লিভার ক্যান্সারের কারণ-লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ- লিভার ক্যান্সারের প্রতিকার।

লিভারের বিভিন্ন ধরণের রোগের মধ্যে মারাত্মক দুটি রোগ হচ্ছে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার দুটিকে একই ধরণের রোগ বলে মনে করেন। লিভার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে লিভার ক্যান্সার বলে।

লিভার ক্যান্সারের কারণ-লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ- লিভার ক্যান্সারের প্রতিকার।

কিন্ত প্রকৃতপক্ষে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার দুটি ভিন্ন রোগ। এই দুটি ভিন্ন রোগের মধ্যে পার্থক্য করতে হলে প্রথমে রোগ দুটি সম্মন্ধে ভালোভাবে জানতে হবে আমাদের। । লিভার ক্যান্সার সাধারনত শরীরের অন্য অঙ্গ থেকে মেটাসটেসিস হয়ে লিভারে আসে।

 পোস্ট সুচিপত্র:

লিভার ক্যান্সারের প্রকারভেদ:

লিভার ক্যান্সার দুই প্রকার হতে পারে,-প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী। প্রাইমারী লিভার ক্যান্সার লিভারেই সৃষ্টি হয়। প্রাইমারী লিভার ক্যান্সারের জন্য সাধারণত হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস ও সিরোসিস দায়ী। আর যে ক্যান্সার শরীরের অন্য অঙ্গ থেকে মেটাসটেসিস হয়ে লিভারে আসে তাকে সেকেন্ডারী লিভার ক্যান্সার বলে। প্রাইমারী লিভার ক্যান্সার থেকে সেকেন্ডারী লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা সীমিত।

লিভারের কাজ:

  • লিভার এলবুমিন তৈরি করে।
  • লিভার ট্রাইগ্লিসারয়েড তৈরী করে।
  • লিপিড তৈরিতে লিভার সাহায্য করে।
  • পিত্তরস তৈরিতে লিভার সাহায্য করে।
  • লিভার প্রোটিন তৈরী করে নি:সরণ করে।
  • নবজাতক শিশুদের লোহিত কণিকা লিভার থেকে তৈরি হয়।
  • কার্বোহাইড্রেট তৈরীতে লিভার সাহায্য করে।
  • অ্যামাইনো এসিড থেকে গ্লকোজ তৈরিতে, গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লকোজ তৈরীতে লিভার গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে। 
  • শরীরের রক্ত জমাট বাধার জন্য দায়ী কোয়াগুলোশন ফ্যাক্টর । (ফিব্রিনোজেন), II( প্রোথ্রাম্বিন), V, VII, IX, X, এবং XI লিভার তৈরি করে। 
  • গ্লকোজ, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-বি১২, আয়রণ, কপার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান লিভার জমা করে।

লিভার ক্যান্সারের কারণ:

হেপাটাইটিস বি ইনফেকশন, হেপাটাইটিস সি ইনফেকশন, বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, অ্যালকোহল সেবন, ছত্রাক আক্রান্ত বিভিন্ন খাদ্যশস্যের বিষক্রিয়া, সিরোসিস ইত্যাদি।

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ:

  • ওজন কমে যাওয়া 
  • পেটের ডান পাশে ব্যথা
  • বমি ও বমি বমি ভাব 
  • লিভার বড় হয়ে যাওয়া 
  • জন্ডিস জ্বর
  • শরীর ব্যথা  
  • খুব দ্রুত পেট ভরে যাওয়া বা খেতে ইচ্ছে না করা 
  • পেট খারাপ হওয়া 
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • দুর্বলনননও ক্লান্ত লাগা 
  • ছকের মত সাদা পায়খানা ও কালচে প্রস্রাব হওয়া
  • চামড়ায় ও চোখে সাদা অংশ হলুদ রঙ ধারণ করা

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার দুটি ভিন্ন রোগ। তবে লিভার সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার হতে পারে। 

লিভার ক্যান্সারের স্টেজ বা পর্যায়:

ক্যান্সার কোন স্টেজে বা কোন পর্যায়ে আছে আপনার শরীরে। তা থেকে জানা যায়, সেটি আপনার দেহে কতটা ছড়িয়েছে। চলুন নিজের স্টেজ বা  পর্যায় যেগুলো দেখি আমরা সেটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।

স্টেজ  ১:-  একটি টিউমার যেটি এখনো কথাও ছড়িয়েনি।

স্টেজ  ২:- একটি টিউমার তৈরি হয়েছে এবং এটি রক্তনালীতে ছড়িয়ে গেছে অথবা একাধিক টিউমার আছে যেগুলোর দৈর্ঘ্য ২ ইঞ্চির কম।

স্টেজ ৩:- একটি টিউমার তৈরি হয়েছে যেটি মূল রক্তনালি বা নিকটবর্তী অঙ্গে ছড়িয়ে গেছে অথবা একাধিক টিউমার আছে যাদের মধ্যে কমপক্ষে একটি দৈর্ঘ্য ২ ইঞ্চি বেশি।

স্টেজ ৪ :-  , অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসার ছড়িয়ে উঠেছে।

লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা আপনার বয়স কোন স্টেজে আছে সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং লিভারের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে যদি লিভারে অন্য কোন সমস্যা না থাকে এবং ক্যান্সার ছড়িয়ে গিয়ে না থাকে তাহলে আপনার কাছে যে বিষয়গুলো আছে তা হচ্ছে।

১।  টিউমার বের করার জন্য সার্জারি।

২।  লিভার প্রতিস্থাপন একজন  দাতার কাছ থেকে লিভার সংগ্রহ করে তা স্থাপন যদিও এটি সহজ নয়।

৩। এপ্লেশন থেরাপিতে অ্যালকোহল ঠান্ডা গরম অথবা বৈদ্যুতিক বাল্বের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা।

৪। এমবুলাইজেশন থেরাপিতে পূর্বে হেপাটিক দমনে দিয়ে একটি সিগনাল প্রবেশ করানো হয়। চিকিৎসক নলের মধ্যে একটি উপকরণ প্রবেশ করান যা রক্তের প্রবাহ থামিয়ে দেয় এবং টিউমারকে পুষ্টিকর উপাদান থেকে বঞ্চিত করে। কেমোথেরাপির ওষুধ অথবা রেডিয়েশন কেও নলের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হতে পারে।

৫। টার্গেটেড থেরাপিতে এমন কিছু ঔষধ ব্যবহার করা হয় যেগুলো সরাসরি আক্রান্ত । যেগুলো সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ কে আক্রমণ করে এর ফলে টিউমার গুলো রক্তনালী তৈরি করতে পারে না । যা তাদের টিকে থাকার জন্য আবশ্যক । কখনো কখনো এসব ওষুধের কারণে বিবেচিত হতে পারেনা এবং বড় হতে পারে না।

লিভার ক্যান্সার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা না গেলেও কিছু কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে আপনার এ ধরনের লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যাবে।

আরও পড়ুন ঃ পাকস্থলী ক্যান্সারের কারন,লক্ষন ও প্রতিকার জেনে নিন। সুস্থ থাকুন।

লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়:

১।  হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন গ্রহণ

২। পরিমিত খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা

৩। মদ্যপান যথাসম্ভব ফরিহার করা

৪। দেহে সরাসরি প্রবেশ করানো হয় এমন ইন্টারভেনাস বা আইভী ওষুধ গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই পরিষ্কার ব্যবহার করা।

৫। উলকি বা নাক কান ফুটো করালে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা ।

৬। নিরাপদ যৌনতার চর্চা করা

লিভারের সুরক্ষায় কালোজিরা:

লিভার ক্যান্সারের এক অন্যতম কারণ হলো ছত্রাক । আক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার খাদ্যশস্য। দীর্ঘদিন যাবত গম, জব, বাদাম ও ভুট্রা গুদামজাত করে রাখলে এ সকল খাদ্যশস্যের উপর বিভিন্ন ছত্রাক জন্মগ্রহণ করে । এ সকল খাদ্য দ্রব্যের উপর আপনার টক্সিন নামক বিষ তৈরি করে। এ সকল বিষাক্ত দ্রব্যের মধ্যে আপ্লাটক্সিন সবচেয়ে মারাত্মক এবং ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সী ফর রিচার্জ অন ক্যান্সার (IARC) এটিকে প্রথম শ্রেণীর ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে অবহিত করেছেন। 

এই বিষ এতটাই মারাত্মক যে এ  বিষে আক্রান্ত মা হতে গর্ভে থাকা সন্তান এমনকি মাতৃদুগ্ধ পান করা সন্তানও আক্রান্ত হতে পারে। সাম্প্রতিককালের গবেষণা হতে জানা যায় যে কালোজিরার রয়েছে এই আপনার টক্সিন নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী  বিষ ধ্বংস করার ক্ষমতা। তাই লিভারের সুরক্ষায় কালোজিরা হতে পারে এক অনন্য ভেষজ।

স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ:

লিভারের সমস্যা রোদে সর্বপ্রথম অবশ্যই তেল ও  চর্বিজাতীয় খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, ভাজাপোড়া বর্জন করতে হবে। স্বাদযুক্ত ভেষজ ও সবজি লিভারের জন্য খুবই উপকারী। তাই লিভারের সুরক্ষায় ও লিভারের ক্যান্সার প্রতিরোধে কালমেঘ, চিরতা কালকেশী, গুলঞ্চ, ভুই আমলা খুবই কার্যকর।

আর এ সকল ভেষজ লিভারকে হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি এ ইনফেকশন এর হাত থেকে রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা মেনে চললে লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url