উত্তম মৃত্যুর আলামতসমূহ-শহীদি মৃত্যু সমূহ-সৌভাগ্যবান মৃত্যু সমুহ
মানুষের শেষ পরিণতি ভালো-মন্দ হওয়ার ব্যাপারে শরীআতের প্রণেতা কিছু নিদর্শন দিযেছেন। কারো মধ্যে এসব ভালো আলামত পাওয়া গেলে তার উত্তম পরিণতির সুসংবাদ, তবে এসব কিছু মহান আল্লাহ তাহালার ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।
উত্তম মৃত্যুর ৭টি আলামত
১. যার সর্বশেষ বাক্য ‘কালেমায় শাহাদাত’ হবে তার ব্যাপারে হাদীসে উত্তম পরিণতির শুভসংবাদ এসেছে, মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,-
”যার সর্বশেষ বাক্য হবে ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(মুসতাদরক হাকিম, হাদীস নং ১২৯৯) তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ অবস্থায় বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কিছু কথা শুনেছি যা এতদিন গোপন রেখেছিলাম। তাকে বলতে শুনেছি,
যার সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
( মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২২০৩৪, আল্লামা শুয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন)
২. মৃত্যুর সময় ললাট ঘর্মাক্ত হওয়া মুমিনের আলামত। আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ (রহ). তার পিতা বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,- মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলতে শুনেছি, ‘মুমিন ব্যক্তি ঘর্মাক্ত ললাটের সাথে মৃত্যুবরণ করে থাকে” ।
( সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ১৮২৮, আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
৩. জুমু’আর দিনে বা রাতে মারা গেলে। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত , নবী কারীস সা. বলেছেন, “কোনো মুমিন জুমু’আর দিন বা রাত মারা যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা বা পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন।
আরও পড়ুন ঃ দোয়া কবুলের আমল-দোয়া কবুলের সময়-নেক আমল।
৪. যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া । আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযিক দেওয়া হয়। আল্লাহ তাদেরকে যে অনুগ্রহ করেছেন’ তাতে তারা খুশি।
আর তারা উৎফুল্ল হয়। পরবর্তীদের থেকে যারা এখোনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি তাদের বিষয়ে। এজন্য যে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নি’আমত ও অনুগ্রহ লাভে খুশি হয়। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।
( সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১)
মিকদাম ইবনে মা’দীকাবির (রা.) আনহু হতে বর্ণিত,- নবী কারীম (সা.) বলেন, শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ৬টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তার দেহের রক্তের প্রথম ফোটাটি বের হতেই তনি তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানা হয়্। কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়;
কিয়ামতের ভয়ংকর ত্রাস হতে সে নিরাপদ থাকবে; তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে; আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফা’আতের করার অনুমতি দেওয়া হবে। ( ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৭৯৯, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযী হাদীস নং ১৬৬৩)
৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে গাজী হয়ে ফিরে আসার পর মারা গেলে, প্লেগ রোগে মারা গেলে, পেটের পীড়ায় ও পানিতে ডুবে ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে এবং গর্ভাবস্থায় মারা যাওয়া শহীদ এবং মুমিনের তা শুভ লক্ষণ। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনে, রাসুল (সা.) বললেন, “তোমরা তোমাদের মধ্যেকার কাদের কে শহীদ বলে গণ্য কর ?তারা বললেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় সেই তো শহীদ।
তিনি বললেন, তাহলে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে। তখন তারা বললেন, তা হলে তারা কারা ইয়া রাসূল আল্লাহ ? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ জিাহাদের ময়দানে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে গিযে মারা যায় সেও শহীদ। যে ব্যাক্তি প্লেগে মারা যায় সেও শহীদ, যে ব্যাক্তি উদারাময়ে মারা যযায় সেও শহীদ। ইবনে মিকসাম বলেন, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদিসের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন এবং পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এমন ব্যাক্তিও শহীদ।
( সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ১৯১৫)
জাবির ইবনে আতীত রা. আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল্লাহ ইবন সাবিত রা. আনহুর রোগের খোজ-খোবর নেওয়ার জন্য আসেন। এ সময় তিনি তাকে বেহুশ অবস্থায় পান। তখন রাসূল (সা.) তাকে জোরে=জোরে ডাকেন, কিন্ত তিনি কোনো জবাব দেন নি। তখন রাসূল সা. “ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন” পাঠ করেন এবং বলেন, হে আবু রাবী! আমি তোমার ব্যাপারে পরাস্ত হয়েছি। এ কথা শুনে মাহিলারা চিৎকার দিয়ে কাদা শুরু করে । তখন ইবন আতীক রা. আনহু তাদের শান্ত হতে বলেন।
এমতাবস্তায় রাসূল্লাহ সা. বলেন, তাদের ছেড়ে দাও ( অর্থ্যাৎ কাদতে দাও) অবশ্য যখন ওয়াজিব হবে, তখন যেন কোনো ক্রন্দনকারী আর না কাদে। তখন তারা জিজ্ঞাস করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ওয়াজিব হওয়ার অর্থ কি ? তিনি বলেন , মৃত্যু”।
(বর্ণনাকারী বলেন) তখন আবদুল্লাহ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহ আনহুর কন্যা বলেন, আল্রাহর শপথ! আমার তো এরুপ ধারনা ছিল যে, তুমি শহিদ হবে। কেননা, তুমি যুদ্ধের জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিলে। একথা শুনে রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাহালা তাকে তার নিয়তে সওয়াব প্রদান করিবেন।
৬. কেউ নিজের অধিকার তথা জীবন,সম্পদ,অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই ইত্যাদির কারণে মারা গেলে শহীদ। আর শহীদ হয়ে মারা যাওয়া শুভ লক্ষণ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আনহু থেকে বর্ণিত, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি নিজের ধনসম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় , সে শহীদ”। (সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ২৪৮০,সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৪১)
ইবন উমার (রা.) আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ধনসম্পদ লুট করতে চাইলে সে তাতে বাধা দিতে গিয়ে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ হিসেবে গণ্য হয়। ( ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৮১)
৭. আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময় মারা গেলে শহীদ। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে তাতে তার এ আমলের সওয়াব জারী থাকবে। তার (শহীদ অবস্থায়) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যাক্তি ফিতনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৩)
ফুদালা ইবন উবায়দ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল্লাহ (সা.) বলেন, ”প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে তার আমলেল পরিসমাপ্তি হয়। কিন্ত যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে পাহারা দানরত অবস্থায় মারা যায় আল্লাহ তাহালা কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি করতে থাকেন এবং তাকে কবরের ফিতনা থেকে নিরাপদে রাখবেন।
(তিনি আরো বলেন) রাসূল (সা.) বলেন, প্রকৃত মুজাহিদ হলো সেই, যে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে।
(তিরমিযী, হাদীস নং ১৬২১)। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url