্রস্রাব হয়। এটা শরীরের পক্ষে একেবারেই ক্ষতিকারক নয় বরং বলা যেতে পারে আরেকটু কম পানি খেলেও সমস্যা নেই।

স্বচ্ছ হলদেটে 

আপনি যথেষ্ট সুস্থ প্রসাবের রং এমনটাই হওয়া উচিত। আপনি পরিবাণ মত পানি খাচ্ছেন। কোন সমস্যা নেই।

গাঢ় হলুদ 

এই রঙও স্বাভাবিক ।এ রঙের মানে আপনার শরীর ঠিকঠাক কাজ করলেও সামান্য ডিহাইড্রেটেড পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ালেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

মধু  রঙের

এটাও স্বাভাবিক। আপনার শরীর এখনো ঠিকঠাক কাজ করছে। কিন্তু শরীরে কিছুটা ফ্লইডের অভাব হচ্ছে। পানি খাওয়া বাড়াতে হবে ।তেমনি ফলের রস ,ডাল জাতীয় খাবারও প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন।

কমলা রঙের

এ রঙের প্রস্রাবের বেশ কিছু অর্থ হতে পারে। রিহাইড্রেশনের কারণে কমলা প্রস্রাব হলে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই আবার কিছু কিছু ওষুধের কারণেও প্রস্রাবের রং কমলা হতে পারে। তবে যদি কমলা রঙের প্রস্রাব নীল বা সবুজ হালকা রঙের মল হয় তাহলে কিছুটা চিন্তার বিষয়। লিভার বা বাইলের সমস্যা হলে এমনটা হয় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নীল বা সবুজ

এই রঙের প্রস্রাব সত্যি চমকে যাওয়ার মত। খাবারের ডাই-য়ের রঙের কারণে নীল বা সবুজ প্রস্রাব হতে পারে। আবার হাইফার ক্যালসিয়ামিয়া নামক বিরল অসুখে ভুগলেও প্রস্রাবের রং এমন হতে পারে । অনেক সময় ইউরিনারি ট্রাক্টে ইনফেকশন হলেও প্রস্রাবের রং এভাবে বদলে যায়।

ঘোলাটে

কিডনির সমস্যা বা ইউরিনারি ট্রাক্টে ইনফেকশন হলে প্রস্রাবের রং ঘোলাটে হয়ে যায়। তবে যদি মাঝে মাঝে আপনার ঘোলাটে প্রস্রাব হয় তাহলে চিন্তার বিশেষ কিছু নেই। খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি হলে এমনটা হতে পারে। কিন্তু প্রতি দিন ঘোলাটে প্রস্রাব হলে অবশ্যই  চিকিৎসকের কাছে যান।

সিরাপ বা বাদামী রঙের

শরীর ডিহাইড্রেশনের চরম পর্যায়ে গেলে বা লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে বাদামী রঙের প্রস্রাব হয়। আবার কিছু কিছু খাবার বা ওষুধের কারণেও বাদামি প্রস্তাব হতে পারে। যদি আপনার বাদামি প্রস্রাব হয় তাহলে প্রথমে পানি খাওয়া বাড়ান যদি তাতেও রং হালকা না হয় তাহলে লিভারের সমস্যা হচ্ছে আপনার এটা বুঝে নিবেন।

লাল বা গোলাপি

এই রঙের প্রস্রাব দেখলে অনেকে ভয় পেয়ে যান। তবে সব সময় গুরুতর সমস্যার কারণেই এমনটা হয় তা নয়। মোট চারটি কারণে এটা হতে পারে। 
  • প্রস্রাবে রক্ত এলে।
  • কোনও বিশেষ খাবার বা কোনও বিশেষ ওষুধ বা টক্সিনের কারণে।
  • বিট, ব্লবেরি, ব্ল্যাকবেরি খেলে প্রস্রাবের রং গোলাপি হতে পারে। 
  • টক্সিন, লেড বা পারদের কারণেও গোলাপি রঙের প্রস্রাব হতে পারে তবে যদি রক্তের কারণে হয় তাহলে আপনার ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশন টিউমার বা প্রোস্টেটের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

খেয়াল করুন

প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হলে আমাদের ভেবে দেখতে হবে যে আমরা বিট রুট জাতীয় কোন খাবার খেয়েছি কিনা যদি খেয়ে থাকেন তাহলে শরীর নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url