এইডস কি! এইডস রোগরে ভয়াবহতা-এইডসের লক্ষণ

এইডস এখন সারাবিশ্বে একটি বড় ধরনের আতঙ্ক হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এই আতঙ্ক থেকে বিশ্ববাসীকে বাচাতে হলে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। ন্যাচারাল পদ্ধতি বা হারবাল চিকিৎসা এই ক্ষেত্রে মানুষের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে এবং ভাইরাস প্রতিরোধে অফুরন্ত প্রানশক্তি সঞ্চার করার ব্যাপারে কার্যকর অবদান রাখতে পারে।

এইডস কি! এইডস রোগরে ভয়াবহতা-এইডসের লক্ষণ

যে কোনো রোগ হতে মুক্তি পেতে হরে মানবদেহের ভেতরে প্রতিরোধ দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। এইডস রোগের কোন চিকিৎসা নেই। আছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা, তাই এই রোগের হাত থেকে বাচার জন্য প্রতিরোধ দুর্গকে অধিক শক্তিশালী করতে হবে। এইডস রোগের সবচেয়ে দুর্বল দিক হল ইমিউনিটি। 

আরও পড়ুন:-  পুরুষাঙ্গের উথান জনিত সমস্যা ও সমাধান।

এইডস এমন রোগ যা খুব দ্রুত রোগীর ইমিউনিটি দুর্গে আঘাত হানে এবং ইমিউনিটি নষ্ট হয় বলে ই এইডস রোগের সৃষ্টি হয়। প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই আমাদের রোগটি সম্পর্কে জানতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র:

এইডস কি

এইডস হল এক ধরণের রোগ। এই রোগ এইচ আই ভি নামের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এইচ আই ভি (Human Immune-deficiency Virus) আক্রান্ত একজন মানুষ ধীরে ধীরে এইডস রোগীতে পরিণত হয়। এই জীবাণু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয। কেউ এইচ আই ভি দ্বারা আক্রান্ত হলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, এসব শারীরিক সমস্যায় ভুগতে ভুগতে রোগী এক সময় মারা যায়। এইডস (AIDS) এর পূর্ণ অর্থ হল:- Acquired Immune Deficiency  Syndrome.

A-Acquired= অর্জিত

I-Immune=রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

D-Deficiency =ঘাটতিজনিত

S-Syndrome=রোগের লক্ষনসমূহ

এইডস ভাইরাসের নাম

H-Human=মানুষ

I-Immune Deficiency =প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব

V-Virus=ভাইরাস

যেহেতু এই ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে মানুষের মৃত্যু ঘটায়, সেহেতু এর নামকরণ হয়েছে এইচ. আই. ভি ভাইরাস 

এইডস রোগের প্রকারভেদ

এইডস রোগ দুই প্রকার। যথা:-

এইচ আই ভি-১

এইচ আই ভি-২

এইচ আই ভি-১, পাশ্চাত্য অর্থ্যৎ শীত প্রধান দেশে এবং এইচ আই ভি-২ আফ্রিকায় অর্থ্যাৎ গ্রীষ্ম প্রধান দেশে দেখা যায়। এইচ আই ভি-১ ,এইচ আই ভি-২ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়।

HIV মানুষের শরীরে কোথায় বাস করে

HIV ভাইরাসটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন জলীয় অংশে বসবাস করে। যেমনঃ

  • রক্ত
  • পুরুষের বীর্য
  • মেয়েদের যোনিরস
  • বুকের দুধ
  • মুখের লালা
  • ঘাম
  • চোখের পানি
  • মূত্র
  • মল

তবে রক্ত এবং বীর্য বা যোনিরস ভাইরাসটি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে এবং অন্যান্য জলীয় অংশে ভাইরাসটি সংখ্যায় এত কম থাকে যে, সেটা দিয়ে নতুন একটা দেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।

কোন সুস্থ মানুষের দেহে যদি আক্রান্ত মানুষের রক্ত, বীর্য বা যোনিরস কোনোভাবে প্রবেশ করে তবে ভাইরাসটি সংক্রমিত হবে।

এইচ আই ভি কিভাবে ছড়ায়

  • অনিয়ন্ত্রিত/অরক্ষিত যৌনমিলনে
  • রক্তের মাধ্যমে-ব্লেড, ক্ষুর, রেজার, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি,আক্রান্ত মা থেকে গর্ভাবস্থায় শিশুর দেহে , জন্মদানের সময় কিংবা বুকের দুধ পানের মাধ্যমে।

এইচ আই ভি ‍কিভাবে ছড়ায় না

  • সাধারন মেলামেশা করলে
  • এক গ্লাস পানি খেলে
  • এক সাথে চলাফেরা করলে
  • হাচি-কাশিও থুথুর মাধ্যমে
  • মশা-মাছি ও কীট পতঙ্গের কামড়ের মাধ্যমে
  • কোলাকুলি-করমর্দনের করলে
  • এক বিছানায় ঘুমালে
  • জামা-কাপড়,গামছা, তোয়ালে ব্যবহার করলে 
  • এক বাথরুমে ব্যবহার করলে

যাদের এইডস হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি

সাবধানে না চললে যে কারও এইডস হতে পারে। এইডস হওয়ার আশংকা যাদের সবচেয়ে বেশি তারা হল-
  • যেসব নারী দেহ ব্যবসা করে অর্থ্যাৎ পতিতা।
  • স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সাথে যৌন সম্পর্ক করে এমন পুরুষ।
  • স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করে এমন নারী
  • এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভের শিশু
  • একই  সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে নেশার ওষুধ গ্রহন করে যারা।
  • জীবাণুমুক্ত নয় এমন সুই-সিরিঞ্জ ব্যবহার করে যারা।
  • যেসব রোগী ঘন ঘন রক্ত গ্রহন করে।
  • যেসব রোগীকে সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত নয় এমন ডাক্তারী যন্ত্রপাতি দ্বারা অপারেশন করা হয়।

এইডসের লক্ষণ

এইডসের নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। এইডস হল বিভিন্ন রোগের লক্ষনের সমষ্টি। যার জন্য এইচ আই ভি  ভাইরাস দায়ী। নিম্মে লক্ষনগুলো উল্লেখ করা হল।
  • দীর্ঘ সময় ধরে পাতলা পায়খানা হওয়া। এ ক্ষেত্রে মাসব্যাপী পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  •  দ্রুত শরীরের ওজন কমে যাওয়া , এক্ষেত্রে শরীরের ওজন প্রায় ১০ ভাগ কমে যায়।
  • শরীরে সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকে। রোগী দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে ভোগে থাকেন।
  • দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট ও কাশিতে ভোগা।
  • শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি ফূলে যাওয়া।
  • সব সময় খাবারে অরুচি থাকা।
  • গায়ের ছামড়ায় বিবর্ণ ছোপ ছোপ পড়া।
  • সর্বদা শারিরীক দুর্বলতা অনুভব করা।
তবে উপরে উল্লেখিত কারন দেখা দিলেই যে এইডস হয়েছে তা ভাবার দরকার নাই। অন্য্যান্য রোগেরও এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া। 

বাংলাদেশ ঝুকিপূর্ণ কেন

  • দেশে ১ লক্ষ যৌন কর্মী আছে যার কনডম ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করে।
  • ১ লক্ষ ট্রাক ড্রাইভার ভ্রমনকালে যৌন কাজে লিপ্ত হয়।
  • এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিদেশে চাকুরী করে এবং যাতায়াত করে।
  • দেশের ২৫%-৫০% যুবক বিবাহপূর্ণ যৌন মিলন করে।
  • পাশ্ববর্তী দেশে এইচ আই ভি এর দ্রুত বিস্তার।
  • নারীর ক্ষমতায়নে ব্যর্থতা/সিদ্ধান্ত গ্রহনে অক্ষমতা।
  • ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহনের প্রবণতা।
  • পর্যটকদের বিচরণ

এইচ আই ভি কিভাবে কাজ করে

বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ম মানুষ নানা রকম জীবাণুর সংস্পর্শে আসে। সাধারণ প্রত্যেক মানুষের দেহে একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে, যা এই জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থার হাতিয়ার হল টি লিম্ফোসাইট নামক এক ধরণের কোষ, যা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায়। যেখানে কোন জীবাণু পায় সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে।  


এইচ আই ভি শরীরে প্রবেশ করার তাদের আক্রমণের লক্ষ্য হয় এই লিম্ফোসাইগুলো । ধীরে ধীরে দেহের সমস্ত টি লিম্ফোসাইটকে মেরে ফেলে এই  ভাইরাস। ফলে শরীরে আর কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। এই অবস্থায় কিছু সুবিধাবাদী জীবাণু যারা সাধারন অবস্থায় কোন ক্ষতি করতে পারে না, তারা এই সুযোগ গ্রহন করে। এদের আক্রমনে তখন দেহে নানা রকম রোগের লক্ষন দেখা দেয়।

রক্ত দ্বারা

অনেক সময় অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত নিতে হয়। এইচ আই ভি সংক্রমিত কোনো মানুষের রক্ত যদি ঐ অসুস্থ ব্যক্তির দেহে দেয়া হয়, তবে ঐ মানুষটি নিশ্চিতভাবে এইচ আই ভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।এখানে আশংকা হার প্রায় ১০০% ।

সংক্রমিত যন্ত্রপাতি দ্বারা এইডস

আক্রান্ত মানুষের ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ ও অপারেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তাদরে রক্তের সংস্পর্শে আসে। রক্ত থেকে ভাইরাস এসব যন্ত্রপাতির গায়ে লেগে থাকে। এসব যন্ত্রপাতি যদি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করে কোনো সুস্থ মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয়,  তাহলে যন্ত্রপাতির গায়ে লেগে থাকা জীবাণু বা ভাইরাস গুলো সহজে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। দাড়ি-গোফ কাটার সময় ব্লেডে লেগে থাকা জীবাণুর মাধ্যমেও এটি প্রবেশ করে। এ জন্য একই ব্যাক্তির ব্যবহৃত ব্লেড দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তির দাড়ি বা গোফ কাটা ঠিক নয়।

মা ও শিশুর ক্ষেত্রে

সংক্রমিত মা থেকে তার শিশুর মাধ্যমে এইডস ছড়ায়। একজন গর্ভবতী মা গর্ভাবস্তায় যদি এইডস রোগের বাহক হয়ে থাকেন তবে তিনি গর্ভকালীন সময়ে বা  প্রসবের সময়ে শিশুকে সংক্রমিক করতে পারেন। সংক্রমিত মায়ের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন শিশুর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  তাছাড়া এইডস আক্রান্ত  মায়ের বুকের দুধ পান করার মাধ্যমেও একজন শিশু সংক্রমিত হওয়ার আশংকা থাকে।

HIV থেকে মুক্তির উপায়

  • অনিয়ন্ত্রিত/অরক্ষিত যৌনমিলন থেকে সব সময় হেফাজত থাকা।
  • ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে বিয়ে করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা।
  • কাউকে রক্ত দান করা কিংবা রক্ত গ্রহন করার সময় রক্তেরে গ্রপ পরিক্ষা করার পাশাপাশি রক্ত পরিক্ষা করে নেওয়া ।
  • সেভ করার সময় ব্লেড, ক্ষুর কিংবা রেজার ব্যবহার করার সময় সবাধানতা অবলম্বন করা। সবচেয়ে ভালো হয় নিজের কেনা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা।
  •  সর্বোত্তম উপায় নিজের চরিত্র বদলানো। অর্থ্যৎ সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়া। নিজের চরিত্র পরিবর্তন করতে পারলে বাকি কারন গুলো অনায়সে অপ্রয়োজনীয় হয়ে  পড়বে। তবে এক্ষত্রে সবার পরিবর্তন হওয়া বাঞ্চনীয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url