ঈদের দিনের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমুহ-ঈদের দিনের আমলসমূহ

ঈদ আরবি শব্দ। যার অথ ফিরে আসা। এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যে দিন মানুষ একত্র হয় ও দিনটি বারবার ফিরে আসে। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপয হলো আল্লাহতায়ালা এদিন তার বান্দাদের নিয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করেন ও বারবার তার ইহসানের দৃষ্টি দান করেন।

ঈদের দিনের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমুহ-ঈদের দিনের আমলসমূহ

যেমন রমজানে পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। সদকায়ে ফিতর, হব্জ জিয়ারত ও কোরবানির গোশতৃৃৃৃ ইত্যাদি নিয়মত তিনি বারবার ফিরিয়ে দেন। আর এ সব নিয়ামত ফিরে পেয়ে ভোগ করার জন্য অভ্যাসগতভাবেই মানুষ আনন্দ-ফুতি করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ জাহিলি যুগে নারীদের কলুষিত জীবনের কাহিনী-আরবের অন্ধকারাচ্ছন্ন জিবনের কাহিনী

ঈদের দিনের করণীয় বিষয়সমূহ 

  • মিসওয়াক করা।
  • গোসল করা।
  • নতুন কাপড় পরিধান করা উত্তম, নতুন কাপড় না থাকলে ধোয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা।
  • সুগন্ধি লাগানো।
  • ভোর সকালে বিছানা ছেড়ে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করা।
  • ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে ফেরা।
  • ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার আগে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া কিংবা অন্য কোনও মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার খেয়ে নেওয়া।
  • নিচু আওয়াজে তাকবিরে তাশরিক পড়তে পড়তে যাওয়া।
  • ঈদের নামায বড় খোলা মাঠে আদায় করা।

তবে বড় শহর কিংবা যেখানে বেশি মানুষের বসবাস সেখানে একাধিক স্থানে  ঈদের  জামাত পড়া যাবে। খোলা মাঠ হওয়াও জরুরি কিছু নয়। বড় মসজিদেও চাইলে পড়া যাবে যেমনটা বতমানে হচ্ছে। এর গুরুত্বপূণ কারণ হলো শুধু এক জায়গায় জামাত হলে বহু মানুষের ঈদের জামাত ছুটে যাবে। কারও তো বাস্তবিক কোনও অসুবিধার কারণে আবার কারও অলসতার কারণে। 

  • সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া

ঈদের বড় একটি শিক্ষা হলো এদিন সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া। কারও প্রতি মনে হিংসা-বিদ্বেষ না রাখা। পরস্পর দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে মহব্বত-ভালোবাসা বৃদ্ধি করার এটি একটি মোক্ষম সময়। কারও সঙ্গে আগে কোনও ধরণের মন কষাকষি থাকলে এদিনকে গনিমত মনে করে ভেঙে যাওয়া সম্পকে আবার জুড়ে নেওয়া।
  • আত্মীয়-স্বজনের খোজ খবর নেওয়া
ঈদের আনন্দ শুধু নিজেরা না করে আত্মীয়-স্বজনকেও এতে শরিক রাখা। আত্মীয়তা অক্ষুন্ন রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। সারা বছর এতে এুুুুুুুুটি হয়ে গেলেও  অন্তত আনন্দময় ধমীয় উৎসব পবিত্র ঈদে সবার খোজ-খবর নেওয়া । হালপুরসি করা। হাদিয়া নিয়ে যাওয়া। কোনও প্রয়োজন থাকলে তা পূণ করার চেষ্ট করা। অন্যরা আত্মীয়তার বন্ধনে ক্রটি করলেও নিজে সম্পক জুড়ে রাখা। এটাই প্রকৃতিপক্ষে আত্মীয়তা বন্ধন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন; তোমার সঙ্গে  যে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে, তুমি তার সঙ্গে তা জুড়ে রাখে, তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে প্রদান করো এবং যে তোমার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছে তুমি তাকে ক্ষশা করে দাও।
  • ঈদের চাদ দেখার পর থেকে তাকবির পাঠ করা
তাকবির পাঠ করার মাধ্যমৈ আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। তাকবীর হলো: আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার , ওয়া লিল্লাহিল হামদ। তাকবির উচ্চস্বরে পড়া। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌছা পযন্ত তাকবির পাঠ করতেন। 

    ঈদের দিনের বর্জনীয় বিষয়সমূহ 

    • অসুস্থ বিনোদন থেকে বিরত থাকা

    ঈদ আনন্দের দিন। আনন্দ-বিনোদনে ইসলামে বাধা দেয় না; বরং ‍উৎসাহ দেয়, তবে তা শরীয়াতের সীমারেখার মধ্যে হতে হবে। এদিন গান-বাজনাসহ সব ধরণের অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা একান্ত কতৃব্য। 

    আল্লাহ তায়ালা রমজান পরেও সুস্থতার সঙ্গে সারা বছর আমাদের আমল ধরে রাখার এবং ঈদের শিক্ষা নিয়ে বাকি পুরো বছর কাটানোর তাওফিক দান করুন। ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। ভেসে যাক দুঃখ-কষ্ট ও হিংসা-বিদ্বেষ।

    • ঈদের দিন রোজা না রাখা

    ঈদের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে পানারহার এবং আনন্দ করার নিদেশ- তাই এদিন রোজা রাখা হারাম। কেউ রোজার নিয়ত করে ফেললে ভেঙে ফেলা আবশ্যক, নতুব গুনাহ হবে। কেউ চাইলে ঈদের পরদিন রোজা রাখতে পারবে।

    • ঈদের নামাযের পর মুআনাকা-মুসাফাহা না করা

    ঈদের নামাযের পর অনেকে পরস্পর মুসাফাহা-মুআনাকা করতে দেখা যায়। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসাফাহা-মুআনাকাকে ঈদের গুরুত্বপূণ বিধান মনে করা মাকরূহ ও অপছন্দনীয়। ফিকহ ও ফতেয়ার গ্রহনযোগ্য গ্রন্থগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নামাযের পরে মুসাফাহার আবিষ্কারকারীরা হলো রাফেজি। মহানবী (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম সম্পকেও স্পষ্ট বলা হয়েছে. তারা ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা-মুআনাকা করতেন না। 

    মোটকথা, মুসাফাহা-মুআনাকা এ সুযোগে বের করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ি। শরীয়তে প্রথম সাক্ষাত কিংবা বিদায় দেওয়ার সময় মুসাফাহা প্রমাণিত। অথ্যাৎ প্রথমে সালাম ও তার উত্তর হবে তারপর হবে মুসাফাহা। নামাযের পর তা শরীয়তসিদ্ধ নয়। ঈদের সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলোতে মুসাফাহা-মুআনাকা অন্তভূক্ত নয়; বরং সুন্নত পরিপন্থি হওয়া স্পষ্ট। সুতরাং এ প্রথা বজৃনীয়।

    তবে মুফতি কিফায়াতুল্লাহ (রহ.) বলেন ,ঈদের আবশ্যকীয় কোনও আমল মনে না করে শুধু প্রথা হিসেবে মুসাফাহা ও কোলাকুলি করলৈ কোনও অসুবিধা নেই।

    • ঈদগাহে কোন সুন্নত বা নফল নামায না পড়া

    ঈদ আনন্দ-ফূতির দিন। তাইতো এদিন ফজর নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পর থেকে ঈদের নামায পড়া পযন্ত মসজিদে,ঘরে কিংবা ঈদগাহের যেকোনও স্থানে নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে নামাযের পর থেকে এদিন দুপর পযন্ত শুধু ঈদগাহ ও মসজিদে নফল মাকরূহ। তবে নামাযের পর ঘরে নফল পড়া যাবে।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url