কিডনি রোগের লক্ষণ-কিডনি ভালো রাখার উপায়

মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিডনি। মানব দেহের কোমরের কিছুটা উপরে মেরুদন্ডের দু;পাশে দু‘টি কিডনি থাকে। পরিণত বয়সে একটি কিডনি ১১-১৩ সে: মি: লম্বা, ৫-৬ সে: মি: প্রস্থ এবং ৩ সে: মি: পুরু হয়। 

কিডনি রোগের লক্ষণ-কিডনি ভালো রাখার উপায়

একটি কিডনির ওজন ১৫০ গ্রাম। বাম কিডনি ডান কিডনি অপেক্ষা সামান্য বড় ও কিছুটা উপরে থাকে। দু‘টি কিডনিতে প্রায় ২৬ লক্ষ ছাকনি আছে। 

পোস্ট সূচিপত্র

কিডনি‘র কাজ :

আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত জটিল জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া চলছে। এতে দেহের ভিতর অনেক দূষিত পদার্থ তৈরী হয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। কিডনি তার ছাকনির মাধ্যমে রক্তকে পরিশোধিত করে অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থসমূহ মূত্রের সাথে দেহের বাইরে বের করে দেয়। এছাড়া কিডনি আমাদের দেহের নিম্ম লিখিত কাজ সমূহ করে। যেমন

  • অম্ল-ক্ষার ও লবণ-পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন।
  • অস্থি (হাড়) গঠন ও রক্তের উপাদান তৈরি।
  • সেবনকৃত ঔষধ শরীরে ব্যবহারের পর মুত্রের সাথে দেহের বাইর বের করা।

কিডনি রোগরে প্রকারভেদ :

কিডনি রোগসমুহ কে সাধারনত দুভাগে ভাগ করা যায়।

যেমন

১। মেডিক্যাল সংক্রান্ত কিডনি রোগ।

২। সার্জিক্যাল সংক্রান্ত কিডনি রোগ।

মেডিক্যাল সংক্রান্ত রোগ:

মেডিক্যাল সংক্রান্ত রোগসমূহ সাধারনত বিভিন্ন রকম ঔষধের সাহায্যে চিকিৎসা

 করা হয় যেমন

  • কিডনির ছাকনি প্রদাহ বা নেফ্রইটিস
  • কিডনি ও মুত্রনালীর ইনফেকশন।
  • উচ্চ রক্তচাপ জনিত কিডনি রোগ।
  • ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগ।
  • আকস্মিক কিডনি বিকল
  • ধীরগতিতে কিডনি বিকল।
  • ঔষুদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কিডনি রোগ।

সার্জিক্যল সংক্রান্ত রোগ :

সার্জিক্যাল সংক্রান্ত রোগ অপারেশনের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে বর্তমানে কথিত সার্জিক্যাল সংক্রান্ত কিডনি রোগসমূহ অনেকাংশে বিভিন্ন ঔষুদের মাধ্যমে চিকিৎসা।

 ও অরোগ্য করা সম্ভব। যেমন-

  • পাথর জনিত কিডনি রোগ।
  • জন্মগত কিডনি রোগ।
  • প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের জটিলতা জনিত কিডনি রোগ
  • আঘাত জনিত কিডনি রোগ
  • কিডনি সিস্ট ও টিউমার
  • অন্যান্য রোগ।

কিডনি রোগ হওয়ার প্রধান কারনসমূহ :

অনেক কিডনি রোগরে কারন আজও জানা যায়নি। তবে  যে সকল কারন সাধারনত পরিলক্ষিত হয় তা নিম্মে দেয়া হলো। 

  • শরীরে খো্স-পাচড়া হওয়া 
  • অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
  • বাতজনিত রোগ
  • ব্যথা বা বাতের ঔষধ, কিছু কিছু এন্টিবায়োটিক নিয়মিত দীর্য়দিন ব্যবহার করা।
  • জন্মগত কিডনি রোগ
  • কিডনি পাথর বা প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডর বৃদ্ধির কারনে প্রস্রাবের রাস্তায় দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা।
  • বাসি, পচা খাবার  ইত্যাদি।

কিডনি রোগের লক্ষন :

কিডনি রোগ যেহেতু অনেক প্রকার সেহেতু এর লক্ষন সমুহও ভিন্ন ভিন্ন। কখনও কখনও রোগী কোন উপসর্গ বুঝে ওঠার পুর্বেই তার কিডনি শতকরা ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিডনি রোগের প্রধান লক্ষনসমূহ হচ্ছে-

  •  হঠাত করে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
  •  প্রস্রাবের সাথে রক্ত বা প্রোটিন বের হওয়া।
  • তলপেটে বা কোমরে ব্যাথা হওয়া ও কাপুনি দিয়ে জ্বর আসা।
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া ও গন্ধে অস্বাভাবিকতা 
  • রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়া ও শরীর অত্যন্ত দুর্বল হওয়া
  • ক্ষুধা থাকা সত্তেও খেতে না পারা
  • মাথা ব্যাথা ্ও শরীর চুলকানো
  • রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া 
  • হাত, পা, মুখ কিংবা সমস্ত শরীর ফূলে যাওয়া

কিডনি বিকল হওয়া’র কারন

উপরে বর্ণিত কারনসমূহের  চিকিৎসা সময়মত না করালে কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। যখন কোন রোগীর কিডনি বিকল হয়  তখন দুটো কিডনির কার্যক্ষমতা হারানোকেই বোঝায়। কিডনি বিকল সাধারনত দু‘ধরনের হতে পারে।

ক) আকস্মিক কিডনি বিকল

খ) ধীরগতিতে কিডনি বিকল

 আকস্মিক কিডনি বিকলের কারন ;

  • পায়খানা ও বমির কারনে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে গেলে।
  • কোন কারনে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
  • কিডনির ছাকনিতে মারাত্বক ধরনের সমস্যা হলে
  • যেকোনো কারনে দু;দিকের মুত্রনালী বন্ধ হয়ে গেলে
  • কোন কোন ঔষদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে
  • ইনফেকশন বা রোগজীবানূ সংক্রমণের ফলে
  • গর্ভকালীন জটিলতা যেমন-রক্তক্ষরণ ও একলাম্পশিয়া

ধীরগতিতে কিডনি বিকলের কারন :

  • ছাকনি প্রদাহ বা নেফ্রােইটিস
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
  • কিডনিতে পাথর
  • সিস্টজনিত কিডনি রোগ
  • প্রস্রাবের রাস্তায় দীর্ঘস্থায়ী বাধা সৃষ্টি
  • অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ
  • অন্যান্য কারন

কিডনি ভালো রাখার উপায়  :

উপরের বলা হয়েছে অতিরিক্ত মাংস বা হাইপ্রোটিন ডায়েট কিডনির পক্ষে ক্ষতিকর। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মাছ, মাংস, ডিম খেলে কিডনির নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই  ছোট বয়স থেকেই সুষম খাবার খাওয়া উচিত । আবার অতিরিক্ত অক্সালেট জাতীয় খাবার যেমন ওল কচু, পালংশাক ইত্যাদি খেলে মুত্রথিলিতে পাথর হতে পারে। 

এর ফলে পরবর্তীকালে কিডনির সমস্যা হওয়ার আশংকা থাকতে পারে। গরমের সময় ঘাম বেশি হয় বলে শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত  পরিমাণ পানি পান করা উচিত ।  এছাড়া যাদের কিডনিতে পাথর আছে  তাদেরও  সাধারনের তুলনায় বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির অসুখের সম্ভাবনা  বেশি বলে নিয়মিত চিকিসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন রাখা উচিত। 

এছাড়া কিডনি ভালো রাখতে হলে প্রস্রাবের কোনো গোলমাল দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়া যেখানে বাতাসের জলীয় বাষ্প কম, সেই অঞ্চলে কিডনির অসুখ  বেশি হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url