বেশি চিনি খাওয়া বাদ দেওয়ার উপায়- বেশি চিনি খাওয়া;র অপকারিতা

খাওয়ার শেষে ডেজার্ট কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার কার না ভালো লাগে ? অথচ চিনিপূর্ণ যেকোনো খাবার যে স্বাস্থ্যের জন্য মহা হুমকি তা আমরা সবাই জানি। আবার মিষ্টি খাবারের প্রতি আমাদের রয়েছে নেশা। তাই সবাইর উচিত চিনি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া কিংবা এ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা,

বেশি চিনি খাওয়া বাদ দেওয়ার উপায়- বেশি চিনি খাওয়া;র অপকারিতা

তেমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে যাদের এসব মিষ্টি খাবারের প্রতি খুব বেশি আকর্ষণ রয়েছে তাদের এই বদঅভ্যাস ত্যাগের উপায় বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পোস্ট সূচিপত্র

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার  মোহ থেকে বাচতে চাইলে নিমোক্ত নিয়ম অনুসরণ করুন।

মানবদেহের জন্য চিনি প্রয়োজন হলেও অতিরিক্ত গ্রহন করলে তা ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায়। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা যায়।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, পুরুষদের প্রতিদিন ৯ চামচ ও মহিলাদের প্রতিদিন ৬ চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। দিনে যত ক্যালোরি শরীরে যায়, তার থেকে ১০-১৫ শতাংশের কম আসা উচিত চিনি থেকে। 
  • শিল্পকারখানায় রিফাইনিং পদ্ধতিতে আখের রস থেকে চিনি তৈরি করার সময় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম ও অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদান দূর করে অপ্রাকৃতিক উপাদানে পরিণত করে। ফলে অতিরিক্ত চিনি খেলে চিনির বিষক্রিয়ায় শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
  • অতিরিক্ত চিনি সেবনের কারণে আমাদের শরীরে পুষ্টি ও প্রোটিনের অভাব হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত চিনি সেবনে মস্তিষ্কের  প্রোটিন ও পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যে কারনে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন এবং কোষ বৃদ্ধি বন্ধ হযে যায়, মস্তিষ্কের উন্নতি হয় না। 
  • মানুষের মস্তিষ্কে থাকা অসংখ্যা নিউরনের পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়াকে বলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি । যখন অতিরিক্ত চিনি বা ফ্রকটোজজাতীয় খাবার খাওয়া হয়, তখন মস্তিষ্কে সেই নিউরনের পুনর্বিন্যাসও ইঙ্গিত দেয় বেশি বেশি মিষ্টি বা চিনি খেতে । ফলে আস্তে আস্তে িএটি একটি এডিকশন তৈরি করে। 
  • যেহেতু চিনি স্বাদ বাড়ানোর কাজটি করে, তাই ব্রেইনে প্রি প্রন্টাল কর্টেক্সে ইনহিবিটারী নিউরন সিদ্ধান্ত নেয় ডায়েটে বা ব্যায়াম না করে উল্টো বেশি বেশি মিষ্টি খাওয়ার। ফলে দেহে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • চিনি ব্রেইনে ফ্রি রেডিক্যাল গঠন করে । যেটি মনোযোগ ও শেখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়। স্মৃতিশক্তি খারাপ করা সহ মস্তিষ্কের ঘনত্বের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত চিনি খেলে মেমরি রিসেপ্টরগুলোও ব্লক করে দেয়। 
  • এছাড়া অতিরিক্ত চিনি খাওয়া মেজাজেরও পরিবর্তন ঘটায়। ব্রেইন ডেমেজ, মাইগ্রেন,মস্তিষ্কের নিউরন, কোষ এবং উন্নতি বন্ধ করা সহ বিভিন্নভাবে ক্ষতি করছে ।
  • অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে ব্রেইন আয়তনে সংকুচিত হয়ে যায় এবং স্মৃতিশক্তি প্রভাবিত করে। 
  • অতিরিক্ত চিনি বয়ে আনতে পারে একাধিক শারীরিক সমস্যা। বাড়তে পারে ওজন। অতিরিক্ত চিনি খেলে, বিশেষ করে চিনিযুক্ত পানীয় থেকে ওজন বাড়ার ঝুকি থাকে।
  • অতিরিক্ত চিনি বয়ে আনতে পারে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। বেশি চিনি খাওয়া, হৃদরোগের ঝুকির কারণগুলি যেমন- স্থুলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রদাহ বৃদ্ধি করে। 
  • উচ্চ চিনি যুক্ত ডায়েটে হৃদরোগ থেকে মৃত্যুর ঝুকি থাকে।
  • অত্যাধিক চিনি স্থুলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং প্রদাহ হতে পারে, এগুলো সবই ক্যানসারের ঝুকির কারণ।
  • পুরুষদের খাদ্যভাসে চিনির পরিমাণ বেশি হলে কমতে পারে শুক্রাণুর মান। তাই অতিরিক্ত চিনি খেলে ধীরে ধীরে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার মোহ থেকে বাচতে  চাইলে নিম্মক্ত নিয়ম অনুসরণ করুন।

চিনির মোহ থেকে বাচতে চাইলে বিকল্প পথ বেচে নিতে হবে। সাদ চিনি খাওয়া একেবারেই বাদ দিতে হবে। লাল চিনি সাদা চিনি থেকে কম ক্ষতিকর। এছাড়া মিষ্টি ফল, ফলের সালাদ বা কাস্টার্ড ভালো সমাধান। খেজুর, মধু, গুড়, কিসমিস খেয়েও মিষ্টির মোহ কমাতে পারেন। তাছাড়া নিমোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করেও ভালো ফল পেতে পারেন। 

পানি

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বেশি পানি খেলে মিষ্টি খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এমনিতেই পর্যাপ্ত পানি খাওয়া অতি জরুরি। এ ছাড়া মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা হলেই আপনি পানি খাবেন বেশি করে। এতে করে আর মিষ্টি খেতে মন চাইবে না।

প্রাকৃতিক মিষ্টি

সাধারণ চিনির চেয়ে প্রকৃতি থেকে পাওয়া যেকোনো চিনি থেকে ৩০০ গুন বেশি মিষ্টি স্বাদ মেলে। ফল বা অন্যান্য মিষ্টি প্রাকৃতিক খাবারেই রয়েছে এই চিনি। কাজেই সেগুলো খান। এই চিনি রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বাড়ায় না।

সবুজ খাবার

যেকোনো সবুজ খাবারকে ‘হ্যা’ বলুন। যখনই চিনিপূর্ণ মিষ্টি খাইতে মন চাইবে তখনই চোখ বন্ধ করে সবুজ খাবারের কথা চিন্তা করুন। এভাবেই চিনির আকর্ষন চলে যাবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খেতে মন চাইলে একবাটি সবজি নিয়ে বসে পড়ুন।

সুখের হরমোন

চিনি খেলে কিছুটা সুখানুভুতি আসে। সেখানেই তৃপ্তি। দেহ-মনে সুখানুভূতি সৃষ্টি করে সেরোটনিন হরমোন। কেবল যে চিনিই এ কাজটি করে তা নয়। অআপনি খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদির মাধ্যেমেও দেহে সেরোটানিন হরমোনের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। তখন মিষ্টি খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে আসবে।

সামুদ্রিক খাবার

দেহে  খনিজের ঘাটতি যথাযথভাবে পূরণ হলে চিনির প্রতি আকর্ষণ কমবে। গবেষকরা বলেন, সামুদ্রিক খাবার খেলে চিনির প্রয়োজন অনুভূত হবে না। 

প্রক্রিয়াজাত খাবারকে ‘না’

এসব খাবার ত্যাগ করতে হবে। কৃত্রিম চিনি যেখানানে রয়েছে সেসব খাবার মস্তিষ্কের ‘নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেন্স’ নামের অঞ্চলকে উত্তেজিত করে। বলা হয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার খুব সহজেই মস্তিষ্কে প্রভাবিত করে। তাই এটা থেকে বাচতে েএসব খাবার ত্যাগ করতে হবে।

মেডিটেশন

এ কাজটি দেহ-মনের জন্যেই খুবই ভালো। এমনকি চিনির প্রতি অতি আগ্রহ থেকেও বাচতে পারে আপনাকে। নিউরোবিজ্ঞানীদের মতে, মেডিটেশন স্ট্রেস নিয়ন্ত্রন করে। ফলে চিনির নেশা গ্রাস করে না আপনাকে।

ফার্মেন্টেড খাবার

প্রাচীন চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতি বলে, আচারের মতো বানানো ফার্মেন্টেড খাবার আছে প্রোবায়োটিক । এগুলো দেহে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। সেই সাথে এই ক্ষতিকর খাবারের প্রতি আগ্রহও কমিয়ে দেয়। তাই আচার খেতে পারেন। যেকোনো খাবারের স্বাদও বাড়ায় তা। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url