শরীয়াত অনুযায়ী সহবাসের নিয়ম-স্বামী-স্ত্রীর ইসলামী নিয়মে সহবাস
সহবাসের স্বাভাবিক পন্থা হলো এই যে, স্বামী উপরে থাকবে আর স্ত্রী নিচে থাকবে। প্রত্যেক প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই স্বাভাবিক পন্থা পরিলক্ষিত হয়। এ দিকেই অত্যান্ত সুক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে আল কুরআনে।
আয়াতের অর্থ হলোঃ “যখন স্বামী-স্ত্রীকে ঢেকে ফেললো তখন স্ত্রীর ক্ষীণ গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলো”
আরও পড়ুন : দোয়া কবুলের আমল-দোয়া কবলের সময়-নেক আমল।
আর স্ত্রী যখন নিচে থাকবে এবং স্বামী তার উপর উপুড় হয়ে থাকবে তখনই স্বামীর শরীর দ্বারা স্ত্রীর শরীরর ঢাকা পড়বে। তাছাড়া এ পন্থাই সর্বাধিক আরামদায়ক। এতে স্ত্রীরও কষ্ট সহ্য করতে হয় না এবং গর্ভধারনের জন্যেও তা উপকারী ও সহায়ক।
বিখ্যাত চিকিৎসক বিজ্ঞানী বু-আলী ইবনে সীনা, তার আমর গ্রন্থ “কানুন” নামক বইয়ে এই পন্থাকেই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং স্বামী নিচে আর স্ত্রী উপরে থাকার পন্থাকেই নিকৃষ্ট পন্থা বলেছেন।
কেননা এতে পুংলিঙ্গে বীর্য আটকে থেকে দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আনন্দঘন মুহুর্তটা পরবর্তীতে বেদনার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
স্বামী স্ত্রী সহবাসে উভয়ের বীর্য বাহির হওয়ার পর কিছু সময় নড়াচড়া না করে মিলিত অবস্থায় থাকতে হবে। অর্থাৎ স্ত্রী নিচে এবং স্বামী উপরে থাকবে। তাতে বীর্য জরায়ুতে ঠিকমতো প্রবেশ করতে সুবিধা হয়।
তা না হলে বীর্য বাহিরে পড়ে যেতে পারে। আর বীর্য বাহিরে পড়লে গর্ব সঞ্চার হয় না। সহবাসের পর হালকা গরম পানি দিয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনের যৌনাঙ্গ ধুয়ে ফেলতে হয়। ঠান্ডা পানিতে ধোয়া উচিত নয়। তারপর স্বামী স্ত্রী দুইজনে কিছু মধু সেবন করে নিবেন। তারপর দুজনে ফরয গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করে নিবেন।
সকল নেয়ামতের মধ্যে সবচাইতে তীব্র আনন্দের নেয়ামত স্বামী স্ত্রীর সহবাস। স্বামী স্ত্রীর সহবাসের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতেই জান্নাতের সুখের কিঞ্চিত নিদর্শন পেয়ে থাকে। আল্লাহ সহবাসের আহ্বায়ক করেছেন পুরুষ মানুষকে। সাধারণত স্ত্রী লাজুক স্বভাবের হয়ে থাকে এবং সহজাত ভাবে সহবাসের জন্য তাড়িত হয় না।
কেবলমাত্র যখন তার স্বামী তাকে বুকে টেনে নেয় ও নানাবিদ উপায়ে আদর,সোহাগ করতে থাকে তখনই স্ত্রীর দেহ-মনে সহবাসের কামনা জেগে ওঠে। স্বামীর পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় নরম থাকে ও সহবাসকালীন সময়ে প্রবেশের উপযুক্ত তা অর্জনের জন্য শক্ত হয়। এই সময় তা নরম অবস্থার চাইতে কারো ক্ষেত্রে ছোট হয় কারো ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিঞ্চিত বর্ধিত হয়।
সূরা আলাকে, বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মানুষকে এক ফোঁটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এক থেকে তিন মিলিমিটার পরিমাণ বীর্যপাত হয় যা ঘূনীভূত হয়ে থাকে বলে এক ফোটার নেয় দেখায় যা কোরআনের বর্ণনার সাথে একেবারে মিলে যায় এবং কুরআনের সত্যতা প্রমাণ করে। তবে অনেক স্বামীর বীর্যের পরিমাণ বেশি এবং এমনকি দশ বারো ফোটাও পর্যন্ত বীর্য় সহবাসে নির্গত হতে পারে। তবে সন্তান জন্মদানের ব্যয় হবে এক ফোটাই বাকি অংশ স্ত্রীর গর্ভে শুকিয়ে যাবে।
সহবাসকে সার্থক ও আনন্দদায়ক করে তুলতে স্বামী স্ত্রী উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। স্ত্রী যদি অকার্যকর হয় কেবল পড়ে থাকে। স্বামীর সাথে সাথে নিজের মতো করে অগ্রসর না হয় তাহলে সেই সহবাসে স্ত্রী আনন্দ পায় না স্বামী ও স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে । এমনকি পরনারীর প্রতি আকর্ষণ পর্যন্ত এভাবেই জন্মায়। তাই সহবাসকালীন স্থির করণীয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা সকল নারীদের কর্তব্য।
সহবাস এর অন্তে স্বামী অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি কথা-বার্তা বলা থেকে বিরত থাকতে পারে। এই সময় স্বামীকে মিষ্টি দুগ্ধ জাতীয় কোন খাদ্য দিলে স্ত্রীর প্রতি তার মহব্বত অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সহবাসের পূর্বে এই খাবারের ব্যবস্থা রাখবে। স্বামী গায়ে হাত বুলিয়ে দিবে। স্বামীর শরীরে বিভিন্ন স্থানে চুম্বন করবে।
বিয়ের প্রথম কয়েক দিনেই জেনে নিবে, কোন স্থানের চুম্বন,স্পর্শ স্বামীর অপছন্দনীয় কোন স্থানে পছন্দনীয় । ওই সমস্ত স্থানে অধিক মনোযোগ দিবে কিন্তু অবশিষ্ট শরীরেও সোহাগ করবে তবে নারীসুলভ কোমলতায় । স্বামী উগ্রভাবে আদর করলেও স্ত্রীর উচিত হবে স্পর্শে কোমলতা বজায় রাখা।
তবে চুম্বনে স্বামীর সাথে সমভাবে অংশগ্রহণ করবে। এমনকি চুম্বনের প্রতিযোগিতা করবে স্বামীকে আদরের সময় মৃদুভাবে অন্ড থলিতে স্পর্শ করে রাখলে স্বামী-স্ত্রীর ভক্ত হয়ে যায় । তবে সাবধান থাকবে কেননা অন্ড কোষ অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও অতি মৃদু আঘাতে মারাত্মক যন্ত্রণা হতে পারে।
স্বামীর আনন্দ স্ত্রীর যোনি গহব্বরে প্রবেশের মাধ্যমে কিন্তু স্বামী অনেক সময় জানে না যে স্ত্রীর আনন্দ সহবাস করার আগে তাই এ বিষয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে স্বামীকে খুলে বলতে হবে এবং নিজের চাহিদা স্বামীর নজরে আনতে হবে। সাধারনত ২৫ বছরের আগে পুরুষ বেশি সময় নিয়ে মিলন করতে পারে না তবে তারা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় উত্তেজিত হতে পারে ২৫ এর পর বয়স যত বাড়বে মিলনের সময়ও তত বাড়বে।
কিন্তু বয়স রৃদ্ধির সাথে সাথে পুনরায় জাগ্রত হওয়ার ব্যবধানেও বাড়তে থাকে। এক নারী কিংবা পুরুষের সাথে বারবার মিলন করলে যৌন মিলনে বেশি সময় দেয়া যায় এবং মিলনের বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। কারণস্বরুপ নিয়মিত মিলনে একে অপরের শরীর এবং ভালোলাগা-মন্দলাগা,পছন্দ,আসন ভঙ্গি,সুখ দেওয়া নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত থাকে।
যারা বলেন, এক তরকারি দিয়ে প্রতিদিন খেতে ভালো লাগে না। তাই পর নারী ভোগের লালসা ”তাদেরকে অনুরোধ করছি দয়া করে মিথ্যাচার করবেন না। এমন যুক্তি ভিত্তিহীন। পরকীয়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করছে। মাত্র কয়েক মিনিটের কাম যতনা নিবারণের জন্য আজীবনের সম্পর্কে অবিশ্বাসের কালো দাগ লাগাবেন কেন? আজকালকার দিনে এমনকি আমাদের দেশে ১০ থেকে ১২ বছরের ছেলে মেয়েরা পর্যন্ত জেনে যাচ্ছি কিভাবে সহবাস করতে হয়।
তাই বলা যায় বিয়ে তো বহু দূরের কথা, এখনকার ছেলে মেয়েদের গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড হওয়ার আগেই তারা এই বিষয়ে বহু কিছু জানে ।
ঠোট নারীদের সবচাইতে যৌন উত্তেজক অঙ্গ গুলোর মধ্যে একটি । ঠোঁটের মাধ্যমেই সমগ্র নারীদের উত্তেজনার সূচনা। সবচেয়ে জোরালো সংকেতিক গ্রহণ করে থাকে। মেয়েটি তার সঙ্গীর গালে, গলায়, বুক, কান এদের স্পর্শ করলে ছেলেটি যেমন আনন্দ পায় তেমনি মেয়েটি অন্যরকম এক আনন্দ লাভ করে।
যৌন চাহিদা মেয়েদের জন্য চাহিদের ছেলেদের ৪ ভাগের এক ভাগ। কিশোরী এবং টিনেজার মেয়েদের যৌন ইচ্ছা সবচেয়ে বেশি। ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোন মূল্য নেই, ইসলামে পুরুষকে স্ত্রীর জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ইসলামী যৌন অধিকার এক তরফা ভাবে পুরুষকে দেওয়া হয়েছে এই জাতীয় অভিযোগ সুবুদ্ধি সম্পন্ন কেউ আশা করি করবেন না।
সূরা বাকারার ২০/২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের স্ত্রী হল তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র, তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। মদিনার ইহুদিদের মধ্যে একটা কুসংস্কার ছিল যে, কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে পিছন দিক থেকে যোনিপথ সংগম করত, তবে বিশ্বাস করা হতে যে, এর ফলে ট্যারা বিশিষ্ট সন্তানের জন্ম হবে। মদিনার আনসারেরা ইসলাম পূর্ব যুগে ইহুদিদের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত ছিল বলে আনসারগণ এই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন।
মক্কা বাসীদের ভেতর কুসংস্কার ছিল না । মক্কার মুহাজিররা হিজরত করে মদিনায় আসার পর জৈনিক মুহাজির যখন তার আনসার স্ত্রীর সাথে পেছন দেখতে কি সঙ্গম করতে গেলেন তখন এক বিপত্তি দেখা দিল। আনসার স্ত্রী এই পদ্ধতিকে ভুল মনে করে জানিয়ে দিলেন ”রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর কাছে” তিনি বললেন হুজুরের অনুমতি ব্যতীত এই কাজ তিনি কিছুতেই করবেন না। ফলে ঘটনাটি রাসুল পাক সাঃ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এ প্রসঙ্গে কোরআনের আয়াত ২.২২৩ নাযিল হয়। যেখানে বুঝানো হয়েছে সামনে বা পেছনে যেদিক থেকেই দিয়ে সংগম করা হোক না কেন তাতে কোন সমস্যা নেই এবং এর সাথে ট্যারা বিশিষ্ট সন্তান হবার কোন সম্পর্ক নেই। বিয়ের পর প্রথম কিছুদিন স্বাভাবিক নিয়মে সহবাস করার পর ভিন্ন ভিন্ন আসনে চেষ্টা করে দেখতে হবে, নিজেদের সবচাইতে উপযুক্ত আসন কোনটি এবং কোন আসনে পরস্পরের সর্বাধিক সুখ বোধ হয়। তারপর সেই আসনেই সর্বদা মিলিত হবে । কেননা ভিন্ন ভিন্ন আসনে সহবাস অনেক সময় দাম্পত্য জীবনে পারস্পারিক লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বামী আনন্দ পাচ্ছে কিন্তু স্ত্রী সুখ বোধ করছে না অথবা স্ত্রী সন্তুষ্ট কিন্তু স্বামী সুখী নয় এরূপ আসন নির্বাচন করা যাবে না । তাতে দাম্পত্য জীবনে আনন্দের ঘাটতি দেখা দিবে। স্বামী কোন নির্দিষ্ট আসনে সহবাস না করে প্রায় ভিন্ন ভিন্ন আসনে সহবাস করে এর উপরে স্ত্রী বুঝতে হবে সে সামনে কেউ পূর্ণাঙ্গ রূপে তৃপ্ত করতে পারছে না যা একজন পুরুষ যায় তখন স্বামীকে পূর্ণ তৃপ্তি দিতে সমর্থ হবে।
নবীজি সাঃ আরো বলেছেন, জানোয়ারের মত হঠাৎ করে স্ত্রীর উপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বে না বরং তারা উচিত হল প্রথমে চুমু খেয়ে আলিঙ্গন করে এবং মিষ্টি মধুর কথায় তাকে আগ্রহী করে তোলা। বীর্যপাতের পর সাথে সাথে স্বামী সরে যাবে না বরং ওই অবস্থাতেই কিছুক্ষণ পরে থাকবে যাতে স্ত্রীর চাহিদা পূরণ হয়ে যায় কেননা কোন কোন মহিলার বীর্যপাত দেরিতে হয় তারপর স্বামী-স্ত্রীর উপরে আলাদা আলাদা কাপড় কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান মুছে পিটপাট হয়ে যাবে।
আমি দুনিয়ার সম্পদ চাই না আমার স্বামীকে চাই এইসব কথা যে স্ত্রী বলেন, তিনি কি সুখী না অসুখী যে কোন অভিমান মানুষ বলবেন এসব স্বামী গর্ভে গর্বিত সুখী স্ত্রী মনের কথা। বাইবেলের পুরাতন সমাচারে আছে স্রষ্টার ছেলের দাওয়াত বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে অল্প বয়সে কুমারীকে বিয়ে করেছিলেন।
এটা প্রমাণ করে যে মেয়ের বয়স কম হওয়া বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বসে ব্যবধান বেশি হলেও সেটা ইয়াহুদী বা খ্রিস্টানদের বিয়েতে কোন বাধা নয় খ্রিস্টানদের প্রভু যীশুর কুমারী বা মেয়ের সাথে জোসেফে যখন বিয়ে হয় তখন সেই যুগের একটি অনুসারে মেরির বয়স খুব বেশি হলে ১৩/১৪ ছিল। জোসেফের বয়স ছিল ৩০ এর বেশি ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইসলামের নিয়ম-অনুযায়ী ও নানাবিধ কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে চলার তৌফিক দান করুক আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url