রাগ নিয়ন্ত্রনের উপায়- রাগ নিয়ন্ত্রনে ১২টি কার্যকরী টিপস
প্রতিটি মানুষেরই রাগ থাকে। রাগ স্বাভাবিক অনুভুতি। তবে তার প্রকাশ অনেক সময়েই অস্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেকের আবার অল্পেই রাগ হয়। তবে অতিরিক্ত রাগ মোটেও ভালো নয়। এর ফলে নিজের কিংবা অন্যের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রন করা জরুরি।
রাগ আর অভিমান ভিন্ন দুটি মানসিক অনুভুতি। রাগের সাথে হিংসাত্মক মনোভাব জড়িত থাকে। রাগ হলে একজন মানুষ অনেক কিছুৃ করতে পারে। রাগ দুই প্রকার হয়, প্রকাশিত রাগ এবং অপ্রকাশিত রাগ।
আরও পড়ুন: মানুষ কেন মুর্ছা যায় ? জেনে নিন কারণ, লক্ষন ও প্রতিকার।
যারা রাগ সহজেই প্রকাশ করে তারা সাধারণত ভাল মানুষ হয়ে থাকে, আবার কিছু মানুষ আছে যারা রাগ প্রকাশ করে না কিন্ত গোপনে অনেক বড় ক্ষতি আশংকা থেকে যায়। অতিরিক্ত রাগে আমাদের নিজের,পরিবারের ও সমাজের যেসব ক্ষতি হয় চলুন সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র
পরিবারে অশান্তি:
রাগের কুফলের সবচেয়ে নির্মম বলি হয়, আামাদের পরিবারের সদস্যরা। আমরা অনেকেই পরিবারের সদস্যদের ওপর রাগ করি. সন্তানের ওপর রাগ করি, সেন্টিমেন্টে আঘাত দিয়ে কথা বলি। মনে রাখতে হবে, একটি সম্পর্ক গড়তে সময় লাগে কিন্ত ভাঙ্গতে সময় লাগে না।
রাগের মাথায় এমন কথা বলে ফেলি যে, ২০ বছরের সম্পর্ক এক কথায় নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষোভ পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। মনে রাখতে হবে, যে সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না, তাতে কখনো দেয়াল তুলবেন না।
মানসিক প্রশান্তি নষ্ট:
জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষ স্ফটিক স্বচ্ছ হৃদয় নিয়ে জন্মগ্রহন করে। ধীরে ধীরে পারিপার্শ্বিক নেতিবাচকতায় প্রভাবিত হয়ে আপনি যখন রেগে যাচ্ছেন তখন এই অন্তরে আচড় পড়ে। অন্তরে যত আচড়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে আপনার প্রশান্তি তত কমতে থাকে।
নিজেই ভেবে দেখুন, আপনার যখন রাগ,ক্ষোভ বা অভিমান থাকে তখন ভেতরে প্রশান্তি অনুভব করেন কিনা ? আসলে কাউকে কষ্ট দিয়ে , দুর্ব্যবহার করে কখনো প্রশান্তি পাওয়া যায় না।
রাগ যত বেশি রোগ তত বেশি;
আমাদের এই শরীর এক মহাবিস্ময়কর জৈব কারখানা। এই কারখানায় যত রাসায়নিক বিক্রিয়া বা রি-একশন হয় পৃথিবীর তাবৎ কারখানা সব মিলিয়ে একত্রে এত রি-একশন হয় না। আবার যখন আমরা রেগে যাই, তখন আমাদের শরীরের এড্রিনাল গ্লান্ডস কর্টিসোল এবং এড্রেনালিন নামক স্ট্রেস হরমোন নি:সরণ করে থাকে। এগুলো আসলে আমাদের শরীরের উৎপন্ন এক প্রকার বিষ বা টক্সিন।
আমরা যখন রেগে যাই ,আমাদের দেহে কিছু জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন- হার্টরেট, ব্লাডপ্রেসার এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন , দীর্ঘসময় ধরে যদি এই রেসপন্স চলতে থাকে তাহলে অনেক ধরণের ক্রণিক রোগ হতে পারে। যেমন- ইনমনিয়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, আলসার, মৃগীরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, ব্যাকপেইন, ফুসফুসের অসুখ এমনকি ক্যান্সার।
এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আয়ুষ্কালের ওপরও রাগের প্রভাব আছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, রাগ যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি, তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুন। রাগ ও স্ট্রেস আমাদের স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। কেউ যদি সার্বক্ষণিক চিন্তিত ও রাগান্বিত থাকেন তাহলে তিনি তার আয়ু কমিয়ে ফেলেছেন।
বদরাগী বা রগচটা মানুষ বলে পরিচিতদের মৃত্যুর হার পাচ গুন বেশি। কোয়ান্টামে আমরা বলি, ক্ষোভ হচ্ছে এমন একটি বিষ যা আমি নিজ পান করছি কিন্ত প্রত্যাশা করছি প্রতিপক্ষ মারা যাবে।
নেতিবাচকতা দুষ্টচক্রে জড়িয়ে যায়:
রাগ ক্ষোভ ও অভিমানের কারণে একজন মানুষ অবচেতন নেতিবাচকতার ফাদে পা দিয়ে ফেলে। রাগের কারণে কোনো ক্ষতি বা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে সে অনুতাপ ও পাপবোধ ভোগে, যা তার ভেতরে অস্তিরতার কারণে সে কাজ পরিপুর্ণ মনোযোগ দিতে পারে না। ফলে ব্যর্থতা তার পিছু ছাড়ে না। তাই হতাশা বা হীনন্মন্যতা থেকেই হোক সে আবার রাগের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে।
আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন সুন্দর ও সাবলীলভাবে গড়তে হলে রাগ নিয়ন্ত্রনের বিকল্প কিছু নেই । বিশেষজ্ঞারা রাগ কমানোর নানা উপায় বলেন।
১২টি উপায়ে রাগ কমানোর কার্যকরী টিপস
১২টি উপায়ে যে কেউই রাগ কমাতে পারেন। দেখে নেওয়া যাক কী কী বলেন বিশেষজ্ঞরা।
১. মনকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। এক থেকে দশ পর্যন্ত উল্টো করে শুনতে পারেন, তাহলে মস্তিষ্ককে কিছুটা অন্যদিকে ব্যস্ত রাখা যাবে। এটা রাগ কমাতে সাহায্যে করে।
২. হঠাৎ করে রাগের মাথায় কোনো কথা বা কাজ করে বসবেন না , সময় নিন, প্রয়োজন হলে সেই মানুষটার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বন্ধ রাখুন অথবা রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন।
৩. আপনি যখন শান্ত হয়ে যাবেন, আপনার রাগের কারনগুলো তার সামনে তুলে ধরুন, ততক্ষনে অপরজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যাবে, তিনিও ভালোভাবে আপনার কথা বুঝতে পারবেন।
৪. নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে পারেন। এতেও রাগের প্রবণতা কমে। ক্ষণিকের রাগ কমাতে কিছুটা পথ হাটতে পারেন।
৫. আপনি যখন রেগে গেছেন স্বাভাবিকভাবেই আপনার মধ্যে নমনীয়তা কাজ করবে না, আর তাই হঠাত করে এমন কিছু কথা বলে ফেলতে পারেন যা অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে, তাই রেগে থাকার সময়ে কোনো কথা না বলাই ভালো।
৬. যে কোনো সমস্যার সমাধান আছে। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই সেটা বের করা যায়। সেটাই চেষ্টা করুন।
৭. নিজেকে নিয়ে বেশি হিসাব করতে গেলে রাগ আরো বাড়বে, তাই তাতক্ষনিক ব্যাপারটা মেনে নিলে সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
৮. রাগ কমাতে অনেকে ধূমপান করেন। অন্য নেশাও করেন। কিন্ত এটা রাগ কমানোর ভালো পথ নয়। তাতে মনটা আরো বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
৯. রাগ বা টেনশন কমানোর জন্য খানিকটা হাসি ঠাট্রা করা যেতে পারে, তাতে মনটা হালকা হয়ে যায় আবার রাগও কমে যায়।
১০. সবচেয়ে ভালো উপায় হল নিয়মিত মেডিটেশন। এতে শরীরের অন্য উপকারের সঙ্গে সঙ্গে রাগ নিয়ন্ত্রনও হয়।
১১. সহকর্মীসহ সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। ভাব বিনিময়ে স্পষ্টতা অবলম্বন করুন।
১২. নিজের রাগের মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। রাগান্বিত অবস্থায় আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে, তা জানতে সহকর্মী বা আশপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url