ইমাম আবু হানীফা'র জীবনী-প্রসিদ্ধ ইমাম আবু হানিফা

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে ইসলামের বিশ্বব্যাপী বিস্তার প্রায় সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। ভারতের সিন্ধু থেকে সুদূর ইউরোপের স্পেন, এশিয়া মাইনর এবং উত্তরা আফ্রিকা পর্যন্ত এলাকায় ইসলাম ছিল ক্ষমতাসীন শক্তি। 

ইমাম আবু হানীফা'র জীবনী-প্রসিদ্ধ ইমাম আবু হানিফা

বহুজাতি দেশ আর তাদের শিক্ষা,সংস্কৃতি, জীবনাচার, সভ্যতা প্রভুতি ইসলামের মতভেদ ও মতানৈক্যের এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিপ্রেক্ষিত রচনা করেছিল। 

আরও পড়ুন: মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর জীবনী (১)

পোস্ট সুচিপত্র

  • ইমাম আবু হানীফা রা. এর পূর্বে ফিকাহ শাস্ত্রের অবস্থা
  • ইমাম আবু হানিফা রা. এর জন্ম ও বাল্যকাল
  • ইমাম আবু হানিফা রা. এর শিক্ষাজীবন
  • ইমাম আবু হানিফা রা. এর কর্মজিবন
  • ইমাম আবু হানিফা রা. এর ফিকহ শাস্ত্র সংকলন
  • ইমাম আবু হানিফা রা. এর মৃত্যু

ইমাম আবু হানীফা রা. এর পূর্বে ফিকাহ শাস্ত্রের অবস্থা

আইনের সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা ছিল না। ইসলামের এই অবস্থায় নিষ্ঠাবান বিজ্ঞ মুসলিম মুস্তাহিদগণ ইসলামী আইনের প্রকৃত রূপ সংরক্ষণের জন্য সর্বসাধারণের মধ্যে এর সহজ উপস্থাপনার উদ্দেশ্যে ফিকহ সংকলন ও সম্পাদনায় আত্মনিয়োগ করেন।

তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র মাযহাব প্রতিষ্ঠা ও ফিকহ সম্পাদনায় নেতৃত্ব দিয়ে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন চারজন বিশ্ব বিখ্যাত মুজতাহিদ। এরা হলেন ইমাম আজম আবু হানিফা রা. , ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি, ইমান শাফি রহমাতুল্লাহি, ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি, এখানে এ চারজন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

ইমাম আবু হানিফা রা. এর জন্ম ও বাল্যকাল

ইমাম আবু হানিফা রা. এর পুরো নাম নোমান বিন সাবিত। আবু হানিফ তার কুনিয়াদ বা উপনাম। তিনি এই নামে পরিচিত। তার উপাধি ইমাম আজম। হিজরী ৮০ সালে তিনি কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানে লালিত পালিত হন। ইমাম জাফর সাদিকের তত্ত্বাবধানে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।

ইমাম আবু হানিফা রা. এর শিক্ষাজীবন 

খুব কম বয়সে ইমাম আবু হানিফ রা. অসাধারণ মেধা তীক্ষ্ণ স্মরণশক্তিতে তাফসীর, হাদিস, বালাগাত ও অন্যান্য শাস্ত্রে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন। এ সময় তিনিই রাসুল সাঃ এর খাদিম বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক রা. এর খিদমতে হাজির হন। কিন্তু বয়কনিষ্ঠতার জন্য কোন হাদিস শিখতে ব্যর্থ হন। প্রসিদ্ধ চারজন ইমামের মধ্যে কেবল ইমাম আবু হানিফা রাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম এর সাহাবীদের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন এবং তাদের অনেকের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।

১০০ হিজরীতে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি হাম্মাদ বিন সুলাইমানের কি শীক্ষালয়ে ভর্তি হন। ১১০ হিজরী পর্যন্ত এখানে গভীর নিষ্ঠার সাথে জ্ঞান অর্জন অব্যাহত রাখেন। এরপর কুফার মুহাদ্দিসদের কাছে হাদিস অধ্যায়ন সম্পন্ন করেন। কিন্তু তিনি বেশি আগ্রহ করেন ইসলামী আইনে।

ইমাম আবু হানিফা রা. এর কর্মজিবন

পড়াশুনা শেষ করে পৈত্রিক ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। গ্রামে, শহরে বিভিন্ন জায়গায় নিজের ব্যবসায়কে বিস্তৃত করেন। সমকালে ইমাম আবু হানিফা রা. ধন সম্পত্তিতে অগ্রগন্য ছিলেন। অর্থাদিক্যের কল্যাণে সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যান।

১২০ হিজরীতে ইমাম হম্মাদ রা. ইন্তেকাল করলে ব্যবসায়ের পাশাপাশি তিনি ওস্তাদের শিক্ষালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৫০ হিজরিতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইমাম আজম এই শিক্ষালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।। এ সময় অসংখ্য শিক্ষার্থী তার কাছে ফিকহ শিখেন। এদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মোহম্মদ, ইমাম যুপার প্রমুখ মনীষীগণ অন্যতম।

ইমাম আবু হানিফা রা. এর ফিকহ শাস্ত্র সংকলন

ইমাম আবু হানিফা রা. নিজের তীক্ষ্ণ মেধা, প্রতিভা অসাধারণ ধীশক্তি, দ্বিনি জ্ঞানের রাজ্যে, অতুলনীয় বাগ্ মিতা ইত্যাদি গুণাবলীর মাধ্যমে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ইমাম আজম আবু হানিফা এর পূর্বে ইসলামী কোন স্বতন্ত্র শাস্ত্র ছিল না। ইমাম আবু হানিফা রা. প্রথম ফিকহকে বিন্যস্ত স্বতন্ত্র শাস্ত্রের মর্যাদা দেন। 

ফিকহ সম্পাদনা কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য তিনি ১৩২ হিজরিতে একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। নিজের শ্রেষ্ঠতম ৪০ জন ফকিহ শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি "সম্পাদনা পরিষদ" এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দশজনকে নিয়ে "পর্যালোচনা পরিষদ"  গঠন করে তিনি ফিকহ  সংকলনের বিধিবদ্ধ ধারার সূচনা করেন।

ইমাম আবু হানিফা এর তত্ত্বাবধান, প্রত্যক্ষ মতামতদান ও বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরলস প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ২২ বছরে ফিকহ শাস্ত্রের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংকলন সমাপ্ত হয়। প্রাথমিকভাবে এতে ৮৩ মাসায়েলা স্থান পায়। 

এগুলোর নাম রাখা হয় কুতুবে হানাফিয়া । জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই সংকলনকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন শেষ পর্যন্ত এতে পাঁচ লাখ মাসয়ালা সংকলিত হয়।

ইমাম আবু হানিফা রা. এর মৃত্যু

আব্বাসীয় খলিফা আল-মানসুর আবু হানিফা কে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অতঃপর আল মানসুর তাকে কারাবন্দি করে রাখেন। 

১৫০ হিজরীতে বন্দি অবস্থায় তার ওপর বিষ প্রয়োগ করা হয়। সিজদারত অবস্থায় শহীদ হন মহান এ জ্ঞানসাধক। ইতিহাসখ্যাত এ মনীষীকে বাগদাদে দাফন করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url