টাইফয়েড রোগ কি-কিভাবে টাইফয়েড হয়- টাইফয়েডের রোগের প্রতিকার

টাইফয়েড একটি সংক্রামক ব্যাধি যা জ্বর দিয়ে প্রকাশ পায়। টাইফয়েডের নানা লক্ষন ও কারন রয়েছে। টাইফয়েড পানিবাহিত  ও টাইফয়েড একটি  ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। টাইফয়েড শুধু ছোট বাচ্চাদের নয়, টাইফয়েড বৃদ্ধদেরও হয়ে থাকে। 

পোস্ট সূচিপত্র

    টাইফয়েড কি ?

    সারা বিশ্বে প্রতি বছর টাইফয়েড জ্বরে প্রায় ২ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৪ জন মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার ১৯ জন টাইফয়েডে ভোগে। ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা টাইফয়েড আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি এবং  এর ৮৫% শিশুই আক্রান্ত হয় ২-৩ বছরের মধ্যে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া এ রোগের কারণ । 

    সংক্রমণের উৎস

    সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে বাস করে। রোগীর মলের মাধ্যমে এ ব্যাকটেরিয়া পানি অথবা খাবারে মিশ্রিত হয়। এই পানি বা খাবার খেলে টাইফয়েড মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এ রোগ পানির মাধ্যমে প্রধানত ছড়ায় বলে টাইফয়েডকে পানিবাহিত রোগ বলে।

    টাইফয়েড হওয়ার ঝুকি যাদের বেশি

    • আমাদের মত দেশে শিশুরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। 
    • স্কুলগামি   শিশুরা এবং স্কুলে পড়ে এমন শিশুর ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
    • বয়স্করাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
    • যারা নিয়মিত ভ্রমন করে তাদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

    টাইফয়েডের কারন

    • বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে  প্রধানত টাইফয়েড ছড়ায়। মাছি টাইফয়েডের জীবাণু বহন করে খাবারকে দূষিত করে।
    • যারা এই জীবাণু বহন করে তাদের হাতে তৈরী খাবার খেলে অথবা তাদের হাতে তৈরি খাবার খেলে অথবা তাদের হাতে খাবার পরিবেশন করলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
    • পানি এ রোগের  একটি প্রধান কারণ।
    • সঠিক মল নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব। টাইফয়েড রোগীর মল থেকে পানি ও খাবার দূষিত হতে পারে।
    • টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগী যদি বাথরুম ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে থাকে তাহলে পানি ও খাবার দূষিত হতে পারে। যদি কোন সুস্থ মানুষ এই পানি বা খাবার খায় তবে সে সহজে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়।

    টাইফয়েডের লক্ষণ

    • শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়  প্রায় ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফা. পর্যন্ত উঠে েএবং ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত থাকে। তাপমাত্রা সাধারণত রাতের দিকে বাড়ে এবং দিনে কমে যায়।
    • ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথা ব্যাথা,পিঠে ব্যাথা, ক্ষুধামান্দা । 
    • ত্বকে র‌্যাশ, ঠোট মুখ শুকিয়ে যাওয়া।

    টাইফয়েডের জটিলতা

    জ্বর যদি অনেক দিন স্থায়ী হয় তবে অনেক গুরুত্বর সমস্যা হতে পারে ঃ
    পেটে ছিদ্র হয়ে যাওয়া, পেটে রক্তক্ষরণ ।
    এছাড়া অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমণঃ
    • হৃদপেশীর সংক্রমণ
    • কিডনীর সংক্রমণ
    • নিউমোনিয়া
    • হেপাটোমেগালী
    • লিউকোপেনিয়া

    টাইফয়েডের চিকিৎসাজনিত সমস্যা

    • টাইফয়েডর চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক গওলো রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্চে।
    •  এর ফলে চিকিৎসা খরচ হত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, এখন খরচ হয় প্রায় ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
    • টাইফয়েডে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

    টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়

    ব্যাক্তিগত প্রতিরোধঃ
    • নিরাপদ স্থানে খাবার গ্রহন
    • দূষিত খাবার এবং পানি পরিহার করা।
    • পানি ফুটিয়ে খাওয়া
    • খাবার ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া
    • স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা করা
    • ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা
    • জনগনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্দি করা
    • কাচা শাক সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকা
    • ভ্যাকসিন নিয়ে প্রতিরোধ
    • প্রতিরোধক হিসেবে টাইফয়েডের ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা খুব সহেজেই দীর্ঘমেয়াদী রোগভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে পারি।
    • এখন টাইফয়েডের ভ্যকসিন বাংলাদেশেিই প্রস্তত সম্ভব হচ্ছে। ইনসেপ্টা তৈরি করছে টাইফয়েডের ভ্যাকসিন ভ্যাক্সফয়েড।
    ডোজঃ একটি মাত্র ০.৫ মি.লি ভ্যাক্সফয়েড ভ্যাকসিন মাংসপেশীতে প্রয়োগের মাধ্যমে টাইফয়েড থেকে ৩ বছরের জন্য সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই ডোজটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২ বছর এর অধিক বয়সের শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। এর পরে প্রতি ৩ বছর পর পর বুস্টার ডোজ দিতে হবে।

    কাদের ভ্যাক্সফয়েড নেওয়া জরুরি

    • প্রতিরোধক হিসেবে ২ বছর বয়স থেকে সকলের জন্য।
    • টাইফয়েড জ্বর থেকে সুস্থ হবার পর যেন পুনরায় আক্রান্ত না হয়
    • ভ্রমণকারীদের জীবাণূ বহনকারীর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি 
    • ল্যাবরেটরি কর্মী যারা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url