শিশুর কৃমি হলে তাৎক্ষনাত করণীয়-কৃমি রোধে ঘরোয়া টুটকা
কৃমি এক ধরণের পরজীবী যা সাধারণত শিশুদের অন্ত্রে বসবাস করে এবং শিশুদের খাদ্য থেকে পুষ্টি অর্জন করে। শিশুদের পেটে কৃমি হওয়া খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। প্রায় সব বাচ্চার মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ফিতাকৃমি বা সুতো কৃমি।
ফিতাকৃমিকে চ্যাপ্টাকৃমিও বলা হয়। একটি ফিতাকৃমির দৈর্ঘ্য কয়েক ইঞ্চি থেকে প্রায় ৪০ ফুট বা তার বেশি হতে পারে। আবার সুতাকৃমিকে কুচোকৃমিও বলা হয় । তারা ক্ষুদ্র, পাতলা, সাদা ও সর্বদা নড়াচড়া করে। এই কৃমি মলদ্বারে বসবাস করে এবং স্ত্রী কৃমি মলদ্বারের আশেপাশে ডিম পাড়ে ।
পোস্ট সূচিপত্র
শিশুর শরীরে কৃমি আক্রমণ করলে যেসব লক্ষন দেখা দেয়ঃ-
- ওজন কমে যাওয়া
- পেটে হালকা ব্যাথা হওয়া
- খাবার হজম না হওয়াতে ডায়রিয়া হওয়া
- রুচি কমে যাওয়া ও খাওয়া কমে যাওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- মলদ্বারে চুলকানি হওয়া
- পিকা বা খাওয়ার জিনিস নয়, সেসব খেতে চাওয়ার আগ্রহ ( যেমন মাটি)
- চুলকানির কারণে ঘুম কমে যাওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- অন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে রক্তপাত করা এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ।
- শিশুর খিটখিটে আচরণ দেখা দেয়।
- প্রস্রাবের সময় ব্যাথা অনুভব হয়।
- মেয়ে শিশুদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া।
- অতিরিক্ত চুলকানি দেখা দেয় ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
যেসব কারনে শিশুরা কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারেঃ-
- দূষিত মাটি ও দূষিত পানি থেকে মানুষ কৃমিতে আক্রান্ত হয় বেশি।
- শাকসবজি ঠিক ভাবে না ধুয়ে খেলে বিশেষ করে বাজার থেক আনা শাকসবজি।
- শাকসবজি ও মাছ-মাংস ঠিক ভাবে সিদ্ধ না করে খাওয়া বা আধাসিদ্ধ করে খাওয়া।
- সাধারণত মাটি বা পানি থেকে কৃমির ডিম বা লার্ভা বাচ্চা বা বড় মানুষের হাত পায়ে লেগে যায়। পরে মুখের মাধ্যমে এসব লার্ভা অন্ত্রে চলে যায়।
- আবার অনেক সময় এসব লার্ভা স্কিন ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে।
শিশুকে কৃমির আক্রমণ থেকে বাচাতে যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১. জন্মের পর প্রথম ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো ছাড়া শিশুকে অন্য কিছু দেওয়া যাবে না। এ সময় অন্য কোন খাবার বা পানীয়ের আদৌ প্রয়োজন নেই। ছয় মাস বয়স হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করে খেতে দিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, শিশুর খাবার যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হয়
২. পরিষ্কার ও নিরাপদ পানির ব্যবহার করতে হবে। পানের তো বটেই, ধোয়ামোছা,রান্না-বান্না ইত্যাদি কাজেও বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দূষিত বা আধাসিদ্ধ পানি ব্যবহার করা যাবে না।
৩. পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে এবং খাবার গ্রহনের আগে ও মল ত্যাগের পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪. স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নিয়মিত গোসল করতে হবে। পরিষ্কার জামাকাপড় পরা এবং নখ বড় হওয়ার আগে অবশ্যই কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের নখও পরিষ্কার করতে হবে । নখ বড় হলে কেটে দিতে হবে।
৬. অর্ধসিদ্ধ মাংস ও খাওয়া যাবে না।
৭. খালি পায়ে হাটার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
৮. প্রতি চার মাস পর পর পরিবারের সবাইকে বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রার কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে।কেননা বাড়িরে একজনের কৃমি থাকলে সবারই সংক্রমণ হওয়ার ঝুকি থাকে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়ির সবাইকে কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে।
যেভাবে শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়াবেন
এক বছরের আগে শিশুকে কৃমির ওষুধ দেয়া যাবে না। কিন্ত এক বছর হয়ে গেলে নিয়মিত ৬ মাস অন্তর অন্তর বাচ্চাকে কৃমির ওষুধ অবশ্যই দিবেন। একবার ওষুধ খাওয়ানের ৭-১০ দিন পর পুনরায় প্রাথমিক ডোজ দিতে হবে। কৃমির ওষুধ কৃমিকে মেরে ফেলে কিন্ত কৃমির ডিম এবং লার্ভা মারতে পারে না। তাই ছয় মাস পর পর বাচ্চাকে কৃমির ওষুধ দিতে হবে। কৃমি একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে সহজে ছড়াতে পারে। তাই পরিবারের সবাই একসাথে কৃমির ওষুধ খাবেন।
কৃমির ক্ষতি থেকে বাচতে ঘরোয়া কিছু প্রতিকার
ডাক্তারের ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি শিশুদের কৃমির জন্য ঘরোয়া কিছু প্রতিকারগুলি ব্যবহার করতে পারেন। এগুলি বাচ্চাদের খাবারে মিশিয়ে িকৃমি নাশক করা সম্ভব।
- কাচা পেপের মধ্যে পাপাইন নামে একটি এনজাইম আছে যা কৃমিনাশক হিসাবে কাজ করে।
- রসূন হল একটি প্রাকৃতিক কৃমিনাশক এজেন্ট এবং পরজীবী কৃমি নাশ করতে অধিক কার্যকর।
- ক্যারম বীজ থাইমল সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের পরজীবী বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। একে গুড়ের সাথে মিশিয়ে শিশুকে দেওয়া যেতে পারে।
- করলা পেটের কৃমির সাথে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে । পানি এবং মধু দিয়ে মিশিয়ে এটি শিশুকে দিতে পারেন।
- কুমড়ো বীজে কিউকারবিটাসিন আছে যেটি কৃমিদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে তোলে এবং শরীরের মধ্যে তাদের বেচে থাকা প্রতিরোধ করে।
- নিমের মধ্যে আছে পরজীবী-বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে উপযোগী।
- গাজর ভিটামিন এ থাকে যা শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্রের পরজীবীদের বিরুদ্ধে লড়ায় সহায়তা করে। খালি পেটে গাজর খেলে কৃমি পরিষ্কার হয়।
- হলুদ একটি অভ্যন্তরীন অ্যান্টিসেপটিক যা সমস্ত ধরণের কৃমি নির্মূল করার জন্য পরিচিতি।
ভালো লাগলে এবং উপকৃত হলে পোস্টটি শেয়ার করবেন। আপনার সু-স্বাস্থ্য কামনায়- কে এইচ মামুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url