জন্ডিসে'র লক্ষন-জন্ডিসে কারন-জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা

জন্ডিস আমাদের দেশের খুব সাধারন এক স্বাস্থ্য সমস্যা। জন্ডিস কোন রোগ নয়, এটা বিভিন্ন রোগের লক্ষনও হতে পারে। জন্ডিস রোগীর চামড়া, জিহবা, চোখের স্ক্লেরা ও মিউকাস মেমব্রেন হলুদাভ হয়। রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা ৩ মি.গ্রাম বা তার বেশি হলেই দেহে হলুদের ছাপ পড়তে শুরু করে।

জন্ডিসে'র লক্ষন-জন্ডিসে কারন-জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা


রক্তের লোহিত কনিকা ভেঙ্গে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে বিলিরুবিন বের হয়। যকৃতের নিচেই পিত্তথলী অবস্থান করে। পিত্তথলী হতে পিত্তনালী দিযে পিত্তরস পাকস্থলীর ডিওডেনামের ভিতর দিয়ে এসে খাদ্যবস্তুর সাথে মিশ্রিত হয়। 

যদি কোন কারনে পিত্ত বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলে পিত্তরস পিত্তথলিতে জমতে থাকে এবং এক সময় শরীরে প্রবাহমান রক্তের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। এ অবস্থায় হাত-পা, মুখমন্ডল, জিহ্বা, চক্ষু, এমনকি নখ পর্যন্ত হলূদ বর্ণ ধারন করে - এটাই জন্ডিস।

পোস্ট সূচিপত্র

    জন্ডিসের প্রকারভেদ

    জন্ডিসের মুলত তিন প্রকার যথা- হিমোলাইটিক জন্ডিস, হেপাটোসেলুলার জন্ডিস এবং অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস।

    হিমোলাইটিক জন্ডিস:
    লোহিতরক্তকনিকা ধ্বংস হওয়ার ফলে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পেলে এ জন্ডিস হয়ে থাকে।

    হেপাটোসেলুলার জন্ডিস:
    যকৃত কোষ ধ্বংস হওয়ার কারনে যকৃত পিত্তরসে বিলিরুবিন সরবরাহ করতে পারে না ফলে হেপাটোসেলুলার জন্ডিস হয়ে থাকে।

    অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস:
    পিত্তরসের প্রবাহ ঠিকমতো হতে না পারলে এই জন্ডিস হয়ে থাকে।

    জন্ডিসের কারন

    • কোন কারনে RBC বেশি পরিমাণে ভেঙ্গে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ।
    • দীর্ঘদিন পাকস্থলি সংক্রান্ত বা যকৃত সংক্রান্ত জটিল রোগে ভোগা।
    • যকৃত লোহিত রক্তকনিকা হতে পিত্ত তৈরিতে ক্রটি হলে।
    • পিত্ত পাথুরী রোগ, যকৃত বা পিত্তনালীর ওপরে কোন টিউমার হলে।
    • পিত্তনালী সরু হওয়া।
    • পিত্তথলিতে জীবাণু ঢুকে ফোড়া বা পুজ সৃষ্টি হলে ।
    • কোন কারনে পিত্তরস বেশি পরিমাণে নি:সৃত হলে।
    • পিত্তের স্বাভাবিক পরিবর্তনের ক্রটি হলে।
    • বেশি মাত্রায় চা, পান, ধুমপান, মদ বা অ্যালকোহল সেবন বা এসিড জাতীয় নেশাকর ঔষুদের প্রতিক্রিয়া হলে।
    • বিভিন্ন ভাইরাস, যেমন: হেপাটাইটিস এ,বি,সি,ডি,ই ও জি ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হলে।

    জন্ডিসের লক্ষন

    • অরুচি।
    • মলে পিত্ত থাকে না, ফলে মল ফ্যাকাশে হয়।
    • বমি, পাতলা পায়খানা।
    • মাথা ব্যথা।
    • মূত্র সরিষার তেলের মত লাল কখনো হলুদ বর্ণের হয়।
    • মুখ, চোখ, নখ, থুথু হলুদ হয়।
    • রোগীর নাড়ি ধীরে চলে, রক্তচাপ কমে যায়।
    • দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে খিচুনি,অজ্ঞান, প্রলাপবকা এবং সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে।
    • ডান পাশের পেটে চাপ দিলে যকৃত শক্ত ও কঠিন বোঝা যায় এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
    • কখনও কখনও শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে রক্ত বের হয়।
    • সারা শরিরে এলার্জীর মতো কালো দাগ দেখা দেয়।
    • দীর্ঘদিন ভুগলে রোগী নীলাভ হয়ে যায় এবং বমি বমি হয়।
    • ঘোলা প্রস্রাব হতে পারে।

    জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা

    পেপে
    ২১ দিন কাচা পেপে ও পাকা পেপে বেশি বেশি খেতে হবে।
    বেল: 
    কাচা বেলের শরবত খেতে হবে।
    ইসবগুল: 
    ইসবগুলের ভূসির শরবত পান করতে হবে।
    আখের রস:
     আখের রস খেতে হবে ( অবশ্যই তা বাড়িতে তৈরি করে)
    আমলকি,হরিতকি:
    আমলকি ও হরিতকী ভেজানো পানি ১ কাপ করে দিনে ২/৩ বার ২১ দিন খেতে হবে।
    ভাত: 
    নরম ভাত এবং জাউ খেতে হবে।
    লেবু:
    লেবুর রস ১২-২৪ মি.লি চিনি বা মধুসহ ২ বার খাবার পর সেব্য।
    তেলাকুচা:
    তেলাকুচার মূলের রস ২-৩ চামচ সকালে খেলে জন্ডিস নিরাময় হয়।

    জন্ডিসে ঝাড়ু-ফুক দেওয়া ঠিক নয়

    হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ থেকে জন্ডিস দেখা দেয়। এই জন্ডিসের মুল কারন হচ্ছে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রার আধিক্য। কোন কারনে বিলিরুবিনের মাত্রার আধিক্য শরীরে দেখা দিলেই জন্ডিসের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। এসব উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবের হলুদ বর্ণ, চোখের সাদা অংশের হলুদাভ ভাব ইত্যাদি ।

    লিভাবের অসুস্থতার কারনে জন্ডিস হয়ে থাকলে তার মুল চিকিৎসা বিশ্রাম। বিশ্রাম ও স্বাভাবিক খাবার বরাবরেই রোগীকে সুস্থ করে তুলবে। কিন্ত কুসংস্ককারের বশবর্তী হয়ে অনেকে এ কাজটি করেন না। কারো কারো ধারনা ঝাড়ু-ফুকের মাধ্যমে জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। দেখা যায় ঝাড়ু-ফুকের সাহায্যে ১০/১৫ দিন পর জন্ডিস কমে আসছে আসল ব্যাপারটা হচ্ছে সেখানেই ।

     জন্ডিস কমে আসার জন্য সময় প্রয়োজন। বিশ্রাম নিলে জন্ডিস ১০/১৫ দিন পর জন্ডিস কমে আসে স্বাভাবিক ভাবেই। এ জন্য কোন চিকিৎসার দরকার নেই। সাধারন ভাবেই যে জন্ডিস কে আমরা জানি তা হচ্ছে ভইরাসজনিত জন্ডিস।

    জন্ডিস বিষয়ক পরামর্শ

    • জন্ডিস হলে সম্পুর্ন বিশ্রামে থাকতে হবে।
    • প্রচুর পানীয় ও তরল খাবার খেতে হবে। কিন্ত রাস্তাঘাট থেকে বিভিন্ন ধরনের শরবত ও  আখের রস  খাওয়া যাবে না।
    • কারন সেখা্নকার পানি বিশুদ্ধ নয়।
    • নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
    • আহার্য ও পানীয়দের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে মলমুত্র স্পর্শ না ঘটে।
    • হেপাটাইটিস রোগীর সেবাকালে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খাদ্যবস্তু ধরতে হবে।
    • শৌচের পর সাবান দিয়ে হাত অবশ্যই ধুতে হবে।
    • স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন বি-ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অপরজনকে অবশ্যই বি- ভ্যাকসিন নিতে হবে।
    • টিকা না নেয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করতে হবে।
    • যাদের হাতে একজিমা আছে কিংবা ত্বকে অন্য রোগ বা কাটা-ছেড়া আছে তাদের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি রোগীর সেবা না করাই ভাল। করলে গ্লাভস পরিধান করতে হবে।
    • রোগীর ব্যবহৃত ক্ষুর, রেজার, ব্লেড, নেলকাটার ও ব্রাশ ইত্যাদি অন্যেরা ব্যবহার করতে পারবে না।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url