ঋতুস্রাব কি-ঋতুস্রাবে করণীয়-অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের চিকিৎসা

 


প্রথম মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ডের  অভিজ্ঞতা-

প্রথম ঋতুস্রাব নারী জীবনের এক চিরস্বরনীয় অভিজ্ঞতা। মাতৃত্বের এক সূচনা চিহ্নটি ভালো হলে অভিভাবকরা নিশ্চিত হোন, কিন্ত কোন জটিলতা দেখা দিলে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। জন্মের সময়ই স্ত্রীর  প্রজননতন্ত্রের গঠন সম্পুর্ন হয়।

 পরবর্তীতে কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষনে কিছু হরমোনের কার্যকারিতার ফলে প্রতিমাসে জরায়ু থেকে যে রক্তমিশ্রিত নি:সরণ হয় সেটিই মাসিক বা ঋতুস্রাব। মাসিক শুরুর গড় বয়স ১৩ বছর। তবে ১২ থেকে ১৬ বছরেও মাসিক শুরু না হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 অপরদিকে ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হলে বা ১০ বছরের আগে যৌবনের অন্যান্য চিহ্ন দেখা দিলে ডাক্তার দেখানো উচিত। স্বাভাবিক মাসিক ৩ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়। তবে ৮ দিনও স্থায়ী হতে পারে । মাসিক সম্পর্কে  অনেক কুসংস্কার আছে। যেমন- অনেকে এ সময় অশুচি বা নোংরা মনে করে। 

এ ধারনাটি সম্পুর্ণ ভুল। বরং এ সময় রক্তক্ষরনের ফলে প্রজননতন্ত্র কাচা থাকায় রোগজীবাণুর সংক্রমণ থাকায় ঝুকি থাকে বেশি। সুতরাং মাসিক চলাকালীন সময়ে অবশ্যই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। মাসিকের সময় তলপেট ব্যাথা হতে পারে , যা সাধারনত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রচন্ড ব্যাথা বেশিদিন স্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শুরুতে মাসিক ১-২ বছর অনিয়মিত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারন সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে। 

 

অনিয়মিত মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ড-

স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি সুস্থ বা প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার মাসিক ৪ বা ৫ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে। প্রতি ২৮ দিন পর এ মাসিক স্রাব দেখা দেয়। শরীর ও মনের নানাবিধ কারনে এই স্রাব নিয়মিত না হয়ে কখনও বেশ কযেকদিন দেরিতে আবর কখনও তারিখের আগেও হয়ে থাকে। সাধারনত দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি, দৈহিক গঠন, ক্ষমতা, রক্তশুন্যতা, মানসিক টেনশন এবং হরমোনের প্রভাবে এ রকম দেখা যায়। আবার কখনও কখনও বিভিন্ন যৌনরোগ যেমন-সিফিলিস, গনোরিয়া, ডিম্বো ও জরায়ুর নানাবিধ রোগে এটা কম-বেশি দেখা যায়। 

মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ড কখন শুরু হয়-

যখন কোনও মেয়ে ১০-১২ বছর বয়সে পৌঁছায়,  অর্থাৎ শৈশব থেকে কৈশোরে পৌঁছায় তখন কিছু শারীরিক পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন:

  • উচ্চতা বাড়ে
  • স্তন বড় হয়
  • বগল এবং যৌনাঙ্গে চুল গজায়
  • কোমর সরু
  • উরু এবং নিতম্ব ভারী হয়
  • জরায়ু এবং ডিম্বাশয়গুলি প্রসবের জন্য আরও বড় এবং আরও উপযুক্ত হয়ে ওঠে; এবং
  • মাসিক শুরু



 অনিয়মিত মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ডের লক্ষন সমুহ-

  • মাসিক হওয়ার তারিখের ৮ বা ১০ দিন বা তার বেশি  সময় পরে মাসিক শুরু হয়।
  • মাসিকের শুরুতে ২ বা ৪ ফোটা রক্ত আসে আবার ৩ বা ৪ দিন বন্ধ থেকে তারপর অল্প অল্প করে হতে থাকে।
  • কখনও লাল শাক ধোয়া পানির মতো দেখা যায়।
  • মাসিকের আগে বা পরে প্রচুর সাদা বর্ণের আঠালো স্রাব বের হয়।
  • মাসিক ১০ থেকে ১৫ দিন স্থায়ী হয় এবং আশটে গন্ধ থাকতে পারে।
  • মাথাব্যাথা, বমি বমি ভাব, এবং শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে।
  • কখনও ঘুমের অসুবিধা দেখা দেয়।
  • বেশ কিছুদিন অর্থ্যাৎ কয়েকটি মাসিক এভাবে চলার পর নিয়মিত হয়। পুনরায় আবার এভাবে চলে।
  • তলপেট ভারবোধ, ব্যাথা ও রক্তশুন্যতা থাকে।

অনিয়মিত মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ডে করণীয়-

  • পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত খেতে হবে।
  • হরলিক্স, ডাব ও  গ্লকোজ খেতে হবে।
  • পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্নয় করে ওষুধ খাওয়া উত্তম।
  • জটিল অবস্থার আগেই অভিজ্ঞ ডাক্তারের  কাছে  চিকিৎসা নেওয়া উত্তম।
  • ছোট-খাটো অনেক রোগ বড় রোগের জন্ম দেয়, তাই অবহেলা না করাই  উত্তম।


মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ডের সময় কী খাবেন-

  • শাকসব্জীযুক্ত খাবার: ডাল, সবুজ শাকসবজি, দই, আলু ইত্যাদি
  • আমিষযুক্ত খাবার: দুধ, ডিম, বাদাম, মাছ, মাংস, লিভার ইত্যাদি
  • আয়রন জাতীয় খাবার: ডিম, মটরশুটি, শাক, আলু, কলা, আপেল, গুড়, খেজুর, ব্ল্যাকবেরি ইত্যাদি
  • ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: বাদাম, সয়াবিন, সবুজ শাকসবজি।
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: দুগ্ধজাতীয় খাবার, দুধ, ডিম, বাদাম এবং সয়াবিন।
  • এ ছাড়া স্বল্প নুনযুক্ত খাবারও খাওয়া উচিত।
  • টাটকা ফলের রস (বিশেষত ডালিম)।
  • প্রচুর পানি পান করা।
  • এই সময়ে চা এবং কফি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
  •   


    অনিয়মিত মাসিক / ঋতুস্রাব / পিরিয়ড  নিরাময়ে ভেষজ চিকিৎসা-

    • প্রায়ই গর্ভস্রাব হলে ঢ়েড়সের পাতা বাটা, মধু এবং কিছুটা সাদা চন্দন বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে একটু দইয়ের সঙ্গে ২ বা ৩ দিন খেলে উপকার হয়।
    • মাসিক স্রাব কম হলে ২ €তেকে ৩ চামচ বকুল ফুলের রস ২ থেকে ৩ দিন খেলে উপকার হয়।
    • অর্জুনের ছাল অনিয়মিত ঋতুস্রাবজনিত সমস্যায়  উপকারী।
    • হরীতকি খেলে ঋতুস্রাবের ব্যাথায়  উপকার হয়।
    • অনিয়মিত ঋতুস্রাবে নিশিন্দা ফলের নির্যাস খুবই উপকারী।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url