জিকির করার ফযিলত ও উপকারিতা-মানবজিবনে জিকিরের গুরুত্ব (২))
প্রখ্যাত হাদিসবেত্তাঃ-হাফেজ ইবনে কায়্যিম জিকিরের উপকারিতা বিষয়ে রচিত তার “আল ওয়াবিলুছ ছায়্যিব” নামক গ্রন্থে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। জিকিরের মধ্যে রয়েছে একশতটিরও বেশী উপকারিতা।
সেখানে থেকে ৭০টি উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে-ধারাবাহিকভাবে আজকের দিতীয় পর্বে আমরা জিকিরের উপকারিতা ও ফযিলত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের ইহকাল জীবন কে সাফল্যমন্ডিত করতে পারবেন।
জিকিরের উপকারিতা-জিকিরের ফজিলত
২য় খন্ডঃ-
৩৬. জিকিরের নুর দুনিয়ায় সঙ্গে থাকে, সঙ্গে থাকে কবরেও। আর পুলসিরাতে চলতে থাকবে আগে আগে। রাসুল পাক সাঃ এই নূরের জন্যই প্রার্থনা করতেন এভাবে”- হে আমার আল্লাহ! আমার মাংসে, অস্তিত্বে, চর্মে, পশমে,কানে, চোখে ,উপরে, নিচে, ডানে, বামে ,সম্মুখে ও পশ্চাতে নুর দান কর। আরো বলতেন, আমার আপাদমস্তক নুরে ভরপুর করে দাও।
৩৭. জিকির তাশাউফ শাস্ত্রের মৌলিক বিষয় গুলির মূল। সকল তরীকার পীর মুর্শিদগণ এ ব্যাপারে একমত। যার জন্য জিকিরের দ্বার উন্মক্ত হয়েছে, তার জন্য খুলে গিয়েছে মারেফাতের পথ।
৩৮. মানুষের অন্তরে এমন একটি কোন আছে, যা জিকির ছাড়া অন্য কোন কিছু দ্বারা পূর্ণ করা যায় না। হৃদয়ের পূর্ণ পরিসর যখন জিকিরে ভরে যায় তখন ঐ বিশেষ কোনটিও ভরপুর হয়ে যায় । জিকিরের নুরে তখন জিকির কারি সম্পদ ব্যতিরেকেই হয়ে যায় সম্পদশালী। আত্মীয়-স্বজন ও জনবল ছাড়াই লাভ করে প্রভূত সম্মান। সাম্রাজ্য ছাড়াই হয়ে যায় সম্রাট। আর যে জিকির করেনা সে আত্মীয়-স্বজন ও বিত্তসম্পদ ও রাজত্ব থাকা সত্তেও হয় লাঞ্চিত ও অপদস্ত।
৩৯. জিকির বিক্ষিপ্ত বিষয়গুলিকে একত্র করে, একত্র করে বিক্ষিপ্ত। দূরবর্তীকে করে নিকটবর্তী। আর নিকটবর্তীকে ঠেলে দেয়া দূরে। অর্থাৎ হৃদয়ের সকল অসৎ ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়ে অন্তরে আনে শান্তি ও আল্লাহর প্রেম। দুর্ভাগ্যকে করে দূরবর্তী আর নিকটে আনে সৌভাগ্যকে।
৪০. জিকির হৃদয়ের ঘুম ভাঙ্গায়। সতর্ক করে।
৪১. জিকির এমন একটি বৃক্ষ, যাতে ফল ধরে মারেফাতের। সুফিয়ায়ে কেরাম ওই ফলকে বলেন হাল ও মাকামের ফল। জিকির যত গভীর হবে, ঐ বৃক্ষের শিকৃড় হবে তত সুদূর। ফল ধরবে বেশি।
৪২. জিকিরকারী আল্লাহ পাকের সঙ্গী।
৪৩. জিকির কৃতদাস মুক্ত করে দেওয়ার সমতুল্য। আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় সমতুল্য। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার সমান।
৪৪. জিকির শোকরের মূল। যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না, সে আল্লাহর শোকর আদায় করে না।
৪৫. পরহেজগারদের মাঝে আল্লাহর কাছে তারাই অধিক সম্মানিত যারা সব সময় জিকিরের মশগুল থাকে। কেননা তাকওয়ার শেষ ফল জান্নাত আর জিকিরের শেষ ফল আল্লাহর নৈকট্য।
৪৬. দিলের মধ্যে এমন এক ধরনের কাঠিন্য আছে, যা জিকির ছাড়া অন্য কিছুতে নম্র হয় না।
৪৭. জিকির সকল রোগের চিকিৎসক।
৪৮. আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্বের মূল হচ্ছে জিকির আর তার সাথে শত্রতার তার মূল হচ্ছে-গাফিলত।
৪৯. জিকিরের মত নেয়ামত আকর্ষণকারী আজাব দূরকারী কিছুই নেই।
৫০. জিকির কারীদের সাথে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের দোয়া থাকে।
৫১. জিকিরের জলসা সমূহ জান্নাতের বাগান।
৫২. জিকিরের জলসা ফেরেশতাদের জলসা।
৫৩. আল্লাহ পাক তার জিকিরকারীদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সমাবেশে গর্ব প্রকাশ করেন।
৫৪. সর্বদা জিকিরকারী হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৫৫. যাবতীয় আমলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জিকিরের জন্যই।
৫৬. সেই আমলে সর্বোত্তম যার মধ্যে আল্লাহর স্মরণ থাকে ।
৫৭. এক দরিদ্র সাহাবী রাসূল পাক সাঃ কে বললেন, বিত্তবানেরা তাদের বিত্তের কারণে হজ্ব, যাকাত, ওমরা ও জিহাদের আমলগুলো করার সুযোগ পায়। এভাবে তারা পুন্যের দিক দিয়ে হয়ে যায় অধিক অগ্রগামী। রাসূল সাঃ বলেন, আমি তোমাদেরকে একটি সহজ আমলের কথা বলে দেই । তোমরা নামাজের পর “সুবহানাল্লাহ” ”আলহামদুলিল্লাহ” ”আল্লাহু আকবার” বেশি বেশি করে পড়ো তাহলে তোমরা অন্যজনের ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে থাকবে না ।
৫৮. জিকির অন্যান্য এবাদত পালনের সহায়ক। জিকির এবাদতে আস্থাদ আনয়ন করে। সকল এবাদতকে সহজ করে দেয়।
৫৯. জিকিরের কারণে সকল কষ্টদায়ক কাজ সহসাধ্য হয়ে যায়। সকল মুসিবত দূর হয়ে যায়।
৬০. যত জিকির করবে ততই মন থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাবে। মনে আসবে শান্তি।
৬১. হযরত ফাতেমা তুজ জোহরা রাঃ, আটাপেশা, কুয়া থেকে পানি তোলা এ সকল কষ্টকর গৃহকর্ম করতেন। তিনি রসূল পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লামের কাছে এ সকল কাজের জন্য একজন পরিচায়ক চেয়েছিলেন। রাসূল তাকে বললেন, রাতে শয্যা গ্রহণ করবে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন এই আমল খাদেম লাভ করার চেয়ে উত্তম।
৬২. পরবর্তী পৃথিবীর কল্যাণের জন্য শ্রম স্বীকারকারী সকলেই দৌড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে জিকিরকারীগণ রয়েছেন সবার সামনে।
৬৩. জিকির কারীদেরকে আল্লাহপাক সত্যবাদী বলেন। আর যাদেরকে আল্লাহপাক সত্যবাদী বলেন, মিথ্যাবাদীদের সঙ্গে কখনো তাদের হাশর হতে পারে না।
৬৪. জিকির দ্বারা জান্নাতে গৃহ নির্মাণ করা হয়। বান্দা যখন জিকির বন্ধ করে দেয় তখন ফেরেশতাদের নির্মাণ কর্ম বন্ধ হয়ে থাকে। তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে নির্মাণ কাজের খরচ এখনো এসে পৌঁছে নি। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ”সোবহানাল্লাহিল আজীম” ৭ বার পাঠ করে তার জন্য একটি সবুজ গম্বুজ তৈরি হয়ে যায়।
৬৫. জিকির দোযখের দিকের প্রাচীর। কোন খারাপ আমলের কারণে দোযখ নির্ধারিত হলেও জিকির মাঝখানে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়।
৬৬.ফেরেশতারা জিকিরকারীদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। হযরত ওমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, বান্দা যখন ”সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” বলে অথবা বলে ”আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন” তখন ফেরেশতারা বলে হে আল্লাহ এই লোকটিকে মাফ করে দাও।
৬৭.কোন পাহাড়ে বা প্রান্তরে আল্লাহর জিকির করা হলে তারা গর্ববোধ করে। এক পাড়ায় অন্য পাড়াতে দেখে বলে তোমার উপর দিয়ে কোন জিকিরকারী পথ অতিক্রম করেছে কি ? পাহাড়টি হে বললে, প্রশ্নকারী পাহাড়টি আনান্দিত হয়।
৬৮. অত্যাধিক জিকির মুনাফিকি থেকে মুক্তি প্রদায়ক। আল্লাহ পাক মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তাআলা কে তারা অল্পই স্মরণ করে । সুরা নিসা-১৪২। হযরত কাব আহবার রাদিয়াল্লাহু বলেন. যে বেশি বেশি জিকির করে সে মুনাফিকি থেকে মুক্ত।
৬৯. জিকিরের স্বতন্ত্র স্বাদ আছে. যা অন্য কোন আমলে নেই। অন্য কোন ফজিলত যদি নাও থাকতো. তবুও জিকির ওই আস্বাদের কারণে হত অনন্য।
৭০. পৃথিবী ও পরবর্তী পৃথিবী -উভয় স্থানে জিকিরকারিতে চেহারায় জ্বলজ্বল করে নূর।
৭১. যে ব্যক্তি পথে-ঘাটে ঘরে বাইরে দেশে-বিদেশে অত্যাধিক জিকির করবে। কেয়ামত দিবসের তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারী সংখ্যা হবে অনেক বেশি। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। সূরা যিলযাল-৪
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url