যক্ষা রোগের চিকিৎসা -যক্ষার রোগের লক্ষণ-যক্ষার রোগের প্রতিকার

যক্ষ্মা বা টিবি

যক্ষ্মা বা টিবি একটি বায়ুবাহিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এবং দেহে প্রবেশ করে প্রথমে ফুসফুসে আশ্রয় নেয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত সব রোগীর কাছ থেকেই কিন্তু যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায় না। যাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাদের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়

যক্ষা রোগের চিকিৎসা -যক্ষার রোগের লক্ষণ-যক্ষার রোগের প্রতিকার

মাইকো ব্যাকটেরিয়াম নামক জীবাণুর কারনেস মানুষের শরীরে যেকোন সংক্রামক ব্যাধি হয়। মাইকোব্যাকটেরিয়াম ক্ষুদ্র, গোলাকার গঠনের এবং এরা যেকোন অঙ্গের অস্থির ক্ষতিসাধন করে। এটি প্রধানত ফুসফুসে আক্রমণ করে।

পোস্ট সূচিপত্র

  • জীবাণুর নাম :
  • যক্ষা রোগের প্রকারভেদ :
  • যেসকল কারনে টি.বি.র ঝুকি বেড়ে যায় :
  • যক্ষার লক্ষণ :
  • কোন কোন স্থানে যক্ষার জীবাণু আক্রমণ করে :
  • প্যাথলজি পরীক্ষা 
  • যক্ষা নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধ :
  • ডোজ থেরাপি 
  • স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ :
  • সচেতন হোন :

জীবাণুর নাম :

যক্ষ্মার নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম ্টিউবারকুলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) । এই জীবাণু মাইকো ব্যাকটেরিয়াম বভিস (বাহক গরু ) ও মাইকো ব্যাকটেরিয়াম (বাহক মানুষ ) আফ্রিকানাস- এর অংশ। 

বর্তমানে বিশ্বে টি.বি (যক্ষা) একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা । বর্তমান সমীক্ষায় দেখা যায় যে,  বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ব্যক্তি সুপ্ত টি.বি তে আক্রান্ত। ২০২০ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি লোক নতুন ভাবে টি.বিতে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় দেড় কোটি লোক রোগে ভুগবে এবং প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক মারা গেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, টি.বি রোগের সংক্রমণ উন্নত দেশের চাইতে উন্নয়নশীল দেশে বেশি হয়।

যক্ষা রোগের প্রকারভেদ :

১. প্রাইমারি পালমোনারি টি.বি 

২. মিলিয়ারি টি.বি

৩. পোস্ট প্রাইমারি পালমোনারি টি.বি

যেসকল কারনে টি.বি.র ঝুকি বেড়ে যায় :

  • বয়স ( শিশু>কিশোর>প্রাপ্তবয়স্ক) অর্থ্যাৎ প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে শিশু ও কিশোরদের টি.বি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • বিদেশ থেকে আগত ব্যাক্তি বিশেষত: যারা টি.বি ঝুকিপূর্ণ দেশসমূহ থেকে আসে।
  • টি.বি রোগীর সাথে নিবিড় সম্পর্কের কারনে ।
  • ঘনবসতি (জেলখানা, বস্তি )  এলাকায় বাস করলে।
  • এক বছর বা তার চেয়ে কম সময় আগে আক্রান্ত ব্যক্তি ।
  • ধূমপান ও অপুষ্টি।
  • আক্রান্ত রোগীর হাচি-কাশির মাধ্যমে অন্য লোক যক্ষায় আক্রান্ত হয়।

যক্ষার লক্ষণ :

  • জ্বর
  • তিন সপ্তাহের বেশি কাশি ( অনেক সময় রক্তযুক্ত কাশি )
  • শ্বাসকষ্ট
  • অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
  • রাত্রে ঘাম
  • পেটে ( ফুসফুসে পানি অথবা বাাতাস জমার কারনে ) ব্যথা।

কোন কোন স্থানে যক্ষার জীবাণু আক্রমণ করে 

শরীরের বিভিন্ন স্থানে যক্ষার জীবাণু আক্রমণ করতে পারে। যেমন-ফুসফুস, মস্তিষ্ক, অন্ত্র, যকৃত,  প্লীহা, কিডনি, মূত্রথলী, জননতন্ত্র।

প্যাথলজি পরীক্ষা :

  • X-ray chest P/A View
  • Tuberculin test
  • ESR
  • Sputum for A.F.B

যক্ষা নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধ :

  • বিসিজি টিকা যক্ষা প্রতিরোধ করে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের বিসিজি  টিকা দেওয়া হয়।  তবে জন্মের পরে যত দ্রুত সম্ভব বিসিজি টিকা দেওয়া ভালো।
  • যক্ষা একটি সংক্রামক ব্যাধি। সুতরাং যদি সম্ভব হয় রোগীকে আলাদা করে রাখতে হবে বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ,মা ও শিশু কে। 
  • শুষ্ক , আলো-বাতাসপূর্ণ বাসস্থান নির্বাচন করতে হবে।
  • ঘন বসতিপুর্ণ পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ ঘনবসতি শুধু যক্ষা রোগেরই জন্ম দেয় না। অন্যান্য সকল সংক্রামক রোগের জন্য ঘনবসতি অনেকাংশে দায়ী।
  • ধূমপান পরিহার করতে হবে, অধিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে।

ডোজ থেরাপি :

মৌচাকের সাথে আমাদের ফুসফুসের সাদৃশ্য রয়েছে এবং এর কোঠরগুলোর সাথে আমাদের ফুসফুসের বায়ু কুঠুরীর সাদৃশ্য রয়েছে। আর সাম্প্রতিক কালের গবেষনায় জানা যায় যে, মৌচাক হতে প্রাপ্ত মধু ,বী-পোলেন ,রয়েল জেলী, প্রভুতি উপাদান ইনফ্লয়েঞ্জাসহ ফুসফুস ও শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ও জটিলতায় উপকারী ভূমিকা পালন করে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ :

রোগীকে পুর্ণ বিশ্রাম থাকতে হবে। রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। রোগীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র আলাদা করে দিতে হবে। ভিটামিন, আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। 

সচেতন হোন :

তিন সপ্তাহের বেশি কাশি বা জ্বর কাশির সাথে রক্তপাত , ওজন হ্রাস, অবসাদ ও ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য বা অরুচি, পেটব্যাথা, শরীরের কোথাও কোনো অস্বাভাবিক গোটা বা চাকা দেখা দিলে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। 

দ্রুত রোগ নির্নয় হলে চিকিৎসা সহজ হয়, শারীরিক জটিলতাও কম হয়। বাংলাদেশে এখনো বড় এক স্বাস্থ্য সমস্যা যক্ষা। এ রোগে শুধু যে নিম্ম আয়ের মানুষেরই আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্ত নয়, যে কারোরই হতে পারে যক্ষা। তাই আমাদের সাবইকে সচেতন হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url