আদর্শ সমাজ গঠনে তরুণদের ভূমিকা-তরুনদের সামাজিক দায়-দায়িত্ব
যোগ্য নের্তৃত্ব ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে উন্নত দেশ গঠনে এবং দেশের উন্নতি-অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে তরুনদের ভূমিকা অপরিসীম। এটা সর্বজন বিধিত যে, কেবল তরুণরাই পারবে সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধশালী আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করতে। ইসলামে তরুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তারুণ্য মানবজীবনের অমুল্য এক সম্পদ।
এটা জীবন মহীরুহের বিকশিত চারাগাছ। তারুণ্য কাচা বয়সের একটি উদ্দীপনার নাম। তারুণ্য অর্থ হচ্ছে বাধা না মানা। তীব্র স্রোতে উজান সাতার পাড়ি দেয়াই তারুণ্যের ধর্ম। চেতনাদৃপ্ত তরুণরা যখন জেগে ওঠে তখন সকল প্রতিবন্ধকতার সকল চড়াই-উৎরাই ছাড়িয়ে তারা বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিজয়ের পুষ্পমালা তাদের পদচুম্বন করে।
ইতিবাচক অর্জনসহ সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের অবদান। তারুণ্য তথা যৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যান ও পরকালীন জীবনে মুক্তির বিশাল বাগিচায় উপনীত হওয়া যাবে।
মানবজীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন। এ কারণে হাদিসের মধ্যে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে এ সকল তরুণ্যের বসার সুযোগ দিবেন যারা তরুণ বয়সে সময়কে আল্লাহর রাহে ব্যয় করে কাটিয়েছেন । অন্যত্র এরশাদ হয়েছে তরুণ বয়সের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে একজন বৃদ্ধের ইবাদত আছে আল্লাহ বেশি খুশি হন যে সমস্ত তরুণরা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে হাশরের ময়দানে মানুষের পাঁচটি বিষয়কে হিসাব দিতে হবে তারমধ্যে একটি হচ্ছে সে তার যৌবনকাল কিভাবে করছে।
হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম, যৌবনকাল কে গনিমতের মাল তথা মূল্যবান সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে তা মূল্যায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা এ সময় সম্পর্কে পরকালে জবাব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, আমর ইবনু মায়মুন আল আওদী রাদিয়াল্লাহু বলেন, হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম জৈনিক ব্যক্তিকে উপদেশ সরূপ বলেন, পাঁচটি বস্তুর পূর্বে পাঁচটি বস্তুকে গনিমত মনে কর।
যথা-
১. তোমার বার্ধক্য আসার পূর্বে অবসরকে।
২. পীড়িত হওয়ার পূর্বে সুস্বাস্থ্য কে।
৩. দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে।
৪. ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে।
৫. মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।
তরুনকাল অত্যন্ত মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনে বিজয়ের সাফল্যের পেছরে রয়েয়ে তরুন সমাজের আত্মত্যাগ। এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙে চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়েছে অসংখ্যা সরকার বাহাদুরের রাজ্য সীমা। ইতিহাসে চির অমম্লান হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগরে সৃতি।
বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিশ্বমানবতার কল্যাণে তরুণদের নিয়েই পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংগঠন”হিলফুল ফুযূল” যুব সংঘ গঠন করেন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মাঠে নেমেছেন সর্বাগ্রে তরুণরাই এগিয়ে এসেছেন। হযরত আবু বকর রা. হযরত উমর রা. তরুণ বযসে ইসলাম কবুল করেন। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তারাও ছিলেন কয়েকজন তরুণ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের আসহাফে কাহাফ”র ইতিবৃত্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি। তারা ছিল কয়েকজন তরুণ। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল রা. ছিলেন তরুণ। হযরত ইবরাহিম আ. যখন মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পাষন্ড নমরুদের তৈরিকৃত আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত ইউছুপ আ. যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি তরুণ ছিলেন। হযরত ইউনূছ আ. কে যখন সমুদ্রের মাছ গিলে ফেলে তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত দাউদ আ. যখন জালিম শাসক জালুতকে হত্যা করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ।
এখনও তরুণরাই ইসলাম,নবী,দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের তরুণদের পদচারণায় আজও মুখরিত। বিশ্বজুড়ে চলছে আজ তরুণদের জয়-জয়কার। জাতির প্রাণের স্পন্দন তরুণ সমাজ। তরুণরা যে উদ্দেশ্যেই জেগেছে সে উদ্দেশ্যেই অর্জন করেছে। েএমনি ভাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগের কথা। একটি আদর্শ বিনির্মাণে তরুণদেরই জেগে উঠতে হবে, জাগতে হবে জাতিকে। মায়ের আচল লুকিয়ে নয়, বোনের স্নেহের ডোরে বাধা পড়ে নয়, বাবার শক্ত চাহনিতে ঘরের আড়ালে লুকিয়ে নয়। ইসলাম-মানবতা ও জাতির কল্যানে তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url