মাহে রমযানের ফযিলত ও তাৎপর্য-রোযাদারদের আল্লাহ প্রদত্ত পুরস্কার

প্রত্যেক নেক আমলের বিভিন্ন ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে। যা দ্বারা মহান রাব্বুল আলামীন আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি একবারেই স্বতন্ত্র। কারণ রোজার বহুবিধ প্রতিদান ছাড়াও এ বিষয়ে একটি অতুলনীয় ঘোষনা রয়েছে।

মাহে রমযানের ফযিলত ও তাৎপর্য-রোযাদারদের আল্লাহ প্রদত্ত পুরস্কার

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন-মানুষের প্রত্যেকটি আমলকে বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকী (সওয়াব) ১০ গুন থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতালা এরশাদ করেন: কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ রোজা আমার জন্য সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজে প্রদান করব। সহীহ বুখারি, হাদিস ১৮৯৪; মুসলিম হাদিস ১১৫১/১৬৪

আরও পড়ুনঃ দুশ্চিন্তা ও ঋন থেকে মুক্তির উপায় ও আমল জেনে নিন।

পোস্ট সূচিপত্র

রোযার ফযিলত ও তাৎপর্য

মাহে রমজান আরবি বারোটি মাসের মধ্যে নবম ও ইবাদত ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ মাস। আল্লাহ তায়ালা এই মাসকে মানবজাতির গুনাহ মাফের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মাস রমজান। এ মাস তাই সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই আন্তরিকভাবে কামনা করে এ মাসে ইবাদত বন্দিগীর মাধ্যেমে কাটাতে।

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি বিধানের একটি হলো রোজা। তবে এই বিধানটি কেবল আমাদের জন্য নয় বরং আমাদের পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের উম্মতের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেন -

অর্থাৎ  ”হে বিশ্বাসীগণ রোজা যে রূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর আবশ্যিক ছিল তেমনি তোমাদের উপর আবশ্যিক করা হলো। হয়তো তোমরা সাবধানে ও আত্মসংযামী হবে”।  সূরা বাকারা ১৮৩

সূরা বাকারায় মহান আল্লাহ আরও বলেছেন,-  রমজান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে যা মানবজাতির জন্য দিশারী এবং পথ নির্দেশক, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসে যে কোন স্থানে উপস্থিত থাকবে সে যেন রোজা রাখে । সূরা বাকারা ১৮৫

আরও পড়ুন ঃ দোয়া কবুলের আমল-দোয়া কবুলের সময় ও নেক আমল।

রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন,- রোজা একান্তই আমার জন্য আর আমি এর প্রতিদান দেব। পরকালে যে তিনি কি পুরস্কার দেবেন তার কিছুটা ইঙ্গিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমাদের দিয়েছেন,- সেই থেকে রোজাদার নিশ্চয়ই পরিতৃপ্ত হওয়ার আনন্দ পাবেন। রাসুল সালাম বলেছেন,-

রমজান এমন একটি মাস যে মাসে আল্লাহ তোমাদের জন্য রোজা রাখাকে ফরজ করে দিয়েছে। অতএব, যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে আল্লাহর নৈকট্য লাভে আশায় রোজা রাখবে তার জন্য রোজার সেই দিনটি হবে এমন যেন সবেমাত্র সে মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে অর্থাৎ রোজাদার সকল গুনাহ থেকে মুক্তি পেয়ে নিষ্পাপ শিশুটির মতো হয়ে যাবে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম,- পবিত্র রমজানের ফজিলত গুরুত্ব ও মহাত্মা বন্দনা করতে গিয়ে বলেছেন পবিত্র রমজান মাস দয়া কল্যান ও ক্ষমার মাস। এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস। এই মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন। রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত। এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান।

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর দস্তরখান আমাদের জন্য উন্মুক্ত। তিনি তোমাদেরকে এ মাসে সম্মানিত করেছেন। এই মাসে তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস মহান আল্লাহর গুনোগান ও জিকিরের সমতুল্য। এ মাসে তোমাদের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য। এ মাসে তোমাদের সৎ কাজ এবং প্রার্থনা ও দোয়া গুলো কবুল করা হবে।

তাই মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক ও পবিত্র চিত্তে প্রার্থনা করো যে, তিনি যেন তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কুরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করেন। গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হও। তওবা করো এবং নামাজের সময় মোনাজাতের জন্য হাত উপরে তোলো। কারণ নামাযের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়।

এ সময় মহান আল্লাহ তার বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। এ সময় কেউ তার কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন। কেউ তাকে ডাকলে তিনি জবাব দেন। কেউ  কাকুতি-মিনতি করলে তার কাকুতি-মিনতি গ্রহন করেন। কেননা পবিত্র কুরআনে সূরা গাফির  ৫৯ নম্বর আয়াতে তিনি নিজে বলেছেন,-

”তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব নিশ্চয় যারা আমার ইবাদাত হতে বিমুখ তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”

বিশ্বনবী সা. রমজানের গুরুত্ব ও মারাত্ম্য সম্পর্কে আরো বলেছেন,- হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের আত্মাকে নিজ কামনা-বাসনা দাসে পরিণত করেছ, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে একে মুক্ত কর। তোমাদের পিঠ গুনাহের বারে বারাকান্ত হয়ে আছে। তাই সেজদাগুলোকে দীর্ঘায়িত করে পিঠকে হালকা করো।

জেনে রাখ, মহান আল্লাহ সম্মানের শপথ করে বলেছেন,- রমজান মাস নামাজ আদায়কারী ও সেজদারীকে শাস্তি দিবেন না এবং কেয়ামতের দিন তাদেরকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন এবং আল্লাহ তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।

সাহাবীরা আরোজ করলেন, অন্যদেরকে ইফতারি করানোর সামর্থ্য আমাদের সবার নেই তিনি বললেন রোজাদারদের ইফতারি দেওয়ার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে দূরে রাখো আর সেই ইফতারে যদি একটি খুরমার অর্ধেক বা এমনকি সামান্য পানি হয়ে থাকে

রোজা কিয়ামতের দিবস সুপারিশ করবে

হাদীস শরীফে এসেছে রোজা ও কুরআন মাজীদ কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌন  সঙ্গম থেকে পূর্ণ বিরতি রেখেছি। কাজেই তাকে ক্ষমা করে দিন, পুরস্কৃত করুন এবং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন অথবা তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।  

রোজা জাহান্নামের আগুনের ডাল ও দুর্গ

হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত , রাসুল সা. বলেছেন.- আমাদের মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই তার পুরষ্কার দিব। 

উসমান ইবনে আবিল আস রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি যে,  রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের ( শত্রর আঘাত হতে রক্ষাকারী ) ঢালের মত। 

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন.- রোযা হল ( জাহান্নাম থেকে পারত্রান লাভের) ঢাল এবং সুরক্ষিত দুর্গ। 

রোজাদার জান্নাতের রাইয়ান নামক শাহী তরুণ দিয়ে প্রবেশ করবে

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, -জান্নাতে  রাইয়ান নামক একটি  শাহী তোরণ আছে যা দিয়ে একমাত্র রোজাদারগণই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই  তোরণ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না । সহীহ বুখারী  ১/২৫৪: সহীহ মুসলিম, হাদিস  ১১৫২

রোজাদারের জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে

হাদীস শরীফে এসেছে- ”যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানে রোজা রাখে, আল্লাহ পাক তার জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।”  সহীহ বুখারি ,হাদিস ১৯০১

রোজাদারের দোয়া কবুল হয়

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- ’তিন ব্যক্তি দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না: রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময় দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া ও মজলুমের দোয়া। এই তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজার সামনে খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহতালা এরশাদ করেন,- আমার ইজ্জত ও মহাসম্মানের কসম! বিলম্ব হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো। সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস ৩৪২৮

রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ

হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে;- রোজাদার ব্যক্তির আনন্দ উপভোগের দুটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারের সময় অপরটি স্বীয় প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময় ।- সহীহ বুখারী,হাদিস ১৯৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১/১৬৪

রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুঘ্রাণযুক্ত

রোজার কারণে মুখে যে দুর্গন্ধ হয় আল্লাহ তা'আলা তাঁর মূল্যায়ন করেছেন কল্পনাতীতভাবে। অনাহার কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধ তার কাছে মিশকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ বলে জানিয়েছেন। আর ধন্য করেছেন তার প্রেমে মত্ত রোজাদারদের। নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন- নিশ্চয় রোজাদারের মুখের (পানাহার বর্জনজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশুকের সুগন্ধি অপেক্ষা উত্তম।- সহীহ বুখারী হাদিস ১৯০৪

এখানে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত হাদিসের দুর্গন্ধ দ্বারা ঐ গন্ধকে বুঝানো হয়েছে যা পানাহার বর্জনের কারণে পেটের ভিতর থেকে উত্থিত হয়।  দাত ও মুখ অপরিষ্কারের কারণে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় তা এখানে উদ্দেশ্য নয় তাই রোজাদার ব্যক্তি অবশ্যই পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url