দোয়া কবুলের আমল-দোয়া কবুলের সময়-নেক আমল
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তাহালা মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টির চেয়ে আলাদা করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তার দুনিয়ার কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবিদিহি করতে হবে এবং প্রত্যেকের নেক আমলের উপর ভিত্তি করে পুরস্কার প্রদান করো হবে। যার আমল যত বেশি তার হিসাব তত কম। আল্লাহ তাহালা তার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদা সা. দ্বারা আমাদের কাছে অনেক দোয়া পাঠিয়েছেন।
যা আমল করার মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন সুন্দরভাবে সাজাতে পারি। আল্লাহ তাহালা দোয়া কবুলের জন্য কিছু সময় উল্লেখ করেছেন, যে সময়গুলোতে আল্লাহ তাহালা তার বান্দাদের দোয়া কবুল করে থাকেন। আজকে টপিক্স জুড়ে থাকবে দোয়া কবুলের সময়গুলো ও কিছু নেক আমল।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
- দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারি রোগ থেকে বাচার দোয়া
- দুধরনের পাত্রে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
- যে সময়গুলোতে মানুষের দোয়া কবুল হয়
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশের দোয়া
- শেষ রাতের যে কোন সময়ের দোয়া
- আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া
- জুমার দিনের দোয়া
- জমজমের পানি পান করার সময়ের দোয়া
- সেজদার সময়ের দোয়া
- রাতের বেলায় ঘুম থেকে জাগার পরের দোয়া
- ফরজ নামাযের পর দোয়া
- বৃষ্টি ও আজানের সময়কাল দোয়া
দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারি রোগ থেকে বাচার দোয়া
বিভিন্ন প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দূরারোগ্য ব্যাধি কিংবা মহামারী থেকে একমাত্র আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াটাই সর্বোত্তম পন্থ। এমন পরিস্থিতিতে সব সময় এ দোয়াটি পড়ার অভ্যাস করা সমীচীন, যা রাসূল (সাঃ) শিখিয়ে দিয়েছেন।
বাংলা উচ্চারণ ঃ
”আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম” (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি)
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি ( যে গুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।
তিরমিজি শরীফে এসেছে , আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বাংলা উচ্চারণঃ ’আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ামি, ওয়াল আদওয়ামি”
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই ( সুনানে তিরমিজি)
দুধরনের পাত্রে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উনার উম্মতদের জন্য সকল দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কিভাবে নামায আদায় করতে হবে, কিভাবে রোজা পালণ করতে হবে, কিভাবে যাকাত আদায় করতে হবে, কিংবা কিভাবে সারাজীবন সৎ পথে বা ন্যায়ের পথে থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা যায়।
মহানবী (সাঃ) সকল দিক নির্দেশনার মধ্যে কি ধরণের পাত্রে খাবার খেতে হবে তারও একটা নির্দেশনা দিয়েছেন । এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস এখান বর্ণনা করা হলো।
বাংলা অর্থঃ হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সোনা ও রুপার পাত্রে পান বা আহার করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন এবং চিকন ও মোটা রেশম কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।
(বুখারি ৫৪২৬,৫৬৩২,৫৬৩৩,৫৮৩১,৫৮৩৭,মুসলিম ২০৬৭, তিরমিযি ১৮৭৮, নাসায়ি ৫৩০১, আবু দাউদ ৩৭২৩)
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মহান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠাকালে বহু বিপদের সম্মুখিন হয়েছেন। বেশ কয়েকবার কাফেরদের বিরুদ্দে লড়াই করতে হয়েছে। অনেক জুলুম,অন্যায় ও অত্যাচার পাড়ি দিয়ে তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিপদের সময় মহানবী (সা) যে তিনটি দোয়া পাঠ করতেন সেই দোয়াগুলো উম্মতদের ও পাঠ করতে বলেছেন।
দোয়া তিনটি হলো-
- সা’দ ইবনে আবি ওক্কাস রা. বলেন নবীজি সা. দুঃখ-কষ্টের সময় বলতেন: “লা -ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন” ( দোয়া ইউনূস)
বাংলা অর্থঃ একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্গনকারী ।
( তিরমিযি: ৩৫০০)
- আসমা বিনতে ওমাইব রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন। নবীজি বললেন, দোয়াটি হচ্ছে; “আল্লাহু রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান”
( আবু দাউদ; ১৫২৫)
- আনাস রা. হতে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেন: “আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”
যে সময়গুলোতে মানুষের দোয়া কবুল হয়
আল্লাহু তায়ালা পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। মানুষের উপর তার দয়ার কোন শেষ নেই। আল্লাহ তায়ালার অসংখ্যা নেয়ামত ও দয়ার অন্যতম একটি দয়া হলো-মানুষের পাপমুক্তির জন্য দোয়া কবুল করা। আল্লাহ বান্দার দোয়া কবূল করার জন্য নানা উসিলা খোজেন। তাই তিনি দোয়া কবুলের জন্য দিনরাতের মাঝে এমন অনেক সময় ও মুহুর্ত রেখেছেন, যে সময় দোয়া করলে তা কবুল হয় বলে হাদিসে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে। দোয় কবুলের সেই মুহুর্তগুলো হলো--
রাতের শেষ তৃতীয়াংশের দোয়াঃ
প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই দোয়া কবুল করা হয়। শুধু সবে বরাত ও শবে কদর রাতে নয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, হাদিসে ইরশাদ করেছে হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহতায়ালা সবচেয়ে নিচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন. কে আমাকে ডাকছো , আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আামর কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো- ( সহিহ মুসলিম: ১২৬৩ )
শেষ রাতের যে কোন সময়ের দোয়া ঃ
সাহাবী হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সা. ইরশাদ করেন, ‘রাতে এমন একটি সময় আছে, যে সময়টাতে কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে এ পৃথিবী কিংবা পরকালের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল, আর তাকে তা দেওয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে।
( মুসলিম: ১২৫৯)
আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া
হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ সা. বলেন ” আজান ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ ( তিরমিযি: ১৯৬)
জুমার দিনের দোয়া ঃ
জুমার দিন এমন অসাধারণ একটি নেয়ামতের সময় আছে, যে সময়টাতে দোয়া কবুল হওয়ার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সা. থেকে এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, হযরত রাসূল্লাহ সা. থেকে এসেছে। হযরত মুহাম্মদ সা. একদিন জুমার দিন নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, “ জৃমার দিনে একটি সময় আছে, যে সময়টা কোনো মুসলিম নামায আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন এবং তিনি (রাসুল সা. ) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।; ( সহিহ বোখারি: ৫৯২১)
জমজমের পানি পান করার সময়ের দোয়া ঃ
হযরত মুহাম্মদ সা. বলেন, জমজম পানি যে নিয়তে পান করা হবে, তা কবুল হবে। - ( ইবনে মাজা: ৩০৫৩)
সেজদার সময়ের দোয়া ঃ
হযরত রাসুল্লাহ সা. বলেন, যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেযে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সেজদার সময়। সুতরাং, তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও। ( সহিহ মুসলিম, ৭৪৪)
রাতের বেলায় ঘুম থেকে জাগার পরের দোয়া ঃ
সাহাবি হযরত উবাদা বিন সামিত রা. থেকে বর্ণিত , হযরত রাসুল্লাহ সা. বলেছেন, যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু” লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির” , আলাহামদুল্লিাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর” ্ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” এবং এরপর বলে, আল্লাহুম মাগফিরলি ( আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) অথবা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করে, তাহলে তার দোয়া কবুল করা হবে এবং সে যদি অজু করে নামায আদায় করে , তাহলে তার নামায কবুল করা হবে। ( সহিহ বোখারি: ১০৮৬)
ফরজ নামাযের পর দোয়া ঃ
সাহাবি হযরত আবু উমারা রা. থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল্লাহু সা. কে জিজ্ঞেস করা হলো, “ ইয়া রাসুলুল্লাহ ! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয় ? তিনি বললেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরয নামাযের পরে”।
( তিরমিযি: ৩৪২১)
বৃষ্টি ও আজানের সময়কাল দোয়া ঃ
হযরত রাসূলুল্লাহু সা. বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া। (আবু দাউদ: ২১৭৮)
এছাড়াও দোয়া কবুলের আরো অনেক সময় আছে , সে সময়ও আল্লাহ তাহালা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন , যা বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
- কদরের রাতের দোয়া,
- নির্যাতিত ব্যাক্তির দোয়া,
- মুসাফিরের দোয়া,
- সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া
- রোজাদার ব্যাক্তির দোয়া,
- অনুপুস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য শত্রর মুখোমুখী দোয়া
- আরাফার দোয়া (হজ্বের দিন)
- অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার পর সেই ব্যাক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে
বলে বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন সুত্রে বর্ণনা করা হয়েছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url