জ্বরের উৎস ও চিকিৎসা
জ্বর ঃ
সাধারনভাবে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশী তাপমাত্রাকে জ্বর বলে। জ্বর শরীরের অপ্রত্যাশিত কোন কিছুর েঅবস্থানকে নির্দেশ করে। আরো সহজ ভাষায় বলা যায়, কোন রোগের প্রতি শরীরের সাড়া দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া হলো জ্বর। জ্বর আসলে কোন রোগ নয়। কতগুলো রোগ বা সংক্রমনের লক্ষন বা উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। জ্বর শরীরের ডিফেন্স সিস্টেম ( শত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতি) কে কার্যকর করার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশকারী জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জ্বর 1030 প্ত ফা: পর্যন্ত হলে তেমন কোন চিন্তার কিছু নেই কিন্ত বাচ্চাদের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বিপজ্জনক অবস্তা নির্দেশ করে।
সুস্থ দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্র ঃ
সাধারনত ব্যক্তি বিশেষে দিনের ভিবিন্ন সময় এবং আবহাওয়া ভেদে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বিভিন্ন হতে পারে। তবে মানবদেহের স্বাভাবিক হলা ৯৮.৬০ ফা.
শরীরের বিভিন্ন স্থানের স্বাভাবিক তাপমাত্রা
•পায়ুপথের তাপমাত্রা : ৩৭.৫-৩৮.৩0 সে. বা তার বেশি হলে
•মুখের তাপমাত্রা : ৩৭.৭0 সে. বা তার বেশি হলে
•বাহু বা কানের তাপমাত্রা : ৩৭.২0 সে. বা তার বেশি হলে তা জ্বর বলে গণ্য হয় ।
উল্লেখ্য যে, একজন সুস্থ মানুষের জন্য
- পায়ুপথে ৩৪.৪-৩৭.৮0 সে. ।
- পর্দায় ৩৫.৪-৩৭.৮0 সে. ।
- বগলে ৩৫.৫-৩৭.০0 সে.।
- মুখে ৩৩.২-৩৮.২0 সে।
জ্বরের কারন ঃ
আমাদের সবারই জ্বরে ভোগার কম-বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। জীবনে জ্বরে ভোগেন নি এমন কাউকে পাওয়া যাবে না।
জ্বর যেহেতু কোন রোগ নয়, সেহেতু জ্বরের পিছনে না দৌড়ে রোগের পিছনে দৌড়ানো উচিত। সাধারনত জীবাণু ধ্বংস বা সংক্রামন জনিত কারনে েজ্বর হয়।
জ্বরের লক্ষন ঃ
সাধারনত শরীর গরম, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথা গোরানো, মাথাব্যথা, শরীর ব্যাথা, ক্ষুধামন্দা, চোখ জ্বালা-পোড়া করা, বমি বা বমি বমি ভাব, সর্বপরি অসস্তি বোধ করা ইত্যাদি। সাধারনত জ্বর কখনো বাড়ে, কখনো কমে; তবে কোনো সময় সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না। জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও বমি হয় ।
জ্বর হলে করণীয় ঃ
জ্বর হলে অনেকের মধ্যে রোগীর পরিচর্যা সম্পর্কে ভুল ধারনা রয়েছে। জ্বর হলে অনেকে রোগীর শরীরে কাথা জড়িয়ে দেন। তাদের ধারনা এতে রোগীর শরীরে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়বে। জ্বর হলে অনেবে ঠান্ডা হাওয়া আসার ভয়ে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। প্রকৃত পক্ষে এগুলো কোনটি জ্বর কমানোর পদ্ধতি নয়। জ্বর হলে এমনিতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন যদি শরীরে আবার মোটা কাপড়, কম্বল জড়ানো হয় তবে শরীরের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়। ঠিক তেমনি জ্বর হলে শরীরে তেল মালিশ করাও ঠিক নয়। এতে করে শরীরের লোপকূপগুলো ময়লায় বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরে বাড়তি তাপ বের হয়ে যেতে পারে না। শরীরে কাপড়-চোপড় যতটুকু সম্ভব খুলে দিতে হবে। খুলে দিতে হবে ঘরের দরজা-জানালা। মোট কথা, উন্মুক্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে পাখা থাকলে তাও মধ্যগতিতে চালিযে দিতে হবে। তারপর একটি তোয়ালে বা গামছা, পরিষ্কার ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে নিংড়ে তা দিয়ে সারা শরীর আস্তে আস্তে মুছে দিতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকভার করলে তাপমাত্রা কমে আসবে। প্রয়োজনে মাথা ধুয়ে দিতে হবে। জ্বর অবস্থায় প্রচুর পানি পান করতে হবে। তবে ফ্রিজের পানি নয়, বিশুদ্ধ পানি।
সতর্কতা ঃ
ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, কালাজ্বর, ডেঙ্গু জ্বর ইত্যাদি এমন জ্বর হলে দ্রুত রোগীকে কোন ডাক্তারের কাছে বা ক্লিনিকে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর প্রস্রাব ঠিক মত হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও সতর্ক থাকত হবে।
জ্বরের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ঃ
মাঝে মাঝে জ্বরের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হয়ে দাড়ায়। জ্বর যত সামান্য হোক জ্বরকে কখনো অবহেলা করা ঠিক নয়। অনেক সময় জ্বর বেড়ে গেলে বিশেষ করে শিশুদের খিচুনি রোগ হতে পারে। সামান্য আঘাতজনিত কারেনে জ্বর থেকে স্ট্রোকের মত ঝুকিপূর্ণ সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। কারন যাই হোক, জ্বরের মাত্রা যদি ১০৪ ডিগ্রি ফা. এর বেশি হয় তবে মস্তিষ্কের কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র এমন কি টিস্যু পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জ্বরের প্রধান ঝুকি হলো পানিস্বল্পতা , তাই জ্বর হলে রোগীকে বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ঃ
- ভাইরাস জনিত জ্বর হলে এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়।
- ৩ বা ৪ দিনের মধ্যে জ্বর ভালো না হলে রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- এ সময় খাবার-দাবার বন্ধ করা চলবে না।
- বদ্ধ ঘরে থাকা যাবে না।
- ভাইরাস জ্বর ছোয়াছে বলে অন্যদের থেকে পৃথক থাকার চেষ্টা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url