অনিদ্রাজনিত সমস্যা-অনিদ্রা থেকে মুক্তির উপায়-অনিদ্রা থেকে বাচতে করনীয়

অনিদ্রা এক মারাত্মক ব্যাধি

অনিদ্রা এমন এক অবস্থা যেখানে ভালমত বা পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। অনিদ্রা চিন্তা,  মানসিক সমস্যা ইত্যাদির লক্ষনও হতে পারে। 

অনিদ্রাজনিত সমস্যা-অনিদ্রা থেকে মুক্তির উপায়-অনিদ্রা থেকে বাচতে করনীয়

পোস্ট সূচিপত্র

ঘুম কি এবং কেন ?

ঘুম দু‘অক্ষরের এই ছোট শব্দটিকে দু‘ কথায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। ঘুম যে ঠিক কী, কেন পায়  কেন পায় না , কখন পায় এ নিয়ে পৃথিবীজুড়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ বলেন ঘুম হল চেতন এবং অচেতন স্তরের মধ্যবতী অবস্থা যখন মানসিক ক্রিয়া কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ থাকে, কিন্ত শারীরিক ক্রিয়া চলতে থাকে ঠিকঠাকমত।

প্রকৃতপক্ষে ঘুম হল মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত এক প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চলে রয়েছে স্লিপ সুইচ। এই সুইচ নিয়ন্ত্রন করে আমাদের ঘুম। এটা আসলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের পেছনে বিশেষ আরেকটি অঞ্চলে পৌছলে আমরা জেগে ওঠে। 

আমরা যখন ঘুমাই তখন কিন্ত আমাদের পুরো মস্তিষ্ক ঘুমায় না। কিছু অংশ ঘুমায় আর কিছু অংশ জেগে থাকে।যখন দেহে ঘুম নেমে আসে তখন কি হয় ?
  • ঘুম গভীর হলে কমে যায় হার্ট বিট, পালস রেট, ব্লাডপ্রেসার এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি।
  • ফুসফুসের কাজকর্ম এক-চতুর্থাংশ কমে যায়।
  • শিথিল পেশিগুলোর রক্তনালী প্রসারিত হওয়ার ফলে বেশি পরিমাণ রক্ত সেগুলোতে জমে থাকে। তাই ঘুম  থেকে ওঠার পর অনেকের চোখে-মুখে লালচে এবং ফোলা ফোলা লাগে।
  • দেহের বিপাক ক্রিয়ার হার ঘুমের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ কমে যায়। যে জন্য ঘুমের আগে পেট পুরে খেতে নেই, খেলে হজম হয় না।
  • স্পর্শ, গন্ধ, দৃষ্টি, অনুভুতি ঘুমোলে পুরোটাই প্রায় চলে যায় । শ্রবণ অনুভুতি বরং সক্রিয় থাকে।
  • মুখের পেশি শ্লথ হয়ে যাওয়ার ফলে ঘুমোলে অনেকের মুখ দিয়ে লালা গড়ায়।
  • কিডনির কাজও কমে আসে এ সময়। যেটুকু ইউরিন তৈরি হয় তা ব্লাডারে গিয়ে জমতে থাকে ধীরে ধীর। তাই ঘুম ভাঙলেই মুত্রের বেগ হয়।

ঘুমের সঠিক সময় :

চিকিৎসাশাস্ত্রে এমন কোন নিয়ম-কানুন নেই যে , এত ঘন্টা বাধ্যতামূলক ভাবে ঘুমোতেই হবে। ঘুমের বেলায় কত ঘন্টা ঘুমোচ্ছি সেটা বড় কথা নয়, ঘুমটা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা সেটােই বড় কথা। অর্থা কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি স্লিপ-টাই বিবেচ্য। 

এটা একেক জনের এক এক রকম ঘুম হতে পারে। সাধারনত দেখা যায়, শিশুরা বয়স্কদের থেকে  বেশিক্ষন ঘুমায়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের পরিমাণ কমতে থাকে। শিশুর মস্তিষ্ক মেলাটনিন হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণই এজন্য দায়ী। বয়স হলে মেলাটানিন নি:সরণ কমে যায়। 

ফলে ঘুমের সময়ও কমে যায়। সাধারণত একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ লোকের প্রতিদিন ৬ ঘন্টা ঘুমোলেই যথেষ্ট। আবার ৪-৫ ঘন্টা ঘুমিয়েও অনেকে সুস্থ আছেন। আসল কথা হলো, ঠিক যে পরিমাণ ঘুমোলে আপনি সারাদিন চলমনে থাকতে পারেন, সেটাই আপনার ঘুমের পরিমাণ।

অনিদ্রার কারন :

শুনে আশ্চর্য হবেন, আমাদের দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১/৩ অংশ ঘুম বিভ্রামাটের শিকার। ঘুম বিভ্রাটের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতার কথা। অনিদ্রা মানেই না ঘুমিয়ে থাকা। আসলে ঘুম ঠিক মতো না হলে বা কম হলে তাকেই আমরা বলি অনিদ্রা রোগ। ঘুম কম হওয়া যেমন একটা অসুখ, তেমনি বেশি ঘুমালেও কিন্ত অসুখ। 

যাকে বলে নার্কোলেপসি। অনিদ্রা বা ঘুম না হওয়ার অসংখ্যা কারন আছে। কিন্ত কারন অল্প স্থায়ী, কিছু আবার দীর্ঘকালীন। নানা ধরনের জটিল অসুখ ও মানসিক রোগে ক্রনিক ইনসমনিয়া বা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা হতে পারে।

শারীরিক কারন :

বাত, হাপানি, উচ্চ রক্তচাপ,থাইরয়েডের অসুখ, ডায়াবেটিস, প্রোস্টেটের সমস্যা,যক্মা, ধাতুর গোলযোগ, গর্ভাবস্থা, রেনাল ফেইলিওর, হার্ট ফেইলিওর, পেপটিক আলসার, ক্যান্সারের বাড়াবাড়ি পর্যায়,  মেনোপজ বা ঋতুবন্ধের পর, পেটের অসুখ এমন কি সামান্য জ্বর জ্বর ভাব থেকেই অনেকের ঘুম আসতে চায় না।

মানসিক কারন :

এই জটিল জীবনযাত্রায় অধিকাংশ নিদ্রাহীনতার কারনই হল মানসিক। ডিপ্রেশন, মেনিয়া, সিজোফ্রেনিয়া, অ্যাংজাইটি, নিউরোসিস, পরীক্ষা বা চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার আগের টেনশন , অপারেশনের ভয়, প্রিয়োজনের মৃত্যু সংবাদ অনেকেরই চোখের ঘুম কেডে নেয়।

ঔষদ থেকে :

উচ্চ রক্তচাপের ঔষদ ,স্টেরয়েড গ্রুপের ঔষদ, ,মানসিক অবসাদের ঔষদ, থাইরয়েড হরমোন, মিথাইলডোপা, বিশেষ ধরনের কিছু এন্টিবায়োটিক, ক্যান্সারের কোমোথেরাপিসহ নানা ধরনের ঔষদ থেকে ঘুমের বিভ্রাট হতে পারে।

অন্যান্য :

শোবার স্থানের পরিবর্তন, মদ্যপান, চা-কপি পান সহ নানা নেশা, রাত জেগে আড্ডা, অত্যাদিক আলো, তীব্র শব্দ, মশার কামড়, বিছানায় পোকামাকড়, নাসিকা গর্জন, শিফটিং ডিউটি, পাহাড়ে ভ্রমণ, অতিরিক্ত পরিশ্রম, একেক রাতে একক সময় ঘুমাতে যাওয়া,রাত জেগে লেখাপড়া করা এবং রাত জেগে ইন্টারনেটে সময় দেওয়া সহ নানা কারনে ঘুম বিভ্রাট হতে পারে।

অনিদ্রা থেকে অসুখ :

অনিদ্রার দরুন আপনার শরীরে নানা রোগ বাসা বাধতে পারে। মাথাভার, ঝিমুনি, কাজকর্মে উৎসাহের অভাব, মন:সংযোগে অসুবিধা, খিটখিটে মেজাজ, অসংলগ্ন কথাবার্তার মত মামুলি সমস্যা ছাড়াও নিদ্রাহীনতার ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর কিছু রোগ। 

যেমন; হাইপারটেনশন, ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ, সেরিব্রাল অ্যাটাক, শ্বাসকষ্ট,  মানসিক অবসাদ ইত্যাদি। কাজেই এইসব ‍বিপত্তি এড়াতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমোতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ঘুম :

বহুসংখ্যাক গর্ভবতী মহিলা অনিদ্রায় কষ্ট পান। এ অনিদ্রা বহু কারনে হতে পারে। যেমন: ভবিষ্যৎ মার্তৃত্বের দায় দায়িত্ব সমন্ধে কোন ধ্যান ধারনা না থাকার জন্য, গর্ভাবস্থায় সাময়িক শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য, রক্তের উচ্চ রক্তচাপের কারনে, গর্ভধারনের আগে থাকতেই যদি খারাপভাবে নিদ্রা যাওয়ার অভ্যাস থাকে ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় ৭-৮ ঘন্টা নিদ্রা গর্ভবতী মহিলার পক্ষে অত্যন্ত জরুরি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url