মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন।

 মায়ের বুকের দুধ

মায়ের দুধ“ এই দুটি শব্দের মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে সন্তানের সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে ওঠার বীজমন্ত্র। শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলিতে নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ শুধু খাদ্য পানীয় নয়, প্রথম অবলম্বন, নিরাপত্তার প্রথম নিশ্চয়তা, বিশ্ব সংসারের সাথে প্রথম যোগসুত্র।

শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি

শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশুর মৌলিক অধিকার যা স্বয়ং আল্লাহ পাক কর্তৃক প্রদত্ত। এই প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনামা ও আছে পবিত্র কোরআন শরীফে “ আর মায়েরা তাদের সন্তানের পুর্ণ দুই বসর দুধ পান করাবে। (সুরা বাকারা: ২২৩) এই আয়াত দ্বারা মানবসৃষ্টা মহান আল্লাহ পাক দুধ খাওয়ানোর সময়সীমাও নির্ধারণ করে  দিয়েছেন।  সুতরাং, এ থেকে স্পষ্ট যে, শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি অপরিসীম।

পোস্ট সূচিপত্র

শাল দুধের উপকারিতা :

শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়া মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার পর প্রোল্যাক্টিন ও অক্সিটোসিন হরমোনের প্রভাবে শিশুদের প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে মায়ের স্তনে দুধ তৈরি হয়। সন্তানকে দুধ খাওয়াবো‘-এই ইচ্ছায় স্তনে দুধ সঞ্চার করে। শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধ মস্তিষ্কের পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাক্টিন নামক হরমোন দুধ তৈরীতে সাহায্য করে। 

শিশু যখনই মায়ের দুধ খায়,তখনই স্তনের বোটায় স্নায়ুগুলো উদ্দীপিত হয়। এই উদ্দিপনা হরমোনকে দুধ সরবরাহে সাহায্য করে। শিশু যখন মায়ের বুকের দুধ টানে তখন প্রোল্যাক্টিন পরবর্তী  সময়ের জন্যে স্তনে দুধ তৈরী করে রাখে। শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ পিটুটারী গ্রন্থি দিনের চেয়ে রাতে বেশি প্রোল্যাক্টিন তৈরি করে। 

তাই রাতের বেলায় শিশুকে দুধ খাওয়ালে স্তনে দুধ সরবরাহ অব্যাহত থাকে। শিশুর জন্য় মায়ের বুকের প্রথম দুধকে কলোষ্ট্রাম বা শালদুধ বলে। এই শালদুধে ইমিউনোগ্লোবিউলিন আই জি এ থাকে যা গ্যাস্ট্রোইন্টেসটাইনাল ট্রাক্টকে সুরক্ষা দেয়। এটি নবজাতকের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কার্যক্রম হওয়া পর্যন্ত তাকে রক্ষা করে। 

মিকোনিয়াম (নবজাতকের প্রথম পায়খানা) বের করতে সাহায্য করে এবং রক্তে বিলিরুবিন (জন্ডিস তৈরি হওয়ার উপাদান) তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করে যা শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের  অন্যতম গুনাবলি।

দুধে বিভিন্ন উপাদানের সংযুক্তি :

শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি আলোচনা করতে গেলে প্রথমে আমাদের জেনে নিতে হবে যে,শিশুর চাহিদার উপর ভিত্তি  করে মায়ের দুধের উপাদানের পরিমান প্রতিদিন কিছু না কিছু পরিবর্তিত হয়। অর্থ্যা পানি ও চর্বির অনুপাত পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন নির্ভর করে মায়ের খাদ্য গ্রহন এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর। মায়ের স্তন থেকে দুই ধাপে দুই ধরনের দুধ নি:সৃত হয়। প্রথম ধাপে নি:সৃত দুধকে Foremilk বলে, এই Foremilk এ পানি ও শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে এবং চর্বি কম থাকে। 

দ্বিতীয় ধাপে নি:সৃত দুধ কে Hind milk  বলে। এই দুধে ক্রিমের পরিমাণ বেশি থাকে এবং শর্করা ও পানি কম থাকে। মায়ের স্তন কখনোই সম্পুর্নরুপে খালি হয়না। কারন দুধ উপাদন প্রক্রিয়া একটি অবিরাম জৈবিক প্রক্রিয়া। 

মায়ের দুধের শতকরা সংযুক্তি

আমিষ

০.৮-০.৯ %

চর্বি

৩.০-৫.০ %

শর্করা

৬.৯-৭.২ %

খনিজ পদার্থ

০.২ %


মায়ের দুধে শর্করা হিসেবে সাধারনত ল্যাক্টোজ থাকে এবং আমিষ হিসেবে প্রধানত ক্যাসিন (বোভাইন বিটা-ক্যাসিন,আলফা-ল্যাক্টলবুমিন, ল্যাক্টোফেরিন,আই জি এ, লাইসোজাইম এবং সেরাম অ্যালবুমিন) থাকে। 

এখন এটা প্রমাণিত যে, বাজারে প্রচলিত কোন দুধেই মায়ের দুধের সমতুল্য নয়। কারন মায়ের দুধে সঠিক পরিমাণে শর্করা, আমিষ, ও চর্বি ছাড়াও ভিটামিন, খনিজ,  হজমকারক এনজাইম এবং হরমোন থাকে যা একটি বাড়ন্ত শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

মায়ের দুধের সাথে গরুর দুধের তুলনা :

গরুর দুধ শিশুর জন্য সম্পূরক খাদ্য হতে পারে, তবে তা কোন অবস্থাতেই ১ বছরের নিচের শিশুদের জন্য না তবে ২ বছরের নিচে হলে সবচেয়ে ভালো হয় ২ বছরের নিচে শিশুদের না খাওয়ানো। গরুর দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই , লৌহ এবং অত্যাবশ্যাকীয় ফ্যাটি এসিড নেই, ফলে যে সমস্ত শিশু গরুর দুধ খায় তারা রক্তস্বল্পতার শিকার হয়।

গরুর দুধে মায়ের দুধের তুলনায় বেশি পরিমান আমিষ, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে যা শিশুর অপরিপক্ক কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া গরুর দুধের উচ্চ আমিষ এবং চর্বি শিশুর পক্ষে হজম করাও কষ্টকর। 

মায়ের দুধের সাথে  ছাগলের দুধের তুলনা :

ছাগলের দুধে এগ্লূটিনিন নেই। ফলে চর্বির গ্লোবিউলসগুলো গরুর দুধের মত গুচ্ছাকারে থাকে না। এজন্য শিশুর পক্ষে গরুর দুধের তুলনায় ছাগলের দুধ হজম করা সহজ। ছাগলের দুধে গরুর দুধের মত এলার্জেনও থাকে না। যাহোক, ছাগলের দুধও শিশুর জন্য উপযুক্ত না।

 কারন ছাগলের দুধে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলেক্ট্রালাইটস থাকে না, ফলে শিশু পেটের সমস্যা এবং রক্তস্বল্পতায় ভোগে। পরিশেষে, উপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই একথা প্রতীয়মান করতে পারি যে,  শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি ব্যাপক এবং শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের  বিকল্প বা সমকল্প বলতে কিছুই নেই। 

শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি প্রতিটি শিশুর স্বাভাবিক জীবন ধারনে গুরুত্বপুর্ণ। তাই আমাদের উচিত শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি সম্পর্কে জেনে মেনে চলবো এবং অন্যদের কে শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি সম্পর্কে জানাতে ভুল করবো না। 

সর্বশেষ, প্রতিটি শিশুর উত্তোরোত্তর সাফল্য কামনা করে শিশুর জন্য় মায়ের বুকের দুধের গুনাবলি সম্পর্কিত আলোচনা এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী তে মায়ের দুধের উপকারিতা  সম্পর্কিত ব্যাপক আলোচনা নিয়ে আসবো , ইনশাল্লাহ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url