ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ! অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার।
জ্বর থেকে শুরু করে সর্দি-কাশি বা পেটের সমস্যা হলেই এন্টিবায়োটিক খাই আমরা। অথচ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার তোয়াক্কা করিনা আমরা। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বা নিজের মনের মতো করে ওষুধ খাওয়া আমাদের জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ ।
অনেকে দেখা যায় ঘরে সর্দি-কাশি, গ্যাষ্ট্রিক বা যেন কোন রোগের ওষুধ রয়েছে , প্রয়োজন মনে হয়েছে খেয়ে ফেলেছি বা দীর্ঘ দিন ধরে খেয়ে যাচ্ছে।
সমস্যা টা বা শরীরের বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দেয় তখন্ই।ওষুধ খাওয়ার ভয়ের কিছু দেখেন না চিকিৎসকরা। তবে চিন্তায় ফেলছে এই নিয়মের বাইরে গিয়ে খাওয়ার বিষয়টি। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ।
আরও পড়ুনঃ- জ্বরের উৎস ও চিকিৎসা।
পোস্ট সুচিপত্র:
নিজের মতো করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কুফল
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া আমাদের একটা অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে। পেটের গোলমাল হোক বা দিন কয়েকের জ্বর, ওষুধ তো জানাই আছে ! নিজের জানা একটি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করলেই ঝামেলা মিটে গেল বলে ধরে নেই আমরা। এই অকারণে ও অত্যাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে শরীরে বেড়ে চলেছে মেদ। সেই সঙ্গে শরীরে সুপারবাগসের উপস্তিতি মুশকিলে ফেলছে রোগী ও চিকিৎকদের।
অনেক সময় কোর্সও শেষ করেন না অনেকে। জানাশোনা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে রোগ একটু ভালো হলেই, ব্যাস ! ওষুধ খাওয়া বন্ধ! এইসব স্বাভাবই ডেকে আনছে আগামী দিনের গুরুতর বিপদ।
ঘন ঘন ওষুধ খাওয়ার কুফল
অবৈজ্ঞানিক উপায়ে ও ঘন ঘন ওষুধ খেলে শরীর সেই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারে। সে কারণে দিনের পর দিন নির্দিষ্ট অসুখে সেই ওষুধ নেওয়ার ফলে একটা সময়ের পর তা আর শরীরে কাজ করে না। শরীরের ব্যাকটেরিয়া তখন সেই নির্দিষ্ট ওষুদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন সেই জীবানুরাই ‘সুপারবাগস”।
ঘ্রেলিন হরমোনের নেতিবাচক প্রভাব
এদিকে ঘ্রেলিন হরমোনের ওপর নির্ভর করে শরীরে মেদের বৃ্দ্ধি ঘটে। খিদে পাওয়ার বিষয়ও নিয়ন্ত্রন করে তা। ভালো কিছু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি এই হরমোন আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্ত অবৈজ্ঞানিক উপায়ে ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে এই সব জীবাণূ সহজেই ধ্বংস হয় আর ঘ্রেলিনের কার্যকারিতাও কমে। ফলে মেদ বৃদ্ধি পায়, ঘন ঘন খিদে পায়। অনেক খেলেও অনেক সময় খিদে মেটে না।
আরও পড়ুনঃ- শীতে সর্দি-কাশিতে ভুগছেন ? জেনে নিন মুক্তির উপায়।
উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে হজমের সমস্যা করে।
আবার উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ধ্বংসের কারণে শরীরে সহজেই পানি জমে। থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃ্ত হতে পারে না। পাকস্থলীতে ইস্ট সংক্রমনও হয়। ফলে হজমের সমস্যাও দেখা যায়। এর ফলে পেটের চর্বিও বাড়ে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, চিকিৎসকের পরমার্শ ছাড়া ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক একেবারেই খাওয়া যাবে না। কখনো কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করলে অবশ্যই তা শেষ করতে হবে, রোগ একটু ভালো হওয়া মানেই নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কোর্স শেষ করা যাবে না।
অ্যান্টিাবায়োটিক খেলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। সঙ্গে সুষম আহার খেতে হবে এবং এড়িয়ে চলতে হবে তেল-মশলা।
ভিটামিন ওষুধে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেটেও নান স্বাস্থ্যঝুকি তৈরি হয়। এর কারণে বিভিন্ন মানুষের হাতে পায়ে ব্যাথা হতে পারে। ডা. মো সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি সেবন করলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি সেবন করলে দেহের লোহিত রক্তকণিকাকে ধীরে ধীরে অকার্যকর করে দেয়।
ঘুমের ওষুধে যেসব সমস্যা হতে পারে
আমাদের দেশের বেশিরভাগ ফার্মেসিগুলোতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঘুমের ওষুধ বিক্রি হয়। কোনো ব্যাক্তির দিনের পর দিন ঘুৃমের ওষুধ খাওয়ার ফলে সেটার প্রতি নির্ভরতা বেড়ে যায়। এক সময় তার মনে হয় ওষুধ ছাড়া তার ঘুম হবে না। ডা. মো সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, ঘুমের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করতে থাকলে লিভার ও কিডনি জাতীয় নানা রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকের কাছে গেলেও রোগের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে অসুবিধা হয়।
গ্যাসের ওষুধ না জেনে খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে।
এ ব্যাপারে ডা. মো. সাইফুল্লাহ রাসেল বলেন, আমাদের দেশের এসিডিটি বা গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার প্রচলন অনেক বেশি। কিন্ত এই গ্যাসের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ক্ষতিকর। কেউ যদি টানা দুই বছর গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন, তাহলে তার অস্টিওপোলেসি ডেভলপ করে। সেটা হলো হাড়তে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে। এতটা ভঙ্গুর যে পতন বা েএমনকি হালকা চাপ যেমন বাকানো বা কাশির মতো একটি ফ্র্যাকচার হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কিত ফ্র্যাকচারগুলি হিপ,কবজি বা মেরুদন্ডে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এছাড়া পাকস্থলিসহ পেটের নানা রোগও হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ- শীতে নানান রোগ থেকে বাচার উপায়।
বাড়িতে জমানো ওষুধ খাওয়ার নিয়মাবলী
- অবশ্যই সেটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।
- জ্বর,বমি, ব্যাথা কিংবা গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যায় প্রথমে একটি বা দুটি ওষুধ নিজে থেকে খেতে পারেন, তারপর অবশ্যাই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- জ্বর হলে প্রাপ্তবয়স্করা প্যারাসিটামল ৫০০-৬৫০এমজি দিনে ৩-৪ ঘন্টা অন্তর তিন-চারবার খেতে পারেন।
- ১২-১৩ বছর বয়সের পর থেকে ওটিসি ড্রাগ নেওয়া যেতে পারে। এরপর কমবয়সীদের কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দেওয়া চলবে না।
- যেকোনো ওষুধ খেতে শুরু করলে অবশ্যই তার কোর্স সম্পূর্ণ করা উচিত।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই নয়।
- নিজে নিজে ডাক্তারি করে বাড়ির বাচ্চা ও বয়স্কদের কখনোই ওষুধ দিবেন না।
- ওষুধ এক্সপায়ারি ডেট দেখে ব্যবহার করা উচিত।
- এছাড়া ঘন ঘন সর্দি-কাশি কমাতে নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া যখন তখন :কাফ সিরাপ’ খেলে নেশাও হতে পারে।
- অ্যালার্জি কমাতে অ্যভিল, সেট্রোজিন নিজে নিজে খেলে নানা সাইড এফেক্ট হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url